দুই মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা : আটকে আছে ঝুঁকিপূর্ণ মৎস্য অবতরণ সেডেট কাজ

এস এম আরোজ ফারুক ॥

কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র! ঠিক যেন দাড়িয়ে রয়েছে দুই নৌকায় পা দিয়ে। কয়েক বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাড়িয়ে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এই ভবনটি। জেলার বৃহত এই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ভবন বা সেডটি মৎস্য ও প্রানী সম্পদ মন্ত্রনালয়ের অধিনে হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিনেও রয়েছে ভবনটির অংশ বিশেষ। তাই দুই মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতার কারনে ভবনটি ভাঙ্গার কাজ শুরু হচ্ছে না।

av

জানা যায়, ২০১২ সালের আকস্মিক বন্যা ও পাহাড়ী ঢলের কারণে মৎস্য অবতরন ভবনের ব্যপক ক্ষতি হয়। এর পর থেকে ৪ বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে ভবনটি। জেলা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ভবনটি যে কোন মূহুর্তে ধ্বসে পড়ার আশঙ্কা করছেন মৎস শ্রমিকরা।

 

কক্সবাজার মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন সুত্রে জানা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ভেঙ্গে ফেলে ঐ স্থানে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনেক আগে থেকেই মন্ত্রনালয়ে চিঠি চালাচালি করছে। কিন্তু কয়েকমাস আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক সিসি ব্লক ডাম্পিং ও প্লেসিং এর কাজ শুরু হয়ে এখনো তা শেষ হয়নি। যদিও এই কাজটি শেষ করার কথা ছিল বর্ষা মৌসুমের আগেই। বর্ষা শুরু হয়ে তা শেষও হয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত ব্লক ফেলার কাজ শেষ করতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। যার কারনে মৎস্য ভবনটি ভেঙ্গে ফেলে পূনরাই নির্মাণ কাজ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না।

fishary-ghat1

ফিশারীঘাটে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বাঁকখালী নদীর কিনারে গড়ে উঠা ‘৬ নং ফিশারীঘাট’ নামে খ্যাত জেলার একমাত্র ‘মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র’ এখন বড় ধরণের ঝুঁকির মুখে। দু’তলা বিশিষ্ট ভবনটির নিচের মাটি, পিলার ও সিঁড়ি ভেঙ্গে গেছে। পুরো ভবন জুড়ে শুধুই ফাটল। খসে পড়ছে ফাটলের কিছু কিছু অংশ। এ নিয়ে মৎস্য ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ হওয়ার পাশাপাশি আশঙ্কাবোধও করছে। দেয়ালে একের পর এক ফাটল, ভবনের পিলারগুলোর নীচের মাটি সরে যাওয়া, সিঁড়ীর ভাঙ্গন সব মিলিয়ে চরম ঝুঁকিতে পড়েছে ‘কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র।’ মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন কক্সবাজার ফিশারীঘাটে কাজ করে যাচ্ছে হাজারো মৎস্য ব্যবসায়ীরা। চার বছর আগে মূল ভবনের দু’তলার ৩৪টি আড়তঘর পরিত্যক্ত ঘোষনা করে তা খালি করে ভবন ছাড়ার জন্য ব্যবসায়ীদের নোটিশ দিলেও ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কাজে এখনো দোতালায় যাওয়াআসা করছেন।

 

কক্সবাজার সদর, খুরুশকুল, টেকনাফ, মহেশখালী, সোনাদিয়া, কুতুবদিয়া সহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলথেকে কক্সবাজার মৎস্য অবতরন কেন্দ্রে প্রতিদিন প্রায় ৬ থেকে ৮ হাজার মৎস্য সংশ্লিষ্ঠ সহ বহিরাগত মানুষের আনাগোনা থাকে।

 

 

কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য সমবায় সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, জেলার প্রায় ২০ হাজার মৎস্য সংশ্লিষ্ঠ পরিবারের উপার্যনের একমাত্র উৎস এই অবতরন কেন্দ্র। ঝুকিঁপূর্ন এই ভবনটি যেকোন সময় ধ্বসে পড়বে আর বেকার হবে অন্তত্য ১৫ হাজার মৎস্য শ্রমিক।

তিনি আরো বলেন, ভবনের পরিস্থিতি চরম ঝুঁকিপূর্ণ। ইতিমধ্যে বাঁকখালী নদীর স্রোতের কারণে পিলারের নিচের মাটি সরে গেছে। এতে ১৩ টি পিলার শূণ্যের উপর দাঁড়িয়ে আছে। একই সঙ্গে পুরো ভবন জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ফাটল। ঝুঁকির্পূণ ভবনের নীচে জড়ো হয় প্রতিদিন কয়েক হাজার ব্যবসায়ী ও ক্রেতা। ভবনটি যে কোন সময় ধ্বসে পড়তে পারে।

ট্রলার মালিক মমতাজ আহম্মদ জানান, সাগর থেকে মাছ আহরণ করে জেলেরা এখানে নিয়ে আসেন। কেন্দ্রে মাছ তোলার জন্য চারপাশে প্রায় ১২ টি সিঁড়ি করা হয়। জোয়ারের পানির ধাক্কায় এসব সিঁড়ি ভেঙ্গে গেছে। এতোদিন কাঠের তৈরী সিঁড়ি দিয়ে কোন রকমভাবে কাজ চললেও বর্তমানে সিসি ব্লক ফেলার কারণে সে সিঁড়িও ভেঙ্গে গেছে অনেক আগে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে কক্সবাজার অবতর কেন্দ্রে মাছধরা ট্রলার আসাও অনেকাংশে কমে যাবে। ফলে সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে ব্লক ফেলা ও ডাম্পিং এর কাজ শেষ হয়েছে বাকি আছে শুধু প্লেসিং এর কাজ। আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করার। মূলত অপ্রতুল বাজেটের কারণে আমাদের কাজে ব্যঘাত ঘটে এবং তা শেষ হতেও দেরি হচ্ছে। যদিও কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল এবছর বর্ষা মৌসুমের আগে কিন্তু পুরো কাজটি শেষ করতে না পারায় ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে।

 

কক্সবাজার মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন এর ব্যবস্থাপক মো: শরিফুল ইসলাম জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ভাঙ্গার জন্য প্রতিমাসেই উচ্চ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের অবহিত করতে চিঠি দেয়া হচ্ছে। ভবনটি ধ্বসে পড়লে কি পরিমান ক্ষতি হবে মন্ত্রনালয়কে সেটি বোঝানোর জন্য চিঠির সাথে ছবিও পাঠাচ্ছি। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ চলার কারনে ভবন ভাঙ্গার কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।

 

দুই মন্ত্রণালয়ের সমন্বীতভাবে কাজ করা সম্ভব হলে হয়তো সেডের কাজ করা যেতো। ব্লক ফেলা ডাম্পিং ও প্লেসিং এর কাজ শেষ হলে তবেই আমরা আমাদের কাজে হাত দিতে পারবো। সেই পর্যন্ত ভবনটি ঝুঁকিতেই থাকবে।

 

তিনি আরো বলেন, ভবনটি এতোটাই ঝুঁকিতে রয়েছে যে কোন মুহুর্তে তা ধ্বসে পড়তে পারে এবং অনেকের প্রাণহানীও ঘটতে পারে। তাই জেলার এই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি দ্রুত সময়ের মধ্যে ভেঙ্গে ফেলে পুন:নির্মাণের কাজ শুরু করা খুব জরুরী।

 

বিশেষ রিপোর্ট :

এ এস / জি এম এম / আর এস পি :::

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!