‘দাওয়াত’ দিয়ে আড্ডার ছলে জঙ্গিপনায় দীক্ষা দেয় হিযবুত তাহরীর

হিযবুত তাহরীর কর্মী সংগ্রহ করার প্রথম দিকে নিষিদ্ধ ঘোষিত এই সংগঠনটির কথা কখনই প্রকাশ করে না টার্গেট তরুণদের কাছে। কোরআন হাদিসের ভুল ব্যাখা দিয়ে সহি দ্বীন (ইসলাম) প্রতিষ্ঠার দাওয়াতের কথা বলে প্রথমে নিজেদের দলে ভেড়ানো হয়। পরে সুযোগ বুঝে নানা প্রেরণাদায়ী কথা বলে সংগঠনের আদর্শ প্রচার করা হয় এসব তরুণদের মাঝে। এরপর ধীরে ধীরে এই জঙ্গি সংগঠনের ছায়াতলে নিয়ে একেকজনকে কর্মী থেকে সংগঠক হিসেবে তৈরি করে দায়িত্বপ্রাপ্ত জঙ্গি নেতারা।

বৃহস্পতিবার বিকেলে (৫ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম শফি উদ্দীনের আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য জানিয়েছেন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হিযবুত কর্মী আজিমুল হুদা মিল্লু।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (প্রসিকিউসন) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, হিযবুত তাহরীরের কর্মী আজিমুল হুদা মিল্লু আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আদালত তাকেসহ আরও দুজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, স্বীকারোক্তিতে আজিমুল হুদা মিল্লু জানিয়েছেন, এই মামলার আসামি আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ ও পলাতক তাহমিদের মাধ্যমেই হিযবুতের কার্যক্রমে যুক্ত হন। মাহফুজের নির্দেশনায় নগরীর ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, খাজা রোড, আমিনের দোকান, রাহারত্তারপুল, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় হিযবুত তাহরীরের জন্য টার্গেট সংগঠিত করার কাজ করতো। তাহমিদ, সবুজ ও আজিমুল হুদা বিভিন্ন জনসমাগস্থল টংয়ের দোকানে সাংগঠনিক আড্ডার আড়ালে টার্গেট পূরণে গোপন তথ্য সংগ্রহ করতো। নিজেদের মধ্যে গোপন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ হতো। অন্যরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে হিযবুত তাহরীরকে সংগঠিত করার কাজ করতো। তারা প্রথমে টার্গেট তরুণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে নগরীর বিভিন্ন খোলা মাঠ, পার্ক, রেস্টুরেন্ট, মার্কেটে আড্ডার ছলে বৈঠক করে। তারপর মগজধোলাইয়ের পর বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠলেই বড় ভাইদের বাসায় নিয়ে সাংগঠনিক ট্রেনিং করানো হয়।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, হিযবুত তাহরীরের চট্টগ্রাম মহানগরে মূলত চারটি সাংগঠনিক জোনে ৩৫ থেকে ৪০ জনের নেতাকর্মী রয়েছে। এদের মধ্যে বড় গ্রুপটিই কোতোয়ালী থানা পুলিশের হাতে আটক হয়েছে। তারা মূলত চট্টগ্রামের নির্দিষ্ট কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে গোপনে সক্রিয় রয়েছে। খিলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে সাংগঠনিক কাঠামো তৈরিতে বিভিন্ন উপায়ে সদস্য রিক্রুট করছে তারা। এই কাজে তাদের বিশেষ নজর রয়েছে বিভিন্ন বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) সদস্যদের ওপর।

শুক্রবার (২২ নভেম্বর) নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রধান (আঞ্চলিক প্রধান) আবুল মোহাম্মদ এরশাদুল আলমসহ আরও ১৪ জনকে আটক করে পুলিশ।

জানা গেছে, এরশাদুল আলম চট্টগ্রামের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। গ্রেফতার ১৫ জনের মধ্যে দুজন বিএনসিসি সদস্যও রয়েছেন। হিযবুতে সক্রিয় থাকা সেই দুই বিএনসিসি সদস্য হলেন কামরুল হাসান রানা ও মো. আরিফুল ইসলাম। দু’জনের বয়সই বিশের কোঠায়।

প্রসঙ্গত, ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানা পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে ১৫ কর্মীসহ গ্রেপ্তার করা হয়।

এডি/এসএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!