দুই মাওলানার বিরোধে নাজিরহাট বড় মাদ্রাসায় হঠাৎ উত্তেজনা

দুই দিন এগিয়ে আনা হল শূরা বৈঠক

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির নাজিরহাট জামিয়া আরাবিয়া নছিরুল ইসলামে (বড় মাদ্রাসা) দুই গ্রুপের মধ্যে হঠাৎ ছড়িয়ে পড়েছে উত্তেজনা। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। শনিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল থেকে উত্তেজনা শুরু হলে সেখানে একপর্যায়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। দুপুরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় চারজন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, শনিবার (২৪ অক্টোবর) বিকেল তিনটার দিকে একপক্ষ মাদ্রাসার মাঠে অবস্থান নেয়। অপরপক্ষ মূল ভবনের দ্বিতীয় তলায় অবস্থান নিয়ে মিছিল করতে থাকে। মাদ্রাসার মূল ফটকে এ সময় অবস্থান নেয় র‌্যাব ও পুলিশ।

নাজিরহাট বড় মাদ্রাসায় শূরা কমিটির আসন্ন বৈঠক এবং মাদ্রাসার পরিচালক পদ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতাকে কেন্দ্র করে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

দুই মাওলানার বিরোধে নাজিরহাট বড় মাদ্রাসায় হঠাৎ উত্তেজনা 1

এদিকে জানা গেছে, বুধবার (২৮ অক্টোবর) শূরা বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ওই বৈঠক দুই দিন এগিয়ে এনে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

জানা গেছে, আগামী সোমবার (২৬ অক্টোবর) অনুষ্ঠিতব্য শূরা কমিটির বৈঠক এবং মাদ্রাসার পরিচালক পদ নিয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ‘মুহতামিম’ দাবিদার মাওলানা সলিমুল্লাহ এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। এ সময় ছাত্রদের একাংশ মাওলানা সলিমুল্লাহকে ‘মুহতামিম মানি না, শূরা চাই, শূরা চাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে ছাত্রদের একটি অংশ স্লোগানধারীদের সরিয়ে দিতে চাইলে উভয়পক্ষ হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, মাদ্রাসার পরিচালক বা মুহতামিমের পদ নিয়ে মাওলানা সলিমুল্লাহ ও মাওলানা হাবিবুর রহমান কাসেমীর মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। সলিমউল্লাহ মরহুম আহমদ শফির অনুসারী। অন্যদিকে হাবিবুর রহমান হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীর অনুসারী।

জানা গেছে, নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার মুহতামিম নিয়োগের বিষয়ে আগামী সোমবার (২৬ অক্টোবর) শূরা কমিটির সভা হওয়ার কথা রয়েছে। মাদ্রাসাটি ১৩ সদস্যবিশিষ্ট শূরা কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে।

মাদ্রাসায় উত্তেজনার বিষয়ে জানতে চাইলে হাটহাজারী সার্কেলের পুলিশের এসপি আবদুল্লাহ আল মাসুম বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দুপুরের দিকে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। তবে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে।

জানা গেছে, এর আগে সোমবার (১৯ অক্টোবর) ফটিকছড়ির সাংসদ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী এবং বাবুনগর মাদ্রাসার মুহতামিম মহিবুল্লাহ বাবুনগরী নাজিরহাট মাদ্রাসায় শূরা কমিটির সভা ডাকার উদ্যোগ নেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মাদ্রাসার মুহতামিম শায়খুল হাদিস শাহ মোহাম্মদ মারা যাওয়ার পর তার পদে মাওলানা সলিমুল্লাহকে নিয়োগ দেন আল্লামা শফী। আল্লামা শফী ওই সময় এক ভিডিওবার্তায় মাওলানা সলিমুল্লাহকে নাজিরহাট মাদ্রাসার মুহতামিম নিয়োগের ঘোষণা দেন। এ নিয়ে হেফাজতের সাবেক শীর্ষ নেতা আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সঙ্গে আল্লামা শফীর বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নেয়। আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীর মামা। তিনি বর্তমান ফটিকছড়ি উপজেলার দৌলতপুর বাবুনগর মাদ্রাসার মুহতামিম এবং নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার অন্যতম শূরা সদস্য। এই পক্ষটি মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমীকে মুহতামিম হিসেবে নিয়োগ দিতে চাইছেন বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, ‘মৃত্যুর আগে হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা আহমদ শফী নাজিরহাট মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মাওলানা সলিমুল্লাহকে নাজিরহাট মাদ্রাসার পরিচালক নিয়োগ দেন। যা নিয়মবহির্ভুত। এতে এলাকাবাসী উত্তেজিত ও বিক্ষুব্ধ।’

এএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!