দুর্গাপূজার যজ্ঞ অনুষ্ঠান ভণ্ডুল করে দিলো খোদ হিন্দু নেতারাই—সাধুদের মারধরের চেষ্টা

মহালয়ার মাধ্যমেই শুরু হয় হিন্দুদের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার। আর হিন্দুশাস্ত্রমতে বোয়ালখালীর মেধসমুনি আশ্রমেই সর্বপ্রথম হয়েছিলো দুর্গাপূজা। প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও সেখানে মহালয়ার দিন যজ্ঞের মাধ্যমে সূচনা হয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। কিন্তু এবার দুর্গাপূজার স্মৃতি বিজড়িত সেই তীর্থ মেধস আশ্রমেই ঘটল অধর্ম।

আলোচনা সভায় অসুবিধার কারণে অর্ধেক যজ্ঞে পানি ঢেলে বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ এসেছে খোদ হিন্দু নেতাদের বিরুদ্ধেই। শুধু যজ্ঞ বন্ধ নয়, এই কাজের বিরোধিতা করায় সাধুদের অশ্রাব্যভাষায় গালাগালি ও মারধরের চেষ্টাও করে আনোয়ারার সদর ৭নং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অসীম কুমার দেব। আর শ্যামল পালিত ও অসিম চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় বিভিন্নজনকে ভয় ও চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়।

বুধবার(৬ অক্টোবর) মহালয়ার যজ্ঞে পানি ঢেলে নষ্ট করার অপরাধে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে চলছে ক্ষোভ ও উত্তেজনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে এই কাজের নিন্দার ঝড় ও অপরাধীদের শাস্তির দাবি। অপরাধীরা ক্ষমা না চাইলে আন্দোলন ও আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে।

কি হয়েছিলো সেদিন
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, প্রতিবছরই মেধসমুনির আশ্রমে মহালয়ার দিন যজ্ঞ ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এবছর তীথি অনুসারে যজ্ঞ সকাল ৮টা থেকে দুপুর দেড়টায় শেষ হওয়ার কথা ছিলো। আর আলোচনা সভা শুরুর কথা ছিলো দুপুর ১ টায়। কিন্তু সভার প্রধান অতিথি চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক যেতে কিছুটা দেরি হওয়ায় আলোচনা সভা দেড়টায় শুরু হয়। তখন যজ্ঞও প্রায় শেষের দিকে।

কিন্তু যজ্ঞ ও আলোচনা সভার স্থান একই জায়গায় হওয়ায় যজ্ঞের ধোঁয়ায় আলোচনা সভা পরিচালনা করতে সমস্যায় পড়েন হিন্দু নেতারা। তাই সাধুদের যজ্ঞ বন্ধ করার জন্য দুইবার মৌখিকভাবে নির্দেশ দেন পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামল পালিত ও অসীম চেয়ারম্যান। কিন্তু শেষ পর্যায়ে থাকায় সন্ন্যাসীরা আর মাত্র ১০ মিনিট সময় চান শ্যামল, অসীমদের কাছে। কিন্তু তাতে আলোচনা সভার আলোচকবৃন্দের দেরী হয়ে যাওয়ার ভয়ে ক্ষোভে হিন্দু নেতাদের নির্দেশেই একজন একবালতি পানি নিয়ে যজ্ঞের মাঝখানে ঢেলে যজ্ঞ নষ্ট করে দেয়। যজ্ঞে ব্যবহৃত ধর্মীয় জিনিসপত্র নষ্ট করে ফেলা হয় এসময়।

এমন কাজের বিরোধীতা করায় সাধুসন্ন্যাসীদের গালাগালি ও মারধরের চেষ্টা করে সাধারন সম্পাদক অসীম চেয়ারম্যান। এবং সাধুদের বেশি কথা বললে তুলে নিয়ে আসারও হুমকি দেন তিনি। এমন একটি ভিডিও হাতে এসেছে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের কাছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিন্দু মহাজোট চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়ক সুমন পাল বলেন, ওনারা হিন্দু নেতা, হিন্দু ধর্মকে প্রচার ও প্রসারের জন্যই ওনারা দায়িত্ব নিয়েছেন, কিন্তু ওনাদের কাছে আমি প্রশ্ন রাখতে চাই ধর্মের কল্যাণে যজ্ঞ আগে নাকি আলোচনা সভা আগে। ওনারা ধর্ম করবেন নাকি বড় বড় মানুষদের তেলবাজি করবেন। যজ্ঞে পানি ঢেলে কখনোই কেউ হিন্দু নেতা হতে পারে না। শুক্রবারের মধ্যে যদি ওনারা ক্ষমা না চান তবে শনিবার থেকে ওনাদের বিরুদ্ধে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।

তবে সবার সব অভিযোগ ও ভিডিও ফুটেজকে মিথ্যা দাবি করে অভিযুক্ত শ্যামল পালিত বলেন, এরকম কোন ঘটনাই ঘটেনি, এরকম কোন ভুল বুঝাবুঝিরও সৃষ্টি হয়নি। তাদের যজ্ঞ তারা করেছে, আমাদের আলোচনা সভা আমরা করেছি, সুতরাং এখানে যজ্ঞ বন্ধ করার কোন ঘটনা ঘটেনি।

ভিডিও ফুটেজ ও ছবির ব্যাপারে তিনি বলেন এগুলো মিথ্যা, সব মিথ্যা বানোয়াট। শ্যামল পালিতের সুরে সুরে অসীমও জানালেন একই কথা। তিনি বলেন, এরকম কিছু হয়নি। উনি সাধুদের সাথে কোন কথাও বলেননি। তবে যজ্ঞ বন্ধের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, কারা যজ্ঞে পানি ঢেলেছি আমি জানি না। আমাদের কেউ ঢালেনি। তবে সাধুর সাথে অসভ্য আচরণ করা ভিডিওর মানুষটি যে অসীম চেয়ারম্যান তা নিশ্চিত হওয়া গেছে একাধিক জনের সাথে কথা বলে। তারা সকলেই নিশ্চিত করেছেন যে সাধুদের মারতে যাওয়া ভিডিওর লোকটাই অসিম চেয়ারম্যান।

নিজেদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ বানোয়াট ও মিথ্যা দাবি করলেও তা মানতে নারাজ ক্ষুব্ধ সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। তারা বলছেন, অভিযুক্তরা নিজেদের পিঠের ছাল বাঁচাতেই এমনটা বলছেন। তারা যদি ক্ষমা না চায় তবে দ্রুতই তাদের বিরুদ্ধে সনাতনী সম্প্রদায় ব্যবস্থা নিবে বলে জানান একাধিক হিন্দু নেতা। এর আগেও মন্দিরের জায়গা দখলের অভিযোগে তার এলাকা আনোয়ারাতেই মানববন্ধন করা হয় অসীমের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে চট্টগ্রাম প্রতিদিন।

কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!