‘দুজনার দুটি পথে’ চলছেই চট্টগ্রামের যুবলীগ, দূরত্ব বাড়ছে আরও

চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের দুই গ্রুপ কোনোভাবেই যেন এক হতে পারছে না। উল্টো ক্রমেই তাদের মধ্যে বাড়ছে দূরত্ব। সবশেষ চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকীতেও সেই একই চিত্র দেখা গেল।

শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চুকে বাদ দিয়েই এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্মরণসভার আয়োজন করেন চার যুগ্ম আহ্বায়ক। এই সভার সভাপতিত্ব করেন মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা।

মহিউদ্দিন চৌধুরীর জীবন থেকে রাজনৈতিক দৃঢ়তার শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এতে বক্তারা বলেন, ‘মহিউদ্দিন চৌধুরী জাতীয়তাবাদী, দেশপ্রেমিক নেতা ছিলেন। সাম্রাজ্যবাদী চাপ, ক্ষমতার হাতছানি, জুলুম-নির্যাতনের ভয়, অর্থবিত্তের প্রলোভন কোনো কিছুই তাঁর সংগ্রামী চেতনাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। দেশের ও চট্টগ্রামের স্বার্থবিরোধী যেকেনো পদক্ষেপের তিনি প্রতিবাদ করেছেন। চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনার জন্য দেওয়ার উদ্যোগ তিনি রুখে দিয়েছিলেন।’

নগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুল হক সুমনের পরিচালনায় আলোচনায় অংশ নেন যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ ও দিদারুল আলম দিদার, সদস্য আনোয়ার হোসেন আজাদ, মাহাবুব আলম আজাদ, নেছার আহমেদ, আব্দুল আউয়াল, ওয়াহিদ হাসান, শেখ নাছির আহমেদ, দেলোয়ার হোসেন দেলু, মোজাম্মেল হোসেন নান্টু, আব্দুল হাই, কাজলপ্রিয় বড়ুয়া, মাহবুবুর রহমান মাহফুজ, মুজিবুর রহমান মুজিব, শাকিল হারুন, হোসেন সরওয়ার্দী সরওয়ার, খায়রুল বাশার তসলিম, মাইনুল ইসলাম, শাহীন সরওয়ার প্রমুখ।

জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১৩ জুলাই মহানগর আওয়ামী লীগের আমৃত্যু সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী মহিউদ্দিন বাচ্চুকে আহ্বায়ক এবং দেলোয়ার হোসেন খোকা, দিদারুল আলম, ফরিদ মাহমুদ ও মাহবুবুল হক সুমনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের ১০১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় যুবলীগ।

তিন মাসের জন্য গঠিত ওই আহ্বায়ক কমিটি সাত বছর পার করলেও মহানগর যুবলীগের অন্য কোনো নেতা পাননি পদ-পদবির পরিচয়। মহানগর যুবলীগের এই পাঁচ শীর্ষ নেতার বিভক্তির প্রভাব আছে থানা এবং ওয়ার্ড পর্যায়েও। গত বছর লালদীঘিতে নগর যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পণ্ড হয়েছিল রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘ বিরোধের মধ্যে গত একমাসেই চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের দু দুটি আয়োজন পালিত হয়েছে আলাদাভাবে। এর মধ্যে একটি আয়োজন নিয়ে উত্তেজনাও তৈরি হয়েছিল।

গত ১১ নভেম্বর নগরীর চট্টেশ্বরী রোডে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভার আয়োজন করেন মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু। অন্যদিকে একই দিন বিকেলে একই কমিটির চার যুগ্ম আহ্বায়ক মিলে আলাদা আলোচনা সভার আয়োজন করেন স্টেশন রোডের সৈকত কনভেনশন হলে। এর আগেও চার যুগ্ম আহ্বায়ক মিলে মহিউদ্দিন বাচ্চুকে বাদ দিয়ে ২২ অক্টোবর আয়োজন করেন শেখ রাসেলের জন্মদিনের অনুষ্ঠান। বিনা দাওয়াতে সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে হট্টগোলের চেষ্টা করেন মহিউদ্দিন বাচ্চু। এ সময় সভা সংক্ষিপ্ত করে সংঘাত এড়ানোর চেষ্টা করেন ফরিদ মাহমুদরা।

এই ধরনের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের জন্য মহিউদ্দিন বাচ্চুর একক ক্ষমতা প্রদর্শনের মানসিকতা, সংগঠনের রীতি-নীতি লঙ্ঘন, আধিপত্য বিস্তার, পদ-পদবি ব্যবহার করে কৌশলে ক্ষমতার অপব্যবহারকে দায়ী করছেন বিদ্রোহী চার যুগ্ম আহবায়ক।

অন্যদিকে মহিউদ্দিন বাচ্চু বলছেন, কেন ও কী কারণে এভাবে আলাদা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে সেটাই জানেন না তিনি।

এ বিষয়ে মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ সে সময় চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেছিলেন, ‘নগর যুবলীগের আহ্বায়ক সাহেব দীর্ঘদিন যুবলীগের ব্যানারে নিজে নিজে কর্মসূচি পালন করেন। আমরা সেখানে দাওয়াত পাই না। তাই যাই না। এর আগেও আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন, আওয়ামী লীগের প্রয়াত প্রেসিডিয়াম সদস্য আতাউর রহমান খান কায়সারের মৃত্যুদিবসসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছি।’

যুগ্ম আহ্বায়কদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, ‘দলীয় কর্মসূচির দাওয়াত পেয়েই আমি কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছি। আর আলাদা প্রোগ্রামের বিষয়টি হলো করোনায় আমি নিজ উদ্যোগে ত্রাণ দিয়েছি। দলের নির্দেশনাও ছিল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। তখন অনেকেই ঘর থেকে বের হননি। আমার কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেননি। এটাতে আমি দোষের কিছু দেখি না।’

এআরটি/এএইচ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!