দেশের ক্রিকেট নিয়ে পরিকল্পনা শোনালেন হেড কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো

ভাষাকে সমস্যা মনে করেন না ল্যাঙ্গাভেল্ট

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) অনেক যাচাই-বাছাই করে হেড কোচ হিসেবে নিয়োগ দেন দক্ষিণ আফ্রিকার রাসেল ডোমিঙ্গোকেই। তার আগেই বোলিং কোচ হিসেবে নিয়োগ পান আরেক প্রোটিয়ান চার্লস ল্যাঙ্গাভেল্ট। দেশের সংবাদ মাধ্যমের সাথে এই দুই কোচের আনুষ্ঠানিক পরিচয় ও পরিকল্পনা শোনানোর জন্য বিসিবি আগেরদিন সংবাদ মাধ্যমকে অবহিত করেন বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে আসবেন দুই নতুন কোচ। যদিও পরে সেটি পিছিয়ে নেয়া হয় সকাল সাড়ে ১০টায়।

নির্ধারিত সময়ের পাঁচ মিনিটের মধ্যেই দুই কোচ মিরপুরের শেরে বাংলার প্রেস কনফারেন্স রুমে হাজির হন। রুমে ঢোকার আগে থেকেই হাস্যোজ্জ্বল দুই প্রোটিয়া কোচ। দেশে আসার আগেই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিলেও, আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনেও প্রাণোবন্তই দেখা যায় ডোমিঙ্গো, ল্যাঙ্গাভেল্টকে।

জনাকীর্ণ সম্মেলনের শুরুতেই নিজের প্রাথমিক লক্ষ্যের কথা জানিয়ে দেন হেড কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো। মূলত খেলোয়াড়দের সম্পর্কে ভালো ধারণা নেয়া এবং তাদের আস্থা অর্জনের দিকেই বেশি মনোযোগী তিনি। ডোমিঙ্গো বলেন, ‘আমার প্রাথমিক লক্ষ্য হলো প্রথমত, খেলোয়াড়দের ভালোভাবে দেখা, তাদের সম্পর্কে ধারণা নেয়া, সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি এবং খেলোয়াড়দের আস্থা অর্জন করা।’

তিনি যে এ প্রাথমিক লক্ষ্যপূরণে বিশেষ মনোযোগী তা বোঝা গেছে দলের সঙ্গে তার ক্যাম্পের প্রথম দিনেই। কেননা সকাল ৯টায় ক্যাম্পে এসে সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগপর্যন্ত খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলে তাদের সম্পর্কে ধারণা নেয়ার ও বোঝার চেষ্টা করতে দেখা গিয়েছে ডোমিঙ্গোকে। যা আশা জাগাচ্ছে দেশের ক্রিকেট অনুরাগীদের।

ডোমিঙ্গো নিজেও অভিভূত বাংলাদেশে ক্রিকেটের আবেদন ও জনপ্রিয়তা দেখে। প্রায় ১৫ বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসেছিলেন ডোমিঙ্গো। তখন থেকে এ দেশের ক্রিকেট ক্রেজ সম্পর্কে অবহিত রয়েছেন এ প্রোটিয়া কোচ।

তিনি বলেন, ‘আমি ২০০৪ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ হয়ে এসেছিলাম। তখনই ধারণা পেয়েছিলাম এ দেশে ক্রিকেটের কদর কত বেশি। এছাড়া গতকালও বিমানবন্দরে নেমে এত এত ক্যামেরার ফ্ল্যাশ, আজ সম্মেলনে প্রায় শতাধিক সাংবাদিক দেখেই বোঝা যায় এখানে ক্রিকেটের আবেদন অনেক বেশি।’

এসময় বাংলাদেশের বিশ্বকাপ পারফরম্যান্স পর্যালোচনা করতে বলা হলে ডোমিঙ্গো বলেন, ‘আমি তো ভেবেছিলাম বাংলাদেশ সপ্তম হয়েছে। তবে সাত বা আটের মধ্যে তেমন ফারাক নেই। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ অনেক ভালো ক্রিকেট খেলেছে। অন্তত সাত বা আটে থাকার চেয়ে অনেক ভালো খেলেছে তারা। বিশ্বকাপে ওদের অনেক ইতিবাচক বিষয় আমি খেয়াল করেছি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়টা পেলেই অবস্থান আরও ভালো হতো।’

ভাষাকে সমস্যা মনে করেন না ল্যাঙ্গাভেল্ট

অভিযোগ রয়েছে সাবেক বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশের সঙ্গে বাংলাদেশের বোলারদের কাজ করার প্রধান বাধা ছিলো ভাষাগত সমস্যা। ক্যারিবীয় কিংবদন্তির অর্ধেকের বেশি কথাই নাকি বুঝতে পারতেন না স্থানীয় বোলাররা। যে কারণে তার কাছ থেকে সেরাটা আদায় করতে পারেননি অনেকেই।

বিদেশি যেকোনো কোচের ক্ষেত্রেই ভাষাগত এ দূরত্ব দেখা দেয়া স্বাভাবিক। তবে টাইগারদের নতুন বোলিং কোচ চার্লস ল্যাঙ্গাভেল্ট আশা করছেন ভাষা কোনো সমস্যার কারণ হবে না। এক্ষেত্রে অবশ্য একটা শর্তও রয়েছে তার। সেটি হলো খেলোয়াড় ও কোচের মধ্যকার সুসম্পর্ক।

আজ (বুধবার) প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন দুই নতুন কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো এবং চার্লস ল্যাঙ্গাভেল্ট। যেখানে হেড কোচ ডোমিঙ্গো পুরোটা সময় কথা বলেন পুরো জাতীয় দল নিয়েই এবং ল্যাঙ্গাভেল্টের আলোচনার বড় অংশ জুড়ে ছিলো বোলারদের কথাবার্তা।

ভাষা কোনো সমস্যার কারণ হবে না, এমন কথা জানিয়ে ল্যাঙ্গাভেল্ট উদাহরণ টানেন গতবছর এশিয়ার আরেক দেশ আফগানিস্তানে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতার কথা। তবু যদি ভাষা কোনো সমস্যার কারণ হয়, তাহলে সমাধান হিসেবে দোভাষীর সাহায্য নেয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে ল্যাঙ্গাভেল্ট বলেন, ‘আফগানিস্তানে কোচ থাকাকালীনও ভাষা একটি সমস্যা ছিলো। তবে আমার মনে হয় ভাষা তখনই বাধা হয়ে দাঁড়াবে না, যখন আমার এবং বোলারদের মধ্যে দারুণ একটা সম্পর্ক তৈরি হবে। একসঙ্গে কাজ করার জন্য দুই পক্ষের মধ্যে ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি খুব গুরুত্বপূর্ণ।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি বোলারদের সঙ্গে আন্তরিক একটা সম্পর্ক সৃষ্টি হলে, তারাও আমার ভাষা বুঝবে এবং আমিও তাদের সমস্যা বুঝতে পারবো। এরপরও সমস্যা হলে দোভাষীর সাহায্য নেয়া যাবে।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!