দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে মারধর, অভিযুক্ত মোরশেদকে শোকজ

গায়ের সাথে ধাক্কা লাগায় মারধরের ঘটনায় প্রক্টর অফিসে লিখিতভবে অভিযোগ দিয়েছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্র। লিখিত অভিযোগের পর প্রক্টর অফিস থেকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মী মোরশেদুল আলমকে ৩ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ৩ দিনের মধ্যে মোরশেদ গ্রহণযোগ্য কারণ বলতে না পারলে তাকে স্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হবে এমন আশ্বাস দিয়েছেনি ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীকে।

সোমবার (১১ নভেম্বর) বিকালে প্রক্টর অফিসে লিখিত অভিযোগের পর এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রতিবন্ধী ছাত্র সমাজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক।

তিনি বলেন, আমরা মোরশেদকে গতকাল থেকে আমরা গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছি। আর ছাত্রলীগ কর্মী বলে সে পার পেয়ে যেতে পারবে না। গতকাল আমাদের সাথে চবি শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে কথা হয়েছে। তারা মোরশেদকে ছাত্রলীগকর্মী নয় বলে জানাচ্ছে। তারপরও বিজয় গ্রুপের কিছু ছেলে আমাদের এসব করতে নিষেধ করছে। আমরা যেন শুক্কুরের মারধরের ব্যাপারে প্রতিবাদ না করি।

শুক্কুরের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সকালে শুক্কুরকে হাসপাতাল থেকে রুমে নিয়ে আসলেও এখন আবার হাসপাতালে নিয়ে আসছি। তার মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা এখনো রয়ে গেছে।’

উল্লেখ্য, গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৮টায় ক্যাম্পাসের সোহরাওয়ার্দী হলের মোড়ে শুক্কুরকে ছাত্রলীগের কর্মী মোরশেদুল আলম মারধর করেন।মারধরের শিকার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শুক্কুর আলম দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। আর মোরশেদুল আলম ক্যাম্পাসে বিজয় গ্রুপের কর্মী। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী।

মারধরের শিকার শুক্কুর আলম বলেন, ‘রাতে সোহরাওয়ার্দী হলের মোড়ের এক দোকানে খাবার কিনতে যান তিনি। সেখানে আগে থেকে বসে ছিলেন ছাত্রলীগের কর্মী মোরশেদুল। এ সময় তার সাথে মোরশেদুলের ধাক্কা লাগে। তখন মোরশেদুল সোজা হয়ে দাঁড়াতে বলেন। কীভাবে সোজা হয়ে দাঁড়াবেন জানতে চাইলে মোরশেদুল তাঁকে মারধর করেন এবং অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন।

তিনি বলেন, ‘৭-৮ মাস আগে আমার বাম চোখে সার্জারি করা হয়। আমি দুচোখের একটিতেও দেখি না। তাই তার গায়ে একটু ধাক্কা লেগে যায়। মারধরের পর আমার সহপাঠীরা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে আসে।

শুক্কুরের সহপাঠীদের দাবি, মোরশেদুল আলম নিয়মিত মাদক সেবন করেন। এর আগে তিনি এক রিকশা চালককেও মারধর করেছিলেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

মোরশেদুল আলেমের সাথে যোগাযোগ করতে কয়েক বার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এ দিকে শুক্কুরকে মারধরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। রাত ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী হলের মোড়ে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মোরশেদুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।

বিক্ষোভ কর্মসূচির বিষয়ে প্রতিবন্ধী ছাত্র সমাজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘শুক্কুরের আজ পরীক্ষা ছিল।সে গতকাল রাতে কিছু খাবার নিয়ে আসতে গিয়েছিল। রাতে যেন আর বের হতে না হয় সে জন্য দোকানে গিয়ে খাবার নিয়ে আসতে গিয়েছিল। আজকে সে পরীক্ষা দিতে পারছে না।’

তিনি বলেন,‘শুক্কুরকে মারধরকারী মোরশেদুল আলম বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। সোমবারের মধ্যে তাকে পুলিশ আটক না করলে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’

মোরশেদুল আলমের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান বিজয় উপপক্ষের নেতা এস এম জাহেদুল আউয়াল।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক বলেন, একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছাত্রকে মারধর করা অমানবিক কাজ। মারধরকারী ছাত্রলীগের কর্মী হলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ধরনের ঘটনা আমরা সমর্থন করি না।

বিশ্ববিদ্যালয় সহকারী প্রক্টর হানিফ মিয়া বলেন, শুক্কুর নামে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীকে মারধরের ঘটানায় প্রক্টর অফিস থেকে মোরশেদকে তিন দিনের কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়েছে।

এইচটি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!