দুই তরুণকে পিটিয়ে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাল সাতকানিয়ার চিহ্নিত চক্র, মাটিখেকোই মাদকমামলার বাদি (ভিডিও)

পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় অবৈধভাবে মাটি উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ করায় হাত-পা ভেঙে ইয়াবা গুঁজে দিয়ে প্রতিবাদী দুই তরুণকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। সাজানো ঘটনা জেনেও সাতকানিয়া থানার পুলিশ মাটিখেকোদের পক্ষ নিয়ে থানায় নিয়েছে মামলাও।

বুধবার (১১ জানুয়ারি) বিকেল তিনটার দিকে এমন ঘটনা ঘটেছে সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ রূপকানিয়া টঙ্কাবতী রেলওয়ে সেতু এলাকায়।

সাজানো অভিযোগে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া ওই দুই তরুণ হলেন— সাতকানিয়ার দক্ষিণ রূপকানিয়া ৯ নং ওয়ার্ডের আল আমিন পাড়ার আশরাফ মিয়ার পুত্র মিজানুর রহমান ও একই এলাকার ওমর আলীর পুত্র ছরওয়ার কামাল।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, এলাকার চিহ্নিত মাটিখেকোর দল তাদের দুজনকে পিটিয়ে জাতীয় জরুরি সহায়তা সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। পরে পুলিশ ওই দুজনকে আটক দেখায়।

জানা গেছে, সাতকানিয়া উপজেলার ছদাহা, ঢেমশা, এওচিয়া, কেওঁচিয়া, কালিয়াইশ, নলুয়া, সোনাকানিয়া, মাদার্শা ইউনিয়ন ছাড়াও সাতকানিয়া পৌর এলাকায় দিনরাত চলছে পরিবেশ বিধ্বংসী মাটি কাটার উৎসব। স্থানীয় চেয়ারম্যান-কাউন্সিলর ছাড়াও রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের আশ্রয়প্রশ্রয়ে এই অপকর্ম চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।

জানা গেছে, জমি থেকে তোলা এসব মাটির ৬০ ভাগই যাচ্ছে সাতকানিয়ার বিভিন্ন ইটভাটায়। অন্যদিকে বাকি অংশ ব্যবহৃত হচ্ছে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন ছাড়াও প্লট ভরাটের কাজে। এভাবে এলাকাজুড়ে নির্বিঘ্নে চলছে মাটিকাটার নামে পরিবেশের ধ্বংসযজ্ঞ।

এর আগে সাতকানিয়া উপজেলা প্রশাসন মাঝে মাঝে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলেও বর্তমানে এ নিয়ে নিশ্চুপ প্রশাসন। অথচ সোমবার (১৬ জানুয়ারি) সাতকানিয়ার পার্শ্ববর্তী উপজেলা লোহাগাড়ায় ফসলি জমির মাটি কাটার অপরাধে মো. জাহেদ হোসেন (৩৫) নামের এক যুবককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাতকানিয়ায় মাটিকাটার নামে পরিবেশের এই ধ্বংসযজ্ঞে জড়িত রয়েছেন ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার নাছির, দোভাষী পাড়ার আহমদু বাহিনীর শীর্ষ ক্যাডার আরিফ, ‘ডাকাত’ বশিরের ভাগ্নে নাছির, বশিরের শ্যালক মুসলিম, মাইজপাড়ার গফুর, ৯ নং ওয়ার্ডের মোমিন, ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার সবুর ও মাদককারবারি মান্নানসহ বড় একটি চক্র।

স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অবৈধভাবে মাটি উত্তোলনকারী এই চক্রটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ফেসবুকে লেখায় স্থানীয় তরুণ মিজান ও ছরওয়ারসহ আরও কয়েকজন চক্রটির রোষানলে পড়েন। গত বুধবার সুযোগ পেয়ে ওই তরুণকে প্রথমে চক্রটি হাত-পা বেঁধে অকথ্য নির্যাতন চালায়। এর একপর্যায়ে তাদের পরনের জামায় ইয়াবা গুঁজে দিয়ে পরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

এলাকাবাসী জানায়, এ ঘটনায় সাতকানিয়া থানার পুলিশের ভূমিকা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। প্রতিবাদী দুই তরুণকে অকথ্য নির্যাতনের পরও ঘটনার মূল হোতাদের না ধরে উল্টো তাদেরকেই মামলায় জড়ানো হয়েছে। মাদক ও অস্ত্র মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ বাদি হওয়ার কথা থাকলেও সাতকানিয়ায় এই প্রথম সাধারণ কেউ বাদি হয়েছে এ ধরনের মামলায়। পুলিশের এমন কাণ্ড খোদ আইনজীবীদেরও বিস্মিত করেছে।

দুই তরুণের বিরুদ্ধে সাজানো মামলার বাদিও এক চিহ্নিত মাটিব্যবসায়ী ও এস্কেভেটর মালিক আবুবকর।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!