দোকান কর্মচারীর বেশে চুরি, সিসিটিভি দেখে পুলিশের হাতে ধরা

চট্টগ্রামের পটিয়ায় একটি ইলেকট্রনিক্স পণ্যের দোকান থেকে বিপুল পরিমাণ চোরাই ক্যাবল উদ্ধার করেছে পটিয়া থানা পুলিশ। এ ঘটনায় শান্ত চক্রবর্তী (৩০) নামের একজনকে আটক করা হয়েছে।

সোমবার (১৮ জুলাই) রাত সাড়ে নয়টার দিকে পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিক রহমান ও পরিদর্শক ওসি (তদন্ত) রাশেদুল ইসলাম এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মনোয়ার হোসাইনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি বিশেষ টিম পটিয়া পৌর সদরের ক্লাব রোডের মল্লিক ট্রেডার্সে অভিযান চালিয়ে আর আর ক্যাবল ব্রান্ডের ১০টি বৈদ্যুতিক তারের কয়েল উদ্ধার করা হয়েছে।

এর আগে গত ১৬ জুলাই শনিবার দুপুরে আটক চোরের দেওয়া তথ্য মতে একই দোকানে অভিযান চালিয়ে একই ব্রান্ডের ১৩ টি তারের কয়েল উদ্ধার করা হয়েছিল।

পুলিশ জানায়, পটিয়া পৌর সদরের বাস স্টেশন এলাকার আয়েশা ইলেকট্রনিকসের দোকানের কর্মচারী শান্ত চক্রবর্তীকে দোকানের মালিক বোরহানুর রহমান গত তিন মাস আগ থেকে তার কথাবার্তা আর চলাফেরা সন্দেহজনক হওয়ায় গত শুক্রবার দোকানের সিসিটিভি ফুটেজ দেখেন। এ অবস্থায় কর্মচারী শান্ত চক্রবর্তী বাথরুমে যাওয়ার অজুহাতে পালিয়ে যায়।

এদিন তাকে তার এক নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে কৌশলে ডেকে আনেন মালিক বোরহান। এরপর শনিবার সকালে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। সেদিন শান্ত চক্রবর্তীকে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।

গত শনিবার পুলিশ আসামি শান্ত চক্রবর্তীকে চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতের বিচারক কৌশিক আহমেদ খন্দকারের কাছে ৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। জবানবন্দিতে তিনি আয়েশা ইলেকট্রনিকসের দোকান থেকে গত তিন মাস ধরে ক্যাবল চুরির কথা স্বীকার করেন। এ মামলায় শান্ত চক্রবর্তী জেলে পাঠানো হয়েছে। তিনি উপজেলার ছনহরা ইউনিয়নের কিরিটি চক্রবর্তীর ছেলে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিক রহমান জানান, ‘শান্ত চক্রবর্তী গত চার মাস ধরে ওই দোকানে চাকরি করে আসছে। সে সুবাদে মল্লিক ট্রেডার্সের মালিক কৃষ্ণ মল্লিকের সাথে যোগসাজশে দফায় দফায় মূল্যবান মালামাল চুরি করে আসছে। সোমবার রাতে আমরা আবারো মল্লিক ট্রেডাস নামের একটি ইলেকট্রনিকসের দোকানে অভিযান চালিয়ে ১০ টি তারের কয়েল উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে ওই দোকানের মালিক পালিয়ে গেছে।’

এদিকে অভিযোগ উঠেছে, ক্লাব রোডের মল্লিক ট্রেডার্স নামের এ ইলেকট্রনিকসের দোকানে নকল ক্যাবলের ব্যবসা চালানো হচ্ছে বহু বছর ধরে। তার দোকানে কোন গ্রাহক ভালো ব্রান্ডের ক্যাবল চেয়ে বসলে তখন সংঘবদ্ধ চোরের সদস্যদের কাছ থেকে অথবা অন্য দোকানের কর্মচারীদের মাধ্যমে সেই দোকান থেকে চুরি করে এনে চড়া দামে বিক্রি করা হতো। আর চোরের দলকে নামমাত্র টাকায় নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়।

এছাড়াও এ দোকানে পল্লী বিদ্যুৎ অনুমোদিত ডিলারের নাম সর্বস্ব সাইনবোর্ডের আড়ালে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের অসাধু সিন্ডিকেট মাধ্যমে গ্রাহকদের বেনামি ও নিম্নমানের ক্যাবল দিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায় করা হতো। আর এ নিম্নমানের ক্যাবল ব্যাবহারের ফলে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের মতো দুর্ঘটনার আশংকায় রয়েছে হাজারো মানুষ।

এদিকে অভিযানের সময় উপস্থিত ছিলেন পটিয়া উপজেলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এম এ ইউসুফ। তিনি জানান, মল্লিক ট্রের্ডাসের মালিক অনেক আগ থেকেই চোরাই মালামাল এনে বিক্রি করে আসছিল। আমরা তাকে কোন সময় হাতেনাতে ধরতে পারিনি। আজ পুলিশ তার আসল পরিচয় উন্মোচন করতে পেরেছে। দোকানের মালিক কৃষ্ণ মল্লিক আমাদের ব্যবসায়ীদের মুখে চুনকালি লেপন করেছে। আমরা তার দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করছি।

জব্দ করা মালামালের বাজার মূল্য ৮০ হাজার টাকা বলে জানা গেছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!