দুটি কক্ষ ঘিরে স্নায়ুযুদ্ধে চট্টগ্রাম মেডিকেল ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ

দুটি কক্ষ ঘিরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের পুরোনো দ্বন্দ্ব আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এ নিয়ে এক গ্রুপের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অভিযোগ তুলেছে অন্য গ্রুপ।

অভিযোগ উঠেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রধান পুরুষ ছাত্রাবাসের আবাসন কক্ষ দলীয় কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ছাত্রাবাসের বি-ব্লকের একটি কক্ষ গ্রন্থাগার হিসেবে ঠিক করা ছিল। অন্যটি ছিল সাধারণ শিক্ষার্থীদের থাকার কক্ষ। কিন্তু দুই কক্ষই ব্যবহার করা হচ্ছে চমেক ছাত্রলীগের দলীয় কর্মকাণ্ড ও আড্ডার কাজে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ছাত্ররাজনীতি এখন দুই ধারায় বিভক্ত। এর একটি অংশ সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরের অনুসারী। অন্য অংশটি শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী। ছাত্রশিবিরকে ক্যাম্পাস থেকে হটিয়ে দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণে একাধিপত্য ছিল নাছির অনুসারী ছাত্রলীগের। কিন্তু গত বছর থেকে ক্যাম্পাসের সেই নিয়ন্ত্রণে ভাগ বসায় নওফেল অনুসারীরা। সেই থেকে নওফেল অনুসারীরা আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে বেশি সক্রিয় থাকলেও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি ও ছাত্রসংসদ রয়েছে নাছির অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণে।

চট্টগ্রামের চকবাজার থানার চট্টেশ্বরী রোডে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের প্রধান ছাত্রাবাসটি অবস্থিত। এই ছাত্রাবাসের দুটি ব্লক রয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাসের বি-ব্লকের দুটি কক্ষ চমেক আ জ ম নাছির অনুসারীরা দলীয় কাজে ব্যবহার করেন। ১৬ থেকে ১৮ জন শিক্ষার্থী এ দুই কক্ষে থাকতে পারেন।

নওফেল অনুসারীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, চমেক ছাত্রাবাসের গ্রন্থাগার কক্ষটি পড়াশোনার জন্য নির্ধারিত থাকলেও তাতেও আড্ডা জমান আ জ ম নাছির অনুসারীরা। এ নিয়ে তারা হোস্টেল সুপার বরাবরে লিখিত অভিযোগও করেছেন। আর এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে আ জ ম নাছির অনুসারী গ্রুপটি।

কক্ষ ঘিরে বর্তমানে দুই গ্রুপের পুরোনো দ্বন্দ্ব আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

জানা গেছে, এই দুই কক্ষের মধ্যে একটি কক্ষ গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহার করা হলেও সেখানে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার কোনো সুযোগ নেই। কারণ ওই কক্ষটি আ জ ম নাছির অনুসারীরা দলীয় মিটিং ও আড্ডার জন্য দখল করে রাখেন সবসময়ই। ছাত্রদের থাকার পাশের কক্ষটিতে টেবিল-চেয়ার-বেডের বদলে রয়েছে সোফা। দেয়ালে টাঙ্গানো আছে এলইডি টিভি। মেঝেতে বিছানো রয়েছে কার্পেট।

এমন দশায় ক্ষিপ্ত হয়ে নওফেল অনুসারী গ্রুপটি সম্প্রতি হোস্টেল সুপার ডা. রেজোয়ান জাহানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সেখানে বলা হয়, যেখানে কলেজ হোস্টেলে সিট সংকটে ছাত্রদের করুণ অবস্থা, সেখানে কক্ষ দখল করে দলীয় কাজের নামে গল্প-গুজব ও আড্ডা দিয়ে সময় কাটাচ্ছেন চমেক ছাত্রলীগের বর্তমান হাবিব-শিমুল কার্যকরী কমিটির সদস্যরা। কক্ষটির পাশের গ্রন্থাগার কক্ষটিও দলীয় কাজে ব্যবহারের নামে আড্ডার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে চমেক ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন শিমুল চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার পরীক্ষার জন্য আমি ব্যস্ত ছিলাম। এ দুটো কক্ষ বছরের পর বছর ধরে দলীয় কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে। উড়ে এসে জুড়ে বসে অভিযোগ দিলেই তো অভিযোগ সত্য হয়ে যায় না। দেখি ওরা কী করে? ওদের কতটুকু ক্ষমতা?’

এ বিষয়ে হোস্টেল সুপারিন্টেডেন্ট ডা. রেজোয়ান জাহান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার কাছে অভিযোগটি আসার পর কক্ষটিতে তালা দিয়ে রাখতে বলেছি। কিন্তু আদৌ তালা দেওয়া হয়েছে কিনা আমি জানি না। এটা খোঁজ নিয়ে দেখবো।’

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২ মার্চ চমেকের প্রধান ছাত্রাবাসে সিট দখল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ৫ জন আহত হন। সংঘর্ষে জড়ানো দুই গ্রুপই ঘটনার জন্য পরস্পরকে দায়ী করে।

আইএমই/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!