দেশের ৩৬৬টি আইনে ‘বৈষম্য’ খুঁজে পেলেন চবির একদল গবেষক

দেশে প্রচলিত ৩৬৬টি আইনে ‘বৈষম্যমূলক বিধান’ চিহ্নিত করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একদল গবেষক।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল ফারুকের নেতৃত্বে ১৯৫৪ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত প্রণীত এমন ৩৬৬টি আইনের ওপর গবেষণা চালিয়ে একদল গবেষক আইনগুলোতে বেশ কিছু বৈষম্যমূলক বিধান প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করেছেন।

গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের সারসংক্ষেপে গবেষকদলের দলপতি চবি অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল ফারুক দেখিয়েছেন, বৃটিশ, পাকিস্তান শাসনামল ও পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে অনেক আইন প্রবর্তন হয়েছে— যার অনেক বিধান সময়ের প্রেক্ষাপটে বৈষম্যমূলক বলে চিহ্নিত হচ্ছে। মূলত সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বিশেষত আদিবাসী, অভিবাসী, প্রতিবন্ধী ও নারীর প্রতি বৈষম্য সৃষ্টি করে— এমন কিছু ত্রুটিপূর্ণ বিধান রয়েছে সেসব আইনে।

এসডিজি বাস্তবায়নে স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্যে এসব বৈষম্যমূলক বিধানগুলো সংস্কারের মাধ্যমে সরকারের উন্নয়নকে টেকসই পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে গবেষণাপত্রে মত দেন তিনি।

শনিবার (১৪ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে বৈষম্যমূলক বিধান চিহ্নিতকরণে আইনি গবেষণা প্রকল্পের প্যাকেজ-২’ এর আওতায় অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় বক্তা, গবেষক ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণী কর্তাব্যক্তিরা বলেন, দেশে বিদ্যমান অনেক আইন বর্তমান প্রেক্ষিতের সঙ্গে যাচ্ছে না এবং প্রচলিত এসব আইনে অনেক বৈষম্যও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই বৈষম্য দূর করে আইনি সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। এ জন্য মাঠ পর্যায়ে গবেষণা ছাড়াও সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাদের মতামতের ভিত্তিতে এসব আইনের বৈষম্য বিধান চিহ্নিত করে সংশোধন করা প্রয়োজন।

আইন মন্ত্রণালয়ের আইন গবেষণা ও সংস্কার প্রকল্প ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ কর্মশালাটির আয়োজন করে।

আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও প্রকল্পের পরিচালক ড. মাহমুদ মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক বদিউল আলম, আইন কমিশনের প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা ফজলুল আজিম, আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও সংসদীয় অ্যাফেয়ার্স বিভাগের উপ সচিব মো. মাহবুবুর রহমান। অনুষ্ঠানে আইনপেশায় নিয়োজিত কর্মী, বিচারক, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি ছাড়াও গবেষণা প্রকল্পের গবেষকরাও তাদের মতামত তুলে ধরেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল ফারুকের নেতৃত্বে ১৯৫৪ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত প্রণীত এমন ৩৬৬টি আইনের উপর গবেষণা চালানো হয়। গবেষণা টিমের অন্যান্য সদস্যরা হলেন চবি অধ্যাপক ড. জাফর উল্লাহ তালুকদার, অধ্যাপক ড. সাজেদা আক্তার, অধ্যাপক নির্মল কুমার সাহা, অধ্যাপক নাজনীন বেগম, সহযোগী অধ্যাপক ড. রকিবা নবী ও সহযোগী অধ্যাপক ড. ম. মঈন উদ্দীন। সরকারের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ১৭টি লক্ষ্যের ১৬ নং শর্ত হিসাবে দেশের বিদ্যমান আইনগুলো সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, এসডিজি বাস্তবায়নে দেশের বিদ্যমান আইনের বৈষম্যমূলক বিধান সংস্কারে নেয়া সরকারি প্রকল্পে চারটি প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের শীর্ষ সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগকে প্রকল্পের প্যাকেজগুলো নিয়ে গবেষণার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৫৯-১৯৮৪ পর্যন্ত আইন নিয়ে গবেষণার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগকে। সবগুলো প্যাকেজ থেকে প্রাপ্ত গবেষণালবদ্ধ নির্দেশনা ও পরামর্শ নিয়ে সরকার এসব আইন সংস্কার ও যুগোপযোগী করবে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!