দুই বলয়ে পদ ভাগাভাগি কর্ণফুলী যুবলীগের দুই ইউনিয়নে

কমিটি ঘোষণা সোমবারে, তারিখ চার মাস আগের

সম্মেলনের ১২ মাস ৪ দিন পর কর্ণফুলী উপজেলার দুই ইউনিয়ন যুবলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করেছে উপজেলা আওয়ামী যুবলীগ। সোমবার (২০ মার্চ) রাত ১০টায় সভাপতি সোলায়মান তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সেলিম হক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন ও জুলধা ইউনিয়ন যুবলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

তবে বিস্ময়করভাবে কমিটি দুটি ঘোষণার তারিখ দেখানো হয় গত বছরের ১ ডিসেম্বর। অথচ ২০২২ সালের ১১ মার্চ জুলধা ইউনিয়ন যুবলীগের সম্মেলন ও একই বছরের ১৫ মার্চ চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন যুবলীগের ত্রি–বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তখন কোনো কমিটিই ঘোষণা করা হয়নি।

কিন্তু সদ্যঘোষিত আংশিক কমিটিতে জুলধা ইউনিয়ন যুবলীগে মো. নুরুল ইসলামকে সভাপতি ও মো. মনির হোসেন ফরহাদ কে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। অন্যদিকে চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটিতে আনোয়ার সাদাত মোবারক কে সভাপতি ও জাবেদ উদ্দিন চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।

জুলধায় ১২ সদস্যের আংশিক কমিটিতে মো. ইসমাইল হোসেন, মোহাম্মদ আব্বাছ, মো. সেলিম মেম্বার, মো. ছাবের ও আবদুস সোবহান কে সহ-সভাপতি করা হয়। এছাড়াও মো. শাহানুর, আবুল মারুফ, ও মিজানুর রহমান কে যুগ্ন সম্পাদক ও মো. ইয়াছিন আহমেদ রুবেল কে সাংগঠনিক সম্পাদক ও মো. শহীদুল ইসলাম বাদশাকে প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক করা হয়।

অন্যদিকে চরপাথরঘাটায় ১৬ সদস্যের আংশিক কমিটিতে মো. শাহজাহান, রোকন উদ্দিন, মো. হারুনুর রশিদ, বাদশা মিয়া বাদল ও নাছির উদ্দিন নাহিদকে সহ-সভাপতি করা হয়েছে। যুগ্ম সম্পাদক করা হয়েছে আজগর আলী পাপনকে, সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে ইমরান পাটোয়ারী, মো. রায়হান ও রুবেল আহমেদকে। এছাড়াও মো. সুমনকে প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, মো. আমিনুল ইসলামকে সাংস্কৃতিক সম্পাদক, মাহমুদুল নবী হেলালকে ক্রীড়া সম্পাদক, উর্মি আকতারকে মহিলা বিষয়ক সম্পাদক এবং মাসুদ রানা কে সহ-সম্পাদক করা হয়।

জানা গেছে, আংশিক হলেও কমিটি ঘোষণায় অনেকটা ঝিমিয়ে পড়া কর্ণফুলী যুবলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকটা উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। তবে পদ পেতে পাঁচ ইউনিয়নে প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী তৎপর থাকলেও জুলধায় ১২ সদস্য ও চরপাথরঘাটায় ১৬ সদস্যের কমিটি দেখে অনেকটা বিব্রত তৃণমূল। কেননা উপজেলা যুবলীগের দুই নেতার অনুসারীরা দুটি বলয়ে বিভক্ত হয়ে পদ ভাগাভাগির দৌড়ে ভাগাভাগি করা হয়েছে বলেও উপজেলাজুড়ে সমালোচনা চলছে।

তবে কমিটিতে তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা স্থান পাওয়া নিয়ে শঙ্কা থাকলেও কমিটি দেখে অনেকটা সেই শঙ্কা কেটে গেছে। যদিও এর আগে চরপাথরঘাটা ও জুলধা ইউনিয়নে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন হয়েছিল। কিন্তু কাউন্সিলরদের ভোটে নেতা নির্বাচন না করে উপজেলা যুবলীগের দুই নেতার পছন্দের লোককে নেতৃত্বে এনেছেন বলেও তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন।

তারা বলছেন, গণতান্ত্রিক উপায়ে সরাসরি কাউন্সিলদের ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচিত করতে হাইকমান্ডের এমন নির্দেশনা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি দুই ইউনিয়নে। চরপাথরঘাটা ও জুলধার তৃণমূল যুবলীগ নেতারা জানিয়েছেন, যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারাই দুই বলয়ে বিভক্ত। যে কারণে দিন দিন কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠনের বিষয়টি তৃণমূলে গুরুত্ব হারাচ্ছে। তারা একে কাউন্সিলদের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন না বলে ‘তামাশা’ সম্মেলন বলছেন।

তৃণমূলের নেতারা অভিযোগ করেন, গঠনতান্ত্রিকভাবে কাউন্সিলদের মাধ্যমে কমিটির গঠন প্রক্রিয়া মানা হয়নি। দুই ইউনিয়নে নিজেদের মতো করে কমিটি ঘোষণা করেছেন। আর সেক্ষেত্রে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অনেকটাই হতাশ হয়েছেন। দুটি বলয়ে পদ ভাগাভাগি করে পেছনের তারিখে কেন জুলধা-চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সেলিম হক কোন ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে কর্ণফুলী উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি মো. সোলায়মান তালকুদারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এখন কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। যুবলীগের কেউ নই।’

সোমবার রাত ১০টার কমিটিতে ব্যাক ডেট হিসেবে কেন গত বছরের পহেলা ডিসেম্বর লেখা রয়েছে— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘জুলধা ও চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের সম্মেলন শেষে গত বছরেই দুই ইউনিয়নের কমিটি অনুমোদন করে রাখা হয়েছিল। রাজনৈতিক নানা কৌশলে তখন তা ঘোষণা করা হয়নি। আজ (সোমবার) রাতেই দুই ইউনিয়নের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!