দূষিত কর্ণফুলীতে মরছে মাছ

তেল-মবিল, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্য সবই আসছে নদীতে

কর্ণফুলী নদীতে মরে ভেসে উঠছে মাছ। দূষণের ফলে নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হওয়ায় প্রতিনিয়ত মরে ভেসে উঠছে মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী।

কর্ণফুলী নদীর মোহনা পতেঙ্গা এবং পারকির চর এলাকায় পানিতে মরা ইলিশ মাছ ভেসে উঠছে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এর আগে কর্ণফুলীতে চিংড়ি মাছে মড়ক ধরেছিল। কর্ণফুলীর দূষণের প্রভাবে এসব মাছ মরা পড়ছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

পানিতে বর্জ্য তেল, ফার্নেস অয়েল, মবিল মিশে চরম হুমকির মুখে পড়েছে কর্ণফুলীর জীববৈচিত্র্য। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো কর্মকান্ড চোখে পড়ছে না কর্ণফুলী রক্ষায়। অথচ পরিবেশ অধিদপ্তরের আইন থাকলেও নদী দূষণের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয় নামে মাত্র।

বাংলাদেশ নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলিউর রহমান বলেন, জাহাজ থেকে ফার্নেস অয়েল, পোড়া মবিল, পোড়া তেল কর্ণফুলীতে ঢেলে দেওয়া হয়। আবার পটিয়ার শিকলবাহা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্য খাল বেয়ে কর্ণফুলীতে এসে মিশছে। এতে দূষণ হচ্ছে কর্ণফুলীর।

তিনি বলেন, কর্ণফুলীতে হাজার হাজার লাইটার জাহাজ নোঙ্গর করে রাখা হয়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষও কর্ণফুলীর অপব্যবহার করছে। ফলে সব কিছুর প্রভাব কর্ণফুলীর মৎস্যভাণ্ডারের উপর গিয়ে পড়ছে। মারা যাচ্ছে মাছ। নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য।

কর্ণফুলী দূষণের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যকর ভুমিকা নেই বলেও মন্তব্য করেন আলিউর।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ফার্নেস অয়েল নদীর পানিতে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং পানিকে অক্সিজেন শূন্য করে দেয়। এতে নদীর জীববৈচিত্র্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। যে কারণে জলজপ্রাণীগুলো মারা পড়ে।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, প্রতিনিয়ত কর্ণফুলীতে ফার্নেস অয়েল, পোড়া মবিল, পোড়া তেল ফেলে পানি দূষণ করছে একটি মহল। কালো তেল পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এতে জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয়। পানিতে ভেসে ভেসে এ তেল বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে যায়। এতে পানির গুণাগুণ নষ্ট হয়ে মাছ মারা যায়।

তিনি বলেন, এ ধরনের তেল নিঃসরণ হলে জোয়ারের সময় হালদায় ঢুকে যেতে পারে। এতে বিশ্বের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্রের চরম ক্ষতি হতে পারে। মারা যেতে পারে মা মাছ।

জানা গেছে, গত ২৫ অক্টোবর ভোরে কর্ণফুলী নদীর ৩ নম্বর ডলফিন জেটি এলাকায় লাইটার জাহাজের সঙ্গে অয়েল ট্যাংকারের সংঘর্ষে ফুটো হয়ে ১০ টনের মতো ফার্নেস অয়েল ছড়িয়ে পড়েছে নদী ও সংলগ্ন খালে।

২৯ নভেম্বর দুপুরে শাহ আমানত সেতু এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে ফার্নেস অয়েল ভাসতে দেখা যায়। নদীর বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এ ফার্নেস অয়েল। এছাড়া ইপিজেড থানাধীন আকমল আলী বেড়িবাঁধস্থ মাইট্টা খাল দিয়ে জাহাজের বর্জ্য, কালো তেল সাগরে এসে পড়ছে। যা জোয়ারের সময় কর্ণফুলীতে ছড়িয়ে পড়ে।

স্থানীয় আবদুর শুক্কুর জানান, কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু এলাকায় নোঙর করা তেলবাহী জাহাজ থেকে প্রতিনিয়ত তেল নিঃসরণ হয়। এতে নদীতে জোয়ারের সময় তেল উজানের দিকে চলে যাচ্ছে। শাখা নদী হালদাতেও তেল ছড়িয়ে পড়ছে। এছাড়া ভাটার সময় নিচের দিকে সরে যাচ্ছে।এতে সব সময় মাছ মরে ভেসে উঠতে দেখা যায়।

তিনি জানান, কিছু দিন আগে কর্ণফুলীতে চিংড়ি মাছ মরে ভেসে উঠেছে। কয়েকদিন থেকে ইলিশ মাছ মরা পাওয়া যাচ্ছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, কর্ণফুলীতে পরিবেশ অধিদপ্তর ব্যবস্থা নিতে পারে। এটি পরিবেশের কাজ।

দূষণের ফলে মাছ মরা যাচ্ছে স্বীকার করে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিচালক আজাদুর রহমান মল্লিক বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি। কর্ণফুলী নদীতে ফার্নেস অয়েলের কারণে পরিবেশের ক্ষতি করা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!