‘দেশে বেকার যুবকের সংখ্যা ৬৬ লাখ’

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০১৮ সালে দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৩৬ লাখ। দারিদ্র্যতার হার ২১ দশমিক ৮ শতাংশ বা ৩ কোটি ৫৫ লাখ। এর মধ্যে অতি দরিদ্রের হার ১১ দশমিক ১৩ শতাংশ বা প্রায় ২ কোটি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপ অনুযায়ী দেশে বর্তমানে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৭৭ হাজার, যাদের মধ্যে ৭৪ শতাংশই যুব। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএল ও) বক্তব্য অনুযায়ী বেকার যুবকের সংখ্যা প্রায় ৬৬ লাখ।

এই বিপুল সংখ্যক বেকারের কর্মসংস্থান তৈরি না হলে এরা মানব সম্পদ না হয়ে বোঝা হবে বলে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত একটি অনুষ্ঠানে মত প্রকাশ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) নগরীর ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় এ মত প্রকাশ করা হয়।

এতে আরো বলা হয়, ‘দৈনিক ২ হাজার ১২২ ক্যালরি খাবার কিনতে অক্ষম তারাই দরিদ্র। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) উন্নয়ন কাঠামোর অন্যতম লক্ষ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে সব ধরনের দারিদ্র্যের অবসান এবং আগামী ১৫ বছরের মধ্যে ক্ষুদামুক্তির অঙ্গিকার। তাই এসডিজির মুল লক্ষ্য অনুযায়ী দেশে সবার খাদ্য নিশ্চিত করতে দ্রুত খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন যেমন জরুরি, তেমনি কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।’

খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় পর্ষদের সদস্য এসএম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে সভায় মুখ্য আলোচক ছিলেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশর সাধারণ সম্পাদক মহসিন আলী। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন চিটাগাং ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সাইন্স ইউনিভার্সিটির খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফ্যাকাল্টির ডিন প্রফেসর ড. জান্নতারা খাতুন, সরকারি মহসিন কলেজের অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, সিভয়েস ২৪ ডটকমের সম্পাদক এম নাসিরুল হক।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন,‘দেশে আয় ও সম্পদের বৈষম্যের ব্যাপকতা ক্রমেই বেড়েই চলেছে। ধনী পরিবারের আয় বৃদ্ধির কারণে শীর্ষ ১০ ভাগ মানুষ দেশের ৩৮ শতাংশ সম্পদের মালিক। অপর দিকে, নিম্নে অবস্থানকারী ১০ শতাংশ অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠী দেশের মাত্র ১ শতাংশ সম্পদের মালিক। ২০১২ সাল থেকে বিগত ৫ বছরে দেশে ধনীর সংখ্যা বেড়েছে গড়ে ১৭ শতাংশ হারে। এ হার যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, ভারতসহ ৭৫টি বড় অর্থনীতির দেশের চেয়ে বেশি।’

সভায় বক্তারা অভিযোগ করা হয়, ‘সরকার খাদ্য উৎপাদনে সফলতা দাবি করলেও প্রতি বছর কৃষক কোন না কোন কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায় না, যার কারণে কৃষকরা রাস্তায় আলু, টমেটো, পেঁয়াজ, ধান ও দুধ ফেলে প্রতিবাদ জানায়। আর ঐ বছর এ শস্য উৎপাদনে কৃষক আগ্রহ হারায়। ফলশ্রুতিতে খাদ্য সংকট তৈরি হয়। আর দেশ খাদ্য আমদানি নির্ভর হয়ে যান। এ সুযোগে কিছু খাদ্য ব্যবসায়ী বিদেশ থেকে খাদ্য-শস্য আমদানিতে জটিলতা ও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে জনগণের পকেট কাটে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা আরো বলেন,‘খাদ্য উৎপাদন ও বিপণনে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ক্রমাগত একচ্ছত্র আধিপত্য সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। আর সে কারণে গত ২০ বছরে দেশে খাদ্যের মুল্য বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণেরও অনেক বেশি। মোটা চালের দাম গত ১ বছরে দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে প্রকৃত কৃষক তার উৎপাদিত খাদ্য পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না, যা মধ্যস্বত্ত্বভোগী ও ফাড়িয়ারা এবং খাদ্য ব্যবসবায়ীরাই সিংহভাগ হাতিয়ে নিচ্ছেন। ফলে দেশীয় কৃষক প্রতিবছরই লোকসান গুণতে বাধ্য হচ্ছেন।’

খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরীর সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশনেন চিটাগাং ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সাইন্স ইউনিভার্সিটির এপ্লাইড ফুড সাইন্স অ্যান্ড নিউট্রিশন প্রধান অধ্যাপক আলতাফ হোসেন, খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলা কমিটির আবদুল মান্নান প্রমুখ।

এমএ/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!