দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি নিয়ে নাটক, সরে দাঁড়িয়ে মুখ লুকালেন ৪ সদস্য

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুমোদিত ৯ সদস্যের নবগঠিত দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি গঠন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। দুদক নীতিমালা ও বিধিবিধান অনুসারে কমিটি গঠিত না হওয়ায় নবগঠিত কমিটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বইছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। এর জের ধরে ৯ সদস্যের কমিটি থেকে দেশের আলোচিত এক জঙ্গির ভাইসহ চারজন পদত্যাগ করেছেন।

পদত্যাগ করা এই চারজন হলেন একেএম মাঈনুদ্দিন, কেএম সালাহ উদ্দিন কামাল, মঞ্জু ভট্টাচার্য্য ও মুসলিমা খানম। ইতিমধ্যে তারা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পরিচালক উত্তম কুমার মন্ডল বলেন, ‘বাঁশখালী উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির আপত্তিকর বিষয়গুলো জেনেছি। লিখিত অভিযোগও পেয়েছি। শুনেছি কয়েকজন পদত্যাগও করেছেন। তারপরও ভবিষ্যতে যাতে এ রকম আপত্তিকর কমিটি না হয় তা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

দুদক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাঁশখালী পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়নের সুশীল সমাজের মতামত যাচাই-বাছাই করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রস্তাবনা, থানার ওসির তদন্ত প্রতিবেদন এবং মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির মতামত নিয়ে চট্টগ্রাম জেলার দুদক কর্মকর্তাদের সুপারিশসহ দুদক কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠানো ব্যক্তিরা কমিটির অর্ন্তভুক্ত হতে পারেন। অথচ ওই কমিটিতে মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিকসহ উল্লেখযোগ্য কাউকে রাখা হয়নি।

গত বছরের কমিটির সহ-সভাপতি পদে থাকা বাঁশখালী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা অসিত সেনকেও ওই কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। একজন মুক্তিযোদ্ধাকে বাদ দিয়ে কমিটিতে এমন বিতর্কিত লোকের স্থান হওয়াটা জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এছাড়া গত কমিটির সভাপতি তাপস কুমার নন্দীকে পদাবনতি ঘটিয়ে নতুন কমিটির সহ-সভাপতি করা হয়েছে। অথচ এ পদে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা অসিত সেন। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির মতামত না নিয়ে দেশের আলোচিত বহু মামলার পলাতক আসামি এক জঙ্গির ভাইকেও কমিটিতে সদস্য করা হয়েছে।

৯ সদস্যের কমিটিতে শুধু সাধনপুর ইউনিয়নের ব্যক্তি রয়েছে ৫ জন। তারা হলেন সভাপতি শেখর দত্ত, সহসভাপতি তাপস কুমার নন্দী, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন, সদস্য পদে কেএম সালাহ উদ্দিন কামাল ও মঞ্জু ভট্টাচার্য্য।

এছাড়া নবগঠিত কমিটিতে বাণীগ্রাম-সাধনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম মাঈনুদ্দীন ১ নম্বর সদস্য এবং ওই স্কুলের সভাপতি কেএম সালাহ উদ্দিন কামালকে ৩ নম্বর সদস্য করা হয়েছে। কেএম সালাহ উদ্দিন কামাল হচ্ছে জামায়াত-শিবিরঘনিষ্ঠ ফেসবুক গ্রুপ বাঁশেরকেল্লার ৫৪টি ভুয়া আইডির এডমিন এবং ছাত্রশিবিরের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কেএম জিয়াউদ্দিন ফাহাদের ভাই। জিয়াউদ্দিন ফাহাদ প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্নজনকে হত্যার হুমকি দিয়ে তা বাঁশেরকেল্লার ৫৪টি ভুয়া আইডির মাধ্যমে প্রচার করে ২০১৫ সালের মার্চ মাসে ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। পরে গোপনে জামিনে বেরিয়ে তিনি কাতার চলে যান।

দেখা গেছে, নতুন কমিটিতে চট্টগ্রাম বাশার গ্রুপ কোম্পানিজের কর্মকর্তা মোরশেদ আহমেদকে সহসভাপতি এবং ওই গ্রুপের আরেক কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহাবউদ্দিন সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। বাঁশখালীতে কোথাও প্রেসক্লাবের অফিস না থাকলেও প্রেসক্লাবের কথিত ঠিকানা ব্যবহার করে সদস্য হয়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষিকা মঞ্জু ভট্টাচার্য্য এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের স্বাস্থ্য সহকারী মুসলিমা খানম।

এ বিষয়ে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, ‘বাঁশখালী উপজেলা দুর্নীতি কমিটি গঠন করা হয়েছে চট্টগ্রাম জেলা দুদক থেকে। কিভাবে গঠন করা হয়েছে আমি বিস্তারিত জানি না। তবে কমিটি নিয়ে আপত্তি ওঠায় কয়েকজন পদত্যাগও করেছেন।’

বাঁশখালী থানার অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) মোহাম্মদ রেজাউল করিম মজুমদার বলেন, ‘দুদক থেকে কমিটির সদস্যদের নাম-ঠিকানা ঠিক আছে কিনা প্রতিবেদন চেয়েছিল। নাম-ঠিকানার ভিত্তিতে প্রতিবেদন দিয়েছি। এর বেশি কিছু প্রতিবেদনে দেওয়া হয়নি এবং চাওয়াও হয়নি।’

এসএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!