দোকানের খাবার নয় বাসায় তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবারেই ইফতার সারছে নগরবাসী

পুষ্টিবিদরা বলছেন লকডাউনে খাদ্যভ্যাস বদলাচ্ছে মানুষের

ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, হালিম ও কাবাব। রোজা এলেই ব্যস্ততা বাড়ে নগরীর ছোট থেকে বড় রেস্টুরেন্টগুলোতে। তৈরি করা বাহারি ইফতার বিক্রি হয় রেস্টুরেন্টগুলোতে। অলিগলির সড়কের পাশেও ইফতারের দোকান বসে। বিকেল গড়াতেই বিক্রি বেড়ে যায় দোকানগুলোতে। তবে এবারের রোজার চিত্র ভিন্ন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলায় লকডাউনে বন্ধ রয়েছে তৈরি ইফতারের দোকান। রেস্ট্যুরেন্ট বন্ধ, সড়কও শূন্য। একদিকে লোকসান গুণছে রেস্টুরেন্টসহ ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে মানুষের খাদ্যভ্যাসে ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে বলে জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদরা।

ব্যবসায়ী রাফিউর রহমান বলেন, ‘প্রত্যেক রমজানে পরিবারের সাথে ইফতার করতে অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরি। ফেরার পথে রেস্ট্যুরেন্ট থেকে নানা ইফতারি নিয়ে যাই। শরবত ও জুস ছাড়া বাকি সব খাবার রেস্টুরেন্ট থেকে আনা হতো। ডাক্তারের নিষেধ থাকলেও ইফতারের সময় একটু মুখরোচক ভাজপোড়া খাবার না হলে যেন চলেই না। এবার শুধু ঘরে তৈরি খাবার দিয়েই ইফতার সারছি।’

গৃহিণী শারমিন বলেন, ‘প্রতিবছর ঘরে তৈরি ইফতারের সাথে যোগ হতো রেস্ট্যুরেন্ট থেকে আনা হালিম, জিলাপি কাবাবসহ নানা মুখরোচক খাবার। ইফতারিতে একটু বিলাসিতা আমরা সবাই করি। এগুলো বাসায় তৈরি করা কষ্টসাধ্য। তাই এবার বাড়ির তৈরি সাধারণ খাবারেই ইফতার হচ্ছে। তবে একদিকে এটি ভাল। কারণ এ করোনা দুর্যোগের মুহূর্তে স্বাস্থ্যকর খাবার আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে। এ মুহূর্তে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা প্রয়োজনও।’

শিক্ষার্থী রবিউল জানান, ‘প্রতিবছর দোকান থেকে ইফতারি কিনতাম। কখনও বন্ধু বা পরিবার নিয়ে রেস্টুরেন্টে বসেই ইফতার সারতাম। কোথায় কী ভালো পাওয়া যায় সে রিভিউ নিয়ে সেখানে খেতে যেতাম। এখন করোনার আতংক তো আছেই তার ওপর লকডাউনে বন্দিজীবন। এখন ঘরে তৈরি খাবার দিয়ে ইফতার হয়। হয়ত এগুলো স্বাস্থ্যকরও। খাদ্যের অভ্যাস পাল্টাচ্ছে কী না জানি না তবে এমন বন্দিত্ব আর ভালো লাগছে না।’

রোজার খাদ্যভ্যাস নিয়ে পুষ্টিবিদরা বলেন, রোজার সময় সারাদিন অভুক্ত থাকায় শরীরে পানি স্বল্পতা থাকে। তাই ইফতারের সময় বেশি করে পানি ও ঘরে তৈরি জুস খাওয়া দরকার। এছাড়াও আঁশযুক্ত খাবার, দই, ফল, লেবু শরবত,ডাবের পানি, শসা, চিড়া, মুড়ি উপকারী। হালকা ছোলা খাওয়া যেতে পারে। কারণ রোজা রাখার ফলে বিকেলের পর থেকে শরীরের মেটাবলিক সিস্টেম কাজ করে ধীরে। তাই হালকা ও সহজে হজমযোগ্যে খাবার খাওয়া দরকার। অতিরিক্ত তেলে ভাজা ও চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণের ফলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ঘাটতি সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এবার করোনার প্রভাবে পুরো দেশ লকডাউন। অনেকে বাধ্য হয়ে ঘরে তৈরি খাবারে ইফতার সারছেন। এতে মানুষ একদিকে মানুষ নানা ধরনের রোগ বালাই থেকে রক্ষা পাচ্ছেন তেমনি করে দীর্ঘদিনের ভাজাপোড়া খাওয়ার অভ্যাস বাদ দেওয়ার সুযোগ হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রামে মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজির সহকারী অধ্যাপক ডা. মো জাকির হোসেন বলেন, ‘রমজানে ইফতারের খাবার নিয়ে সতর্ক থাকা উচিত। সারাদিন রোজা রাখার পর তেলযুক্ত ভাজাপোড়া খাবার শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ভাজাপোড়া ও অতিরিক্ত তেলে তৈরি খাবার বদহজম, কৌষ্ঠাকঠিন্যসহ নানা রোগ বয়ে আনে। এজন্য আঁশযুক্ত খাবারের পাশাপাশি বেশি করে পানি পান করতে হবে। ’

প্রসঙ্গত, নগরের প্রায় ১০ হাজার রেস্টুরেন্ট প্রায় ১ শ কোটি টাকার ইফতারি ব্যবসা করে। এবার লকডাউনের কারণে লোকসানে পড়েছেন রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা।

সিএম/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!