দীর্ঘ ১১ বছরের একাকিত্ব দূর করে বিয়ের পিড়িতে বসছে নোভা ! বর বাদশাহ

সুমন কুমার দে / মোর্শেদ রনি ::

দীর্ঘ ১১ বছরের একাকিত্ব জীবনের অবসান ঘটিয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনে ধুমধামের মধ্য দিয়ে অবশেষে ‘সাতপাকে’ বাঁধা পড়ল চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার সিংহী “নোভা”। রংপুর এর সিংহ বাদশাহ’র সাথেই এ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন নোভা। rsz_collage-2016-09-20_1

 

বুধবার সকাল ১১ টায় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার পক্ষ থেকে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে তাদের বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। বর্ণাঢ্য আয়োজন শুরু হয় কেক কেটে এবং বেলুন উড়িয়ে।

 

সিংহের খাঁচায় সুস্বজ্জিত ফুলেল বিচানা পেতে সেখানে ভালবাসার চিহ্ন এঁকে তাতে মাংস দিয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন।

14398145_309778729382231_395660307_n

এদিকে ঝাকজমকপূর্ণ এ বিয়েকে ঘিরে চিড়িয়াখানার ফটক, ওয়াকওয়ে ও পশুপাখির খাঁচা রংবেরঙের বেলুন, ফেস্টুন ও জরি দিয়ে সাজানো হয়।

 

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার সিংহী “নোভা” ও রংপুর এর সিংহ বাদশাহ’র শুভ বিবাহ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ড. অনুপম সাহা, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মমিনুর রশিদ, এডিসি শিক্ষা হাবিবুর রহমান, কবি অভীক ওসমান, সেলিনা শেলী, চিড়িয়াখানার সদস্য সচিব রুহুল আমীন, ডেপুটি কিউরেটর চৌধুরী মো. মনজুর মোরশেদসহ বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক ও স্কুলশিক্ষার্থী।

 

সবাই এ ব্যাতিক্রম উদ্দ্যেগকে স্বাগত জানিয়ে সিংহী নোভা ও সিংহ বাদশাহ’র শুভ কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করেন।

14328921_309778782715559_1477034989_n

এর আগে অভিনব ও সুন্দর একটি দাওয়াতপত্র গতকাল মঙ্গলবার ইমেইলযোগে পেয়েছেন চট্টগ্রামে কর্মরত বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সংবাদকর্মীরা। প্রেরকের পক্ষ থেকে বিষয় লেখা ছিল “বিয়ে শাদী’র দাওয়াত।” বিশেষ করে বাংলাদেশে সরকারি কোনো দপ্তরের অফিসের কর্মকর্তার কাছ থেকে এ ধরনের আমন্ত্রণ বা তথ্য পাওয়া যেখানে অনেক কঠিন সেখানে সত্যিই এ ধরনের একটি সুলিখিত এবং অত্যন্ত মনোগ্রাহী বার্তা অনেককে উৎসুক এবং আগ্রহী করে তুলেছে। আর এই ছোট্ট কয়েকটি লাইনের এই বিয়ের আমন্ত্রণ পত্রটি পাঠিয়েছেন চট্টগ্রামে ইতোমধ্যেই ভেজালবিরোধী অভিযানে সুনাম কুড়ানো ম্যাজিস্ট্রেট এবং চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব রুহুল আমিন।

 

জানা যায়, গত ৫ সেপ্টেম্বর বর হিসেবে রংপুর থেকে চট্টগ্রাম আনা হয়েছিল ‘বাদশা’কে। ডেপুটি কিউরেটর মনজুর মোরশেদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম বাদশাকে দুটি লোহার খাঁচায় পুরে ট্রাকে চড়িয়ে নিয়ে এসেছিলেন। পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে এবং নোভা ও বাদশা যাতে মারামারি না করে সেজন্য তাদের পৃথক খাঁচায় পাশাপাশি রাখা হয়।

14409010_309778672715570_1367902150_n

এ প্রসঙ্গে চিড়িয়াখানার চিকিৎসক সাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, এতদিনের নিঃসঙ্গতা দূর হচ্ছে সিংহী নোভার। রংপুর থেকে বাদশাকে আনার পর নোভার পাশে পৃথক খাঁচায় রাখা হয়। যাতে সে পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজিত হতে পারে। প্রায় ১৫ দিন পর এখন এ সিংহ-সিংহীকে একই খাঁচায় রাখা হবে। পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য এবং দুটি সিংহ যাতে মারামারি না করে সে জন্য পৃথক খাঁচায় পাশাপাশি রাখা হয়।

 

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালের ১৬ জুন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় জন্ম নেয় সিংহ শাবক বর্ষা ও নোভা। দুই বোনের জন্মের কিছুদিন পর তাদের মা ‘লক্ষ্মী’ ও ২০০৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বাবা ‘রাজ’ মারা যায়। এরপর আর কোনো নতুন সিংহ চিড়িয়াখানায় আনা হয়নি। একই সঙ্গে চিড়িয়াখানায় কোনো পুরুষ সিংহ না থাকায় বর্ষা ও নোভা কুমারী থেকে যায়। অনেক খোঁজ করেও তাদের জন্য উপযুক্ত পুরুষ সিংহ পাওয়া যায়নি। পরে রংপুর চিড়িয়াখানায় দুটি পুরুষ সিংহ থাকার খবর পেয়ে দুই চিড়িয়াখানার মধ্যে প্রাণী বিনিময় চুক্তি হয়। সেই চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে রংপুর থেকে সিংহ বাদশাকে চট্টগ্রাম আনা হয় এবং চট্টগ্রাম থেকে সিংহী বর্ষাকে রংপুর নেওয়া হয়। জানা গেছে, বর্তমানে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় ৬৫ প্রজাতির প্রায় ৩৬৫টি প্রাণী থাকলেও দর্শনার্থীদের মূল আকর্ষণ নোভা ও বাদশা।

 

এ এস / জি এম এম / আর এস পি :::

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!