দামি সিগারেটের ধূর্ত প্রচারণা অভিনব কৌশলে, করোনাকালে সবচেয়ে বেশি

বাংলাদেশে সিগারেটের মধ্যে গোল্ডলিফ ও বেনসন বাজারজাতকারী ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো এবং বিড়ির মধ্যে আকিজ বিড়ি সুকৌশলে সবচেয়ে বেশি প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে ক্ষতিকর তামাকের।

শুধু করোনাকালেই সবচেয়ে বেশি প্রচার দেখা গেছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর। এর মধ্যে গোল্ডলিফ ৪৭.৯ শতাংশ, বেনসন অ্যান্ড হেজেস ৪০.৫ শতাংশ, ডার্বি ৪০.৫ শতাংশ এবং স্টার ৩৪.৭ শতাংশ। জাপান টোব্যাকো কোম্পানির সেখ সিগারেট ১৮.২ শতাংশ এবং ঢাকা টোব্যাকোর নেভির প্রচার দেখা গেছে ২৮.৯ শতাংশ। এছাড়া বিএটিবির হলিউড ১৩.২ শতাংশ, ফিলিপ মরিস কোম্পানির মার্লবোরো সিগারেটের ৮.৩ শতাংশ প্রচার দেখা গেছে।

অন্যদিকে বিড়ির মধ্যে সর্বাধিক প্রচার দেখা গেছে আকিজ বিড়ির (২৫.৬ শতাংশ)। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বিড়ির প্রচার দেখা গেছে ৪.৬ শতাংশ। জর্দার মধ্যে হাকিমপুরী ০.৬ শতাংশ, বাবা ৪.১ শতাংশ, শোভার ৫ শতাংশ প্রচার প্রদর্শনের তথ্য মিলেছে শুধু করোনাকালেই।

বাংলাদেশে তামাক সেবন ও এর প্রচার-প্রসারের ওপর ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটি, নাটাব, এইড ফাউন্ডেশন, টোব্যাকো কন্ট্রোল রিসার্চ সেল (টিসিআরসি) এবং ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট পরিচালিত ভিন্ন ভিন্ন গবেষণার ফল থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশে মোট প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহার করেন— যা জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে ধোঁয়াযুক্ত তামাক সেবনকারীর সংখ্যা ১ কোটি ৯০ লাখেরও বেশি মানুষ— যা মোট জনসংখ্যার ১৮ শতাংশ। অপরদিকে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য ব্যবহার করেন ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ— যা মোট জনসংখ্যার ২০ দশমিক ৬ শতাংশ।

গবেষণায় মোট ৩০টিরও বেশি উপায়ে বিড়ি-সিগারেট-জর্দার প্রচার প্রদর্শনের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে— পোস্টার, লিফলেট, স্টিকার, সাইনেজ, খালি প্যাকেট ও সিগারেট ডিসপ্লে, ডিসকাউন্ট, প্রমোশনাল স্টিকার, ফ্লায়ার, মেকাপ বক্স, ব্যানার, ভিডিও প্রদর্শন, ক্যালেন্ডার, পোর্টেবল সাইন, ফ্রি স্ট্যান্ডিং বোর্ড, ফাইল কাভারের মাধ্যমে প্রচার করা, গ্লাস উইন্ডো ব্যবহার, তামাকজাত দ্রব্যের ছবি সম্বলিত ভ্যান, ক্যাশ বাগে তামাকজাত দ্রব্যের ছবি ব্যবহার, শোকেস, টি-শার্ট, ক্যাপ, বড় ডামি প্যাকেট, ছাতা, ঘড়ি, তামাকজাত দ্রব্য দোকানে সাজানো, টোবাকো সাইনযুক্ত উপহার, ধূমপায়ীদের জন্য ‘স্মোকিং কর্নার’ তৈরি, সরাসরি ফোনে তামাক কোম্পানি থেকে কল ও এসএমএস পাঠানো। এছাড়া বেশি বিক্রি হয় বা গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল স্থানে অবস্থিত বিক্রয়কেন্দ্রের ব্যবসায়ীদেরকে তামাক কোম্পানিগুলো স্থানীয় ডিলার-পার্টনারও করে নিচ্ছে।

গবেষণায় জানানো হয়, বিক্রি বাড়াতে তামাকপণ্য বিক্রেতাদের নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার প্রলোভন দেখিয়ে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে তামাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। দেওয়া হচ্ছে ফ্রি সিগারেট, আকর্ষণীয় লাইটার, মানিব্যাগ, কোম্পানির ন্যাম-লোগো সম্বলিত টি-শার্টসহ বিভিন্ন ধরনের উপহার সামগ্রীও।

এছাড়া বিনোদনসম্বলিত টি-শার্ট পরিধান ও তামাকের স্টিকারযুক্ত উপহার দেওয়া হয়েছে তামাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে— যা একধরনের পরোক্ষ প্রচার। সাম্প্রতিক সময়ে গ্রামাঞ্চলের হাটবাজারে বাদ্যযন্ত্রসহকারে গান গেয়ে বিড়ির প্রচারণা করতেও দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তামাক কোম্পানিগুলোর নানা ধরনের প্রচারণা দেখা যায়।

গবেষণায় তথ্য মিলেছে, করোনালালে তামাক কোম্পানিগুলো তামাক সম্পর্কে ইতিবাচক ভাবনা তৈরির জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর নানা ধরনের প্রচারণাও চালিয়েছে। যেমন— ধূমপায়ীর করোনা ঝুঁকি কম, তামাক পাতা দ্বারা ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়েছে ইত্যাদি। তিনটি বা তার বেশি জর্দা কিনলে উপহার পাওয়া যাবে— এমন অফারের নামে চালানো হয়েছে জর্দার প্রচারণা।

গবেষণায় বলা হয়, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিভিন্ন দোকানদারের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু পরবর্তীতে তামাক কোম্পানিগুলো দোকানদারকে জরিমানার ওই অর্থ পরিশোধ করে দিচ্ছে। পরবর্তীতে দোকানদার পুনরায় প্রচার প্রচারণার উৎসাহিত হচ্ছেন এবং জরিমানা করে খুব বেশি থামানো যাচ্ছে না। কিছু ক্ষেত্রে তামাকজাত দ্রব্যের হোলসেলার বা এজেন্ট স্থানীয় রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালী হওয়ার কারণে সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!