দিনে ১৪ কোটি লিটার পানি তুললে হালদা নদী মরে যাবে, হুঁশিয়ারি বিশেষজ্ঞদের

বিশেষজ্ঞ সমীক্ষার নামে প্রতারণা

হালদা নদী থেকে ফেনী-মিরসরাই শিল্পনগরীর জন্য দিনে ১৪ কোটি লিটার পানি তোলা হলে নদীতে কার্পজাতীয় মাছের প্রজনন ও ডলফিনসহ জীববৈচিত্র্য হুমকি মুখে পড়বে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

শনিবার (২০ নভেম্বর) প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষা মঞ্চের আয়োজনে ‘হালদা নদীর পানি উত্তোলন ও তার প্রভাব’ বিষয়ক এক ওয়েবিনারে অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীকে রক্ষায় হালদা নদী থেকে পানি উত্তোলন না করে বিকল্প উৎস থেকে পানি নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিশেষজ্ঞ সমীক্ষার নামে প্রতারণার মাধ্যমে হালদা নদী থেকে পানি উত্তোলনে পক্ষে খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে হালদাকে মেরে ফেলার আয়োজন করা হচ্ছে। হালদা শুধু হাটহাজারী কিংবা চট্টগ্রাম ও বাংলাদেশের সম্পদ নয়। এটি পুরো বিশ্বের সম্পদ। এমনিতে নানা দূষণ ও পানি উত্তোলনের ফলে নদীর মা মাছ ও ডলফিন হুমকির মুখে পড়েছে। নতুন করে ১৪ কোটি লিটার পানি উত্তোলনের ফলে এ নদীর জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাবে।

ওয়েবিনারে অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞরা
ওয়েবিনারে অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞরা

তার বলেন, ফেনী-মিরসসরাই শিল্প নগরীর জন্য দৈনিক ১৪ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করতে অনভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সমীক্ষা করে মূলত প্রতারণা করা হয়েছে। এ কনসালটেন্টের পানি উত্তোলনের বিষয়ে দেওয়া তথ্য ভুলে ভরা ও বিজ্ঞানসম্মত নয়। ফেব্রুয়ারি মাস হল কার্পজাতীয় মাছের প্রজনন পূর্ব মাস। এসময় মা-মাছের পর্যাপ্ত গুণগতমান পানি ও খাবার যেমন প্লাংটন মাইক্রোবেনথিক অর্গানিজম দরকার। এ সময় যদি সব মিলিয়ে নদীর মোট ৩০ শতাংশ পানি তুলে নেওয়া হয় তাহলে পানি স্বল্পতা ও লবণাক্ত বেড়ে কার্পজাতীয় মাছ ও ডলফিন হুমকির মুখে পড়বে।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, আমরা উন্নয়ন চাই, তবে নদীকে মেরে ফেলে নয়। হালদা নদী থেকে মদুনাঘাট-মোহরা পানি শোধানাগার, ভূজপূর রাবার ড্যাম, হারুয়াছড়ি রাবার ড্যাম, ধুরং কংক্রিট ড্যাম ও হাটহাজারী অংশে প্যারালাল খালে ১৮টি স্লুইস গেইট দিয়ে নিয়মিত পানি তোলা হচ্ছে। নতুন করে ১৪ কোটি লিটার পানি উত্তোলনের পক্ষে খোঁড়া যুক্তি দিয়ে হালদাকে মেরে ফেলার আয়োজন কখনো মেনে নেওয়া যায় না। তাই হালদা নদী থেকে পানি উত্তোলন না করে বিকল্প উৎস থেকে পানি উত্তোলন করার ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।

ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, প্রধান বক্তা ছিলেন পানি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. আইনুন নিশাত।

প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষা মঞ্চের আহবায়ক ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়ার সঞ্চালনায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব শাইখ সিরাজ ও পরিবেশ আইনজীবী এডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোঅর্ডিনেটর ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া, আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি ব্যারিস্টার এম. আবদুল কাইউম, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ চৌধুরী মোহাম্মদ ফরিদ, হালদা নদী রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সিউজে সভাপতি মোহাম্মদ আলী, রিভার এন্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ, প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষা মঞ্চের সদস্য শমশের আলী ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন গৌরাঙ্গ নন্দী প্রমুখ।

সিএম/এমএফও/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!