দশদিন ধরে পানিবন্দী হাটহাজারীর কুয়াইশ

ভারি বর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় হাটহাজারী উপজেলার ১৪ নম্বর শিকারপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার হাজারো মানুষ পানিবন্দী। অপরিকল্পিত নগরায়ন, কুয়াইশ খাল ভরাট, টেনারির বর্জ্য এগুলোই জলাবদ্ধতার কারণ বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসীরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনন্যা আবাসিক এলাকায় উন্নয়ন সাধারণ মানুষের নালা খাল দখল, কুয়াইশ খাল দীর্ঘদিনের ড্রেজিংয়ের অভাবে ভরাট হয়ে যাওয়া, কুয়াইশ কলেজের সামনের খাল দখল করে দোকান নির্মাণসহ নানা কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া কুয়াইশ খালটি অনন্যা আবাসিক হয়ে কুয়াইশ কলেজের পাশ দিয়ে বুড়িশ্চর হয়ে শেখ মার্কেটের সামনে হয়ে হালদায় মিলিত হয়েছে।

তবে শেখ মাকের্টের সামনে খালটি সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় পানি চলাচল গতি কমে গেছে। এ ছাড়া অক্সিজেন কুয়াইশ সংযোগ সড়কের কেবি ফ্যান এলাকায় থাকা নালাটি একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে।

কুয়াইশ খাল
কুয়াইশ খাল

কুয়াইশ শেখ মোহাম্মদ কলেজ, কুয়াইশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুয়াইশ উচ্চ বিদ্যালয় এই তিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একই স্থানে। প্রতিদিন হাজারো শিক্ষার্থী ও শিক্ষক হাটুপানি মাড়িয়ে আসা যাওয়া করছেন। কুয়াইশ কলেজে ১১ জুলাই ডিগ্রি পরীক্ষার হিসাব বিজ্ঞান পরিক্ষা ছিল। বিভিন্ন কলেজ থেকে চার শতাধিক পরীক্ষার্থী হাটুপানি মাড়িয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছেন। থেমে থেমে বর্ষণের কারণে স্কুল, কলেজে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হারও কমে গেছে।

কলেজের মাঠ, রাস্তা প্রায় হাটু সমান পানিতে ডোবা। কলেজের পশ্চিমের এলাকা, আতর আলী সড়ক, এয়ার মো.সড়ক, মধু মাস্টার সড়ক, নেয়ামত আলী সড়ক. কুয়াইশ কলেজ এলাকা, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড, কুয়াইশ বিল, লালচন্দ্রবিল, মদুরি বিল দশদিন ধরে জলমগ্ন। ফলে এলাকায় মানুষের দৈনিন্দিন কাজসহ নানা অসুবিধা হচ্ছে।

কলেজের শিক্ষার্থী রাসেল, রকি, আরমান বলেন, মাঠ ও রাস্তায় পানি জমার কারণে আমাদের চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসন দরকার।

কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী আলোকচিত্রী আমিনুল ইসলাম মুন্না বলেন, আমি ব্যক্তিগত কারণে কলেজে এসেছিলাম। কলেজের মাঠ ও রাস্তা জলমগ্ন। এক জায়গায় তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে।

ইসলামিয়া প্রাথমিক স্কুলে পশ্চিমে বসবাসকারী মো. মুসা বলেন, আমরা পানিতে ভেসে আছি । পানি কমার লক্ষণ নেই। ঘরের উঠোন পর্যন্ত পানি এসছে। কখন ঘরে ঢুকে যায় জানি না।

কুয়াইশ শেখ মোহাম্মদ কলেজের অধ্যক্ষ মো. জয়নাল আবেদিন বলেন, জলাবদ্ধতায় আমাদের কলেজের মাঠ পানিতে ডুবে গেছে। এতে শিক্ষার্থীদের আসা যাওয়ায় ব্যাঘাত হচ্ছে। কলেজের মাঠের পাশের কুয়াইশ খালের উপর নির্মিত দোকান জলাবদ্ধতার কারণ। ২০১৮ সালে আমরা উপজেলা প্রশাসনের নিকট এ ব্যাপরে চিঠির মাধ্যমে অবগত করেছিলাম।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, ভারি বর্ষণের কারণে অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পুরো এলাকায় আমরা কাজ করছি। কুয়াইশ কলেজের অভিযোগ নিয়ে কেউ আর যোগাযোগ করেনি। আমি দেখে ব্যবস্থা নেব।

১৪ নম্বর শিকারপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দিকি বলেন,‘অপরিকল্পিত নগরায়ন, মানুষের অসচেতনতা, কুয়াইশ খাল ভরাট হয়ে যাওয়া, কুয়াইশ থেকে শেখ মার্কেট পর্যন্ত খালটি সরু হওয়াসহ নানা কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানি নেমে গেলে কুয়াইশ এলাকায় একটি কালভার্ট ও তিনস্থানে দুইফুট মোটা পাইপ বসাব। জলাবদ্ধতার সাথে যোগ হয়েছে টেনারির ছাড়া কালো পানি। বৃষ্টি হওয়ায় টেনারিগুলো বর্জ্য ছেড়ে দিয়েছে।

৮ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য লোকমান হাকিম বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে আমরা দশদিন ধরে পানিবন্দী। কুয়াইশ খাল ভরাট হওয়াই জলবদ্ধতার কারণ। আমরা উপজেলা প্রশাসন ও সিটি মেয়রের সাথে এ বিষয়ে কথা বলে সংকট নিরসনের চেষ্টা করব।

এমসি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!