দুই সহোদরের চাঁদাবাজির রাজত্ব পটিয়ায়, বাড়ি বানাতে গেলেও লাগে চাঁদা

সর্বশেষ ১২ লাখ টাকা ছিনিয়ে সরকারি কর্মচারীর গায়ে ৬ কোপ

চাঁদাবাজি, অপহরণ, হত্যাচেষ্টা ও মাদকসহ অর্ধডজন মামলার আসামি হয়েও প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠেছে চট্টগ্রামের পটিয়া কুসুমপুরা ইউনিয়নের দুই সহোদরের বিরুদ্ধে। এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে পালিত সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তারা প্রকাশ্যে এসব অপকর্ম করছেন বলে জানা গেছে।

পটিয়ার কুসুমপুরা ইউনিয়নের ‘ত্রাস’ দুই সহোদর রেজাউল করিম ওরফে কানা করিম (৩০) ও নুরুল আজিম ওরফে ইয়াবা বাচা (২৫) পূর্ব মনসা এলাকার মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে।

অভিযোগ আছে, এলাকায় কেউ জমি ক্রয় বা বাড়ি নির্মাণ করতে গেলে তাদের বাধার মুখে পড়তে হয়। দিতে হয় মোটা অঙ্কের চাঁদা। আর চাঁদা দিতে রাজি না হলে হত্যা ও অপহরণের হুমকি দিতে থাকে।

শুধু তাই নয়, কুসুমপুরা ইউনিয়নসহ আশপাশের এলাকায় ইয়াবা ‘ডন’ হিসেবে পরিচিত এ সহোদর। গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী মাদক সিন্ডিকেট। এছাড়া পুরো ইউনিয়নজুড়ে মাদক সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণও তাদের হাতে। তাদের মাদক ব্যবসায় কেউ বাধা দিতে চাইলে তাদের গড়ে তোলা কিশোর গ্যাংয়ের মাধ্যমে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। এমনকি আধিপত্য বিস্তারের জানান দিতে সশস্ত্র মহড়াও দেওয়া হয়। এভাবে তারা দলবল নিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব করছে।

জানা গেছে, ভুক্তভোগী মো.শফি (৪৫) একই এলাকার মো. খুল্ল্যা মিয়ার ছেলে। তিনি সাব রেজিস্ট্রেশন সদর রেকর্ড রুমে নকলনবিশ পদে কর্মরত আছেন। গত ২০২০ সালে তার গ্রামের বসত বাড়িতে একটি পাকাঘর নির্মাণ করে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। ঘরটির নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকেই শফির কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে অভিযুক্ত দুই সহোদর। শফি চাঁদা দিতে রাজি না হলে তাকে অপহরণ ও হত্যার হুমকি দিতে থাকে। এরপর শফি জীবনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বাকলিয়া, কোতোয়ালী, পটিয়া থানায় ৪টি সাধারণ ডায়েরি করেন। সর্বশেষ ওই বছরে র‍্যাব সদর দপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরও একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

এসব অভিযোগে ক্ষুব্ধ হয়ে চলতি বছরের ১৫ জুলাই পটিয়া গ্রামের বাড়ি থেকে অফিসে আসার পথে ফিরিঙ্গী বাজার অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন অফিসের সামনে থেকে শফিকে তুলে নিয়ে যায়। পরে নেভাল এলাকার একটি কলোনিতে  নিয়ে গলাটিপে হত্যার চেষ্টা করে তাকে। তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন চলে আসলে, তাকে ফেলে পালিয়ে যায় রেজাউল ও আজিমসহ তাদের দলবল। এ ঘটনায় পাঁচজনকে আসামি করে কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন শফি।

মামলার আসামিরা হলেন কুসুমপুরা ইউনিয়নের পূর্ব মনসা এলাকার মো. রেজাউল করিম ওরফে কানা করিম (৩০), নুরুল আজিম বাচা ওরফে ইয়াবা বাচা (২৬), এনামুল করিম (২৮), পটিয়া গোরনখাইন এলাকার গিয়াস উদ্দীন (৩৭) ও মো.গোলাপ।

পরে এ মামলায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে তারা মামলা তুলে নিতে পুনরায় হুমকি দিতে থাকেন শফিকে। চলতি গত ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় পাকা ঘরের টাইলস কেনার জন্য নগদ ১২ লাখ ৪২ হাজার একটি ব্যাগ নিয়ে শহরে যাওয়ার জন্য শান্তিরহাট থেকে একটি লোকাল বাসে ওঠেন শফি। সকাল ১১টা ৪০মিনিটের দিকে বাসটি শিকলবাহা ভেল্লাপাড়া ব্রিজের পশ্চিম পাশে বালুরটাল এলাকায় পৌঁছলে গাড়ি অবরোধ করে ফাঁকা গুলি করে আসামির্। এতে বাসের ড্রাইভার ও যাত্রীরা পালিয়ে গেলে শফিকে ছুরিকাঘাত ও কুপিয়ে টাকার ব্যাগ নিয়ে আসামিরা পালিয়ে যায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছে শফি।

এ ঘটনায় মো. রেজাউল করিম ওরফে কানা করিমকে প্রধান আসামি করে সাতজনের নাম উল্লেখ করে এবং ৬-৭ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে কর্ণফুলী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন শফি।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শফি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘তারা তিন ভাই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তাদের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। এলাকায় কেউ জায়গা জমি ক্রয় বা ঘর নির্মাণ করতে গেলে বড় অংকের চাঁদা দাবি করে তারা। চাঁদা দিতে রাজি না হলে হত্যা ও গুম করার হুমকি দেয়। আমি চাঁদা না দেওয়ায় আমাকে দু’বার হত্যা ও গুমের চেষ্টা করে। প্রথমবার ব্যর্থ হলে দ্বিতীয়বার চলন্ত গাড়ি থেকে নামিয়ে কুপিয়ে আমার কাছে থাকা নগদ ১২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘অর্ধডজন মামলা আসামি হওয়ার পরও তারা টাকার জোরে পুলিশের চোখের সামনেই নিয়মিত চলাফেরা করছে এবং নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল মাহমুদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সোমবার রাতে অভিযান চালানো হয়েছে। আসামিরা পলাতক রয়েছে। দ্রুত গ্রেপ্তারের জন্য আমাদের পুলিশের টিম কাজ করছে।’

এএইচ/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!