সড়কপথ মাড়াতে হয়েছে প্রায় ৫০ কিলোমিটার। তারপর পার হতে হয়েছে নদী। নৌকায় তুলে নিতে হয়েছে ৫০ পরিবারের জন্য প্রায় ৭৫০ কেজি খাদ্যসামগ্রী। এরপর এসব খাদ্যসামগ্রী কাঁধে তুলে পৌঁছে দিতে হয়েছে চা শ্রমিকদের ঘরে ঘরে।
এতটাই পরিশ্রম করে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার কোদালা চা বাগানের শ্রমিকদের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিল ‘স্মাইল বাংলাদেশ’ নামে তরুণদের একটি দল।
স্বাভাবিক সময়ের সারাদিন কাজ করে ওই চা বাগানের শ্রমিকদের জুটে মাত্র ২০৪ টাকা। এদের কারও পরিবারে সদস্য সংখ্যা ৫ জন, কারও সদস্য সংখ্যা তারও বেশি। ঘরের লোক সংখ্যা যাই হোক, দিনের ইনকাম ২০৪ টাকায় মিলাতে হয় তাদের সংসারের খরচ।
করোনা পরিস্থিতিতে চা বাগানের শ্রমিকদের অবস্থা আরও করুন। কারণ এ সময় তাদের কপালে শ্রমের পাওনা জুটছেনা ঠিকমতো। আবার নদীপথ, পাহাড়ি টিলা ডিঙিয়ে গহীন অঞ্চলে থাকা কর্মহীন চা শ্রমিকদের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে না তেমন কেউই। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে তাদের পাশে দাঁড়াতে শ্রমসাধ্য উদ্যোগ নিয়েছে ‘স্মাইল বাংলাদেশ’।
শুধু চা শ্রমিকদের পাশেই নয়, যখন যেটুকু সুযোগ পেয়েছে তা নিয়ে অসহায়দের জন্য এগিয়ে এসেছে এই সংগঠনটি। চট্টগ্রামের ২০০ তরুণের এ মানবিক সাহায্যের প্লাটফর্ম ৩ হাজার মানুষকে দিয়েছে খাদ্য সহায়তা।
গ্রামের এতিমখানা থেকে ঠিকানা নিয়ে তাদের বাড়িতে গিয়ে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে তারা। আবার কখনো সাহায্যপ্রার্থীর কল পেয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে ছুটে গেছে খাবার হাতে। খাবারের প্যাকেট ভ্যানে তুলে নিজেরাই চালিয়ে গেছে গ্রামের খেটে-খাওয়া মানুষের বাড়ি বাড়ি। নিজেদের কাঁধে খাদ্যসামগ্রী বস্তা তুলে পার হয়েছে তারা নদী, ডিঙিয়েছে তারা পাহাড়ি টিলা।
এ বিষয়ে স্মাইল বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের ২০০ সদস্য নিজেদের অর্থায়নেই বেশিরভাগ সহায়তা নিশ্চিত করেছে। আমাদের কার্যক্রম দেখে অসংখ্য মানুষ আমাদের মাধ্যমে সহযোগিতা পৌঁছে দিয়েছে অসহায় পরিবারদের।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যন্ত অঞ্চলের যেসব জায়গায় এখনো সহযোগিতা পৌঁছেনি সেসব জায়গার খোঁজ নিয়ে তাদের সাহায্য করছি আমরা। ফান্ড কম থাকলে আমাদের সদস্যরা নিজেরা রান্না করে শহরে ঘুরে ঘুরে ইফতার ও সেহেরি হলেও বিতরণ করছে। সাধারণ ছুটির শুরু থেকে একদিনও আমাদের সদস্যরা বসে থাকেনি। সহযোগিতা পেলে আমাদের কার্যক্রমের পরিধি আরও বাড়াবো আমরা।’
স্মাইল বাংলাদেশের এসব কর্মসূচিতে পরিচালক হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নজরুল ইসলাম জয় এবং সংগঠনের সভাপতি পদে আছেন সাইফুল ইসলাম ইমরান। এছাড়াও আছেন সিহাব, শাহদাত রাজন, ফাহিম, জাহেদ, হ্রদয়, রাজদ্বীপ, ইব্রাহীম, কেয়া, তানচুরা, নেহারিকা, আরিফুর রহমানসহ অনেকে।
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির পর থেকে ‘আমার হাতেই আমার সুরক্ষা’ স্লোগানে মাঠে নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্মাইল বাংলাদেশ’।
নগরীর মসজিদ, রেলস্টেশন মসজিদসহ পাবলিক প্লেসে জীবাণুনাশক ছিটানোর পাশাপাশি করোনাভাইরাস মুক্ত থাকতে সচেতনতামূলক ফেস্টুন ও স্টিকার লাগানোর কাজ শুরু করে তারা। এরপর থেকে তাদের কাজের পরিধি বাড়তে থাকে।
কয়েক’শ গাড়ি চালকের হাতে তারা তুলে দেয় হ্যান্ড সেনিটাইজার, মাস্ক। পথচারীদের হাতেও তুলে দেওয়া হয় এসব সুরক্ষাসামগ্রী।
নগরীর বায়েজিদ থানা এলাকার পাহাড়ে ছিন্নমূল বস্তি, জালালাবাদ কাঠাল বাগান, লালখান বাজার, টাইগারপাস ও দেওয়ানহাট এলাকার খেটে-খাওয়া মানুষের পাশাপাশি সীতাকুণ্ডের পাহাড়ি অঞ্চল ও ভাটিয়ারীতেও এই সংগঠনটির পক্ষ থেকে পৌঁছে দেওয়া হয় খাদ্যসামগ্রী।
সাধারণ ছুটিতে ক্ষতিগ্রস্ত মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের ঘরে ঘরেও চলে যায় স্মাইল বাংলাদেশের সহযোগিতার হাত। ফেসবুক পেইজে মেসেজ দিলেই ওই ঠিকানায় হাজির হচ্ছে তারা খাদ্যসামগ্রী নিয়ে।
রমজানের শুরু থেকে স্মাইল বাংলাদেশ বিভিন্ন হাসপাতাল ও পথচারীদের মাঝে ইফতার বিতরণ করছে নিয়মিত। এছাড়া সংগঠনটির সদস্যদের ২০টি মোটরসাইকেল রক্তদাতাদের পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করতে নিয়োজিত রয়েছে করোনা পরিস্থিতিতে।
এমএফও