দ্বিগুণ লাভের লোভে রূপসার কিংয়ের ফাঁদে ২ লাখ গ্রাহক

দ্বিগুণ লাভ, গ্রাহকের প্রথম জমার টাকায় অর্ধেক কমিশন ও বেশি বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সিইপিজেড এবং কর্ণফুলী পোশাক শ্রমিকদের বিভিন্ন কারখানায় কর্মরত মার্কেটিং চক্রের পাতানো ফাঁদে পড়ে অধিকাংশ গ্রাহক।

এছাড়া গ্রাহকদের একটি অংশ এসেছে তাদের পরিচিত বন্ধু ও স্বজনদের প্রলোভন পেয়ে। মার্কেটিং চক্রটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের বরিশাল ও বাগেরহাটের লোক পরিচয় দিয়ে এসব এলাকার গ্রাহক টানার কৌশল নেয়।

জানা যায়, রূপসা কিং ডিপিএসের মাসিক কিস্তি সর্বনিম্ন জামানত নেয় ১ হাজার টাকা। ওই ডিপিএসের বিপরীতে ৫০ হাজার টাকায় ৮ মাসের লভ্যাংশ দেয় ৬০ হাজার টাকা। রয়েছে এককালীন বীমা ও এফডিআর। এককালীন প্যাকেজ এফডিআরের ১ লাখ টাকায় ৪ বছরের লভ্যাংশ দ্বিগুণ। এছাড়া প্রতিমাসে একলাখ টাকায় লভ্যাংশ দেয়ার কথা ২ হাজার টাকা।

সূত্র বলছে, ২০০৬ সালে ১৪ জন পরিচালকের সমন্বয়ে গঠিত হয় রূপসার মাল্টিপারপাস। এদের মধ্যে দুজন পরিচালক ছাড়া চেয়ারম্যানসহ অধিকাংশ পরিচালকদের গ্রামের বাড়ির বরিশাল ও পিরোজপুর জেলায়। জাকির হোসেন ও রাশেল হাওলাদারের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলায়।

বৃস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল থেকে চট্টগ্রামের ইপিজেড থানার চৌধুরী মাকেটে রূপসা কিং গ্রুপ কার্যালয়ে তৃতীয় দিনের মতো ভিড় ছিল গ্রাহকদের। গত দুই দিন ধরে সেখানে ইপিজেড থানার ভূমিকা নিয়ে অনেক গ্রাহক প্রশ্ন তুলছেন।

তারা বলেন, রূপসার একাধিক পরিচালক রয়েছেন। তিনজন গ্রেপ্তার হলেও বাকিরাতো আসতে পারতেন এবং গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন। দুই লাখেরও বেশি গ্রাহক আমরা, আমাদের টাকার নিশ্চিয়তা কে দেবেন। পুলিশ বলছে আগামী সোমবার সবার টাকা দিয়ে দেবেন রূপসা। ওদিন টাকা না পেলে পুলিশ কি আমাদের টাকা উদ্ধার করে দেবেন?

ইপিজেডে একটি পোশাক কারখানায় ২০০৬ সাল থেকে চাকরি করেন রাশেদা খাতুন নামের এক শ্রমিক। চাকরির এক বছরের মাথায় তার সহকর্মীর প্রলোভনে রূপসা মাল্টিপারপাসে অন্তর্ভুক্ত হয় সে।

রাশেদা জানায়, প্রথমে রাশেদা ডিপিএস করে সেখানে। পরে ওদের প্রলোভনে আবার ডিপিএস ভেঙ্গে এফডিআর করা হয়। দুমাস আগে এফডিআরের মেয়াদ শেষ হলেও কোনভাবে টাকা উঠাতে পারেনি সে। যতবার টাকা উঠাতে গেছে ততোবারই সে প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে নতুন নতুন কায়দায় টাকা জামানত রেখেছে।

বাগেরহাট জেলা বাসিন্দা কহিনুর আক্তার। সেও কর্ণফুলী ইপিজেডের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করছে ১০ বছর ধরে। একই কারখানায় চাকরি করছে তার স্বামীও। কারখানার পরিচিতি এক বান্ধবীর কথায় স্বামীর নিষেধ সত্ত্বেও ১০ বছর আগে এফডিআর করে ৩ লাখ টাকা। চলতি বছরের ৬ জুনে এফডিআরের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। এখন তারও মাথায় হাত।

উল্লেখ্য, ১৪ জানুয়ারি ওবাইদুল্লাহ রুবেল নামের সেখানকার সাবেক এক পরিচালকের পরিবারের পক্ষে একটি অভিযোগের ভিত্তিতে ‘রূপসা কিং গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ। ওইদিন টানা ১৪ ঘন্টা অভিযান চালিয়ে ৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা জব্দ করা হয়। এ সময় প্রতিষ্ঠানের ভাইস-চেয়ারম্যান মুসা হাওলাদার, পরিচালক গোলাম ফয়সাল এবং প্রকল্প পরিচালক রাসেল হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করা হয়।


এএইচ/এসএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!