দেওয়ানহাটে রাতারাতি ৫০টি পাকা ঘর উঠছে সিটি কর্পোরেশনের জায়গা দখলে নিয়ে

ঢাল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে মেয়র ও কাউন্সিলর জাবেদের নাম

চট্টগ্রাম নগরীর দেওয়ানহাট ওভারব্রিজের নিচে চোখের পলকে দখল হয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের খালি জায়গা। উচ্ছেদের মাত্র তিন মাসের মাথায় এবার প্রকাশ্যেই ওভারব্রিজের নিচে তৈরি হচ্ছে একাধিক স্থাপনা। এই অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নামধারী নেতারা। আর অবৈধ এসব স্থাপনা নির্মাণে ‘ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এবং ২৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ জাবেদের নাম।

দেওয়ানহাটে রাতারাতি ৫০টি পাকা ঘর উঠছে সিটি কর্পোরেশনের জায়গা দখলে নিয়ে 1

চট্টগ্রাম প্রতিদিনের সরেজমিন অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন সব চিত্র।

নগরীর দেওয়ানহাট ওভারব্রিজের নিচে দীর্ঘদিন ধরে দখলে থাকা বিশাল বস্তি গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর উচ্ছেদ করেছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা বেগম নেলীর নেতৃত্বে পরিচালিত ওই অভিযানে নগরের ডবলমুরিং থানাধীন দেওয়ানহাট ওভারব্রিজের নিচ থেকে দুই শতাধিক কাঁচা-পাকা দোকান ও ঘর উচ্ছেদ করে জায়গাটি অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়। ওই অভিযানে অংশ নেন সিটি মেয়রের একান্ত সচিব ও প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেমও।

কিন্তু উচ্ছেদের তিন মাস না যেতেই ফের নির্মিত হচ্ছে কমপক্ষে ৫০টি সেমিপাকা ঘর। শনিবার (৭ জানুয়ারি) সকাল থেকে দেওয়ানহাট ওভারব্রিজের নিচে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ওই জায়গায় নির্মাণ কাজ শুরু করেছে সংঘবদ্ধ কয়েকটি চক্র।

স্থানীয়রা জানান, আগে বেড়া ও টিনের ঘর থাকলেও এবার সেমিপাকা ঘর বানানো হচ্ছে ওই জায়গায়। ২৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ জাবেদের নাম ব্যবহার করে তার অনুসারী জিয়া ও সালাউদ্দিন বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে থেকে ঘর দেওয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এদের বিরুদ্ধে এলাকায় সন্ত্রাস ও মাদকের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগও রয়েছে।

রোববার (৮ জানুয়ারি) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ওভারব্রিজের নিচে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ওই জায়গায় দেয়াল তোলা হচ্ছে একের পর এক। অসংখ্য শ্রমিক একযোগে কাজ করছে।

নির্মাণ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ৫০টি সেমিপাকা ঘর তৈরি করা হচ্ছে ওভারব্রিজের ওই খালি জায়গায়। তবে কার নির্দেশে তারা কাজ করছেন তা বলতে রাজি হননি কেউ।

এই বিষয়ে ২৩ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ জাবেদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেওয়ানহাট ওভারব্রিজের নিচে ঘর তৈরির জন্য ১ লাখ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে— এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আর জিয়া আমার অনুসারী নয়, তার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আছে। এই জায়গাটা অনেক দিন ধরে পড়ে আছে। এখানে স্থাপনা নির্মাণের জন্য সিটি করপোরেশনে আবেদন করা হয়েছে।’

অনুমোদন পাস হওয়ার আগেই কেন স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে— এমন প্রশ্ন করা হলে কাউন্সিলর মোহাম্মদ জাবেদ সিটি করপোরেশনে গিয়ে আবেদনের কপি দেখে নিতে বলেই মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ওভারব্রিজের নিচে স্থাপনা নির্মাণের আবেদনের বিষয়টি আমি জানি না। জায়গাটি তো আর ফেলে রাখা যাবে না। যে কেউ চাইলে আবেদন করতে পারে। আবেদন আসলে তখন দেখা যাবে কী করা যায়।’

জানা গেছে, দেওয়ানহাট ওভারব্রিজের নিচে সিটি কর্পোরেশনের ওই খালি জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছিল অন্তত ২০০ পরিবার। নিম্নআয়ের এসব পরিবার এজন্য অবৈধ সিন্ডিকেটের হাতে মাসে ভাড়া বাবদ দিতো দুই থেকে চার হাজার টাকা করে। পরে গত বছরের সেপ্টেম্বরে সিটি কর্পোরেশনের হঠাৎ উচ্ছেদ অভিযানে বিপাকে পড়ে খেটে খাওয়া মানুষগুলো। এমনকি উচ্ছেদের পর ছোট্ট শিশু ও বয়স্ক লোকদের ফুটপাত ঘুমাতেও দেখা গেছে।

উচ্ছেদের পর ভুক্তভোগী পরিবারগুলো ক্ষোভ প্রকাশ করে জানায়, এত বছর ধরে আনোয়ার, আফসার, মাসুদ, জসিম ও মামুন নামের কয়েকজন লোক বস্তিগুলো থেকে মাসে কমপক্ষে তিন লাখ টাকা ভাড়া তুলতো। তারা কেন একটিবারও দায়িত্ব নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ালো না? কেন তাদের মাত্র একদিনের ব্যবধানে রাস্তায় ঘুমাতে হচ্ছে?

জানা গেছে, প্রায় দেড় দশক ধরে ওই ওভারব্রিজের নিচে সিটি কর্পোরেশনের অবৈধ জায়গা দখল করে ভাড়াঘর ও দোকান ভাড়া দেন দেওয়ানহাটের খান কমপ্লেক্স ও সিটি কর্পোরেশনের মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসাইন আনুর নেতৃত্বে তার ছোট ভাই আফসার, মাসুদ, জসিম ও মামুনের একটি সিন্ডিকেট। প্রতিমাসে ঘরপ্রতি ভাড়া নেওয়া হতো দুই থেকে চার হাজার টাকা। যা মাসে গড়ে তিন লাখ টাকায় গিয়ে দাঁড়ায়। তবে সিন্ডিকেটের বাইরে এ টাকার ভাগ চলে যেতো সিটি কর্পোরেশনের ছোট-বড় কর্তাদের পকেটেও।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!