ধর্ষণের পর তরুণীকে হত্যার প্রধান আসামি সাজ্জাদ বন্দুকযুদ্ধে নিহত

কক্সবাজারের চকরিয়ায় চলন্তগাড়িতে তরুণীকে উপর্যুপরি ধর্ষণ শেষে চলন্ত অটো থেকে ফেলে খুনের ঘটনার প্রধান আসামি সিএনজি অটোচালক সাজ্জাদ হোসেন (৪০) পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে দেশে তৈরি দুটি এলজি, কয়েক রাউন্ড তাজা গুলি এবং ব্যবহৃত গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়।

মঙ্গলবার (১২ মে) ভোর রাত ৩টার দিকে এবিসি আঞ্চলিক মহাসড়কের চকরিয়ার কোনাখালী মরংঘোনা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় অস্ত্রধারীদের ছোড়া গুলিতে বিদ্ধ হয়ে আহত হন পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শেখ আবুল ফারুক, দুই কনস্টেবল সুবল ও সুমনসহ তিন পুলিশ সদস্য। তাদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

এর আগে সোমবার সকালে স্থানীয় জনতা চম্পা ধর্ষণ মামলার সন্দেহভাজন প্রধান আসামি সাজ্জাদ হোসেনকে নিজ এলাকা পেকুয়া সদর ইউনিয়নের শেখের কিল্লা ঘোনা থেকে আটক করে পেকুয়া থানা পুলিশে সোপর্দ করে। সে ওই এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে। পরে তাকে চকরিয়া থানার পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।

পুলিশ জানায়, অস্ত্র উদ্ধার অভিযানের সময় বন্দুকযুদ্ধে নিহত ধর্ষক সাজ্জাদের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বেও নারী নির্যাতন, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, চুরি, ইয়াবা কারবারসহ বিভিন্ন অপরাধের দায়ে মামলা রয়েছে পেকুয়া থানায়। নিহত সাজ্জাদ পেকুয়া উপজেলা সদরের শেখেরকিল্লা ঘোনা এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে।

চকরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এ কে এম সফিকুল আলম চৌধুরী জানান, বিবাহিত তরুণী চম্পা বেগম গত ৬ মে চট্টগ্রাম থেকে এবিসি আঞ্চলিক মহাসড়ক হয়ে কক্সবাজার আসার সময় পেকুয়ায় এসে গাড়ি বদল করে। পেকুয়া থেকে চকরিয়ার দিকে আসার সময় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠলে তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে চকরিয়ার কোনাখালীর মরংঘোনার নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে দুই সিএনজি চালক।

এর পর চলন্ত অটো থেকে অপর গাড়ির সামনে ছুঁড়ে ফেলে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় তরুণী চম্পাকে। ঘটনার পর দিন র‍্যাব গ্রেপ্তার করে প্রধান সন্দেহভাজন আসামি ধর্ষক সাজ্জাদের সহযোগী অটোচালক জয়নাল আবেদীনকে। সে পেকুয়া সদর ইউনিয়নের মেহেরনামা নন্দীরপাড়ার মোহাম্মদ আলীর ছেলে। জয়নালের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে স্থানীয় জনতার সহায়তায় গ্রেপ্তার করা হয় সাজ্জাদকে।

পুলিশ পরিদর্শক সফিকুল আলম আরো জানান, গ্রেপ্তারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাজ্জাদ স্বীকার করে তরুণী চম্পাকে ধর্ষণের সময় আগ্নেয়াস্ত্র মাথায় উঁচিয়ে জিম্মি করে উপর্যুপরি ধর্ষণ করার কথা। সেই অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে গেলে ধর্ষক সাজ্জাদের সহযোগী পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। প্রায় ২০ মিনিট ধরে উভয়পক্ষে গুলি বিনিময়ের একপর্যায়ে পিছু হটে সাজ্জাদের অস্ত্রধারী সহযোগীরা।

পরে ঘটনাস্থল থেকে ধর্ষক সাজ্জাদের গুলিবিদ্ধ মরদেহ, দেশে তৈরি দুটি এলজি, বেশ কয়েক রাউন্ড তাজা গুলি ও ব্যবহৃত গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়। পরে গুলিবিদ্ধ সাজ্জাদকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত তিন পুলিশ সদস্যকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

বন্দুকযুদ্ধের সত্যতা নিশ্চিত করে চকরিয়া থানার ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, সাজ্জাদকে আটক করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করে পেকুয়া থানা পুলিশ। একইদিন রাতে আটক সাজ্জাদ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রের সন্ধান দেবে বলে পুলিশকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়৷ সেখানে পৌঁছামাত্র তাঁর সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে৷ এসময় পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছুড়ে। এতে হামলাকারীরা পিছু হটে৷ পরে ঘটনাস্থল থেকে সাজ্জাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সতীর্থদের গুলিতে মারা যাওয়া ধর্ষক সাজ্জাদের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় হত্যা, অস্ত্র ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে পৃথক তিনটি মামলা রুজু করা হচ্ছে।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!