দলের কর্মী সাজিয়ে মুজিব চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নে ২০০ রোহিঙ্গা হয়েছে ভোটার

৭ রোহিঙ্গার এনআইডি দিয়ে ভোটার হয়েছেন ২০০ জন

৩৯ মাস আগে সাতজন রোহিঙ্গাকে ‘আওয়ামী লীগের কর্মী’ দেখিয়ে প্রত্যয়নপত্র দেন কক্সবাজার জেলার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান। কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের প্যাডেই দেওয়া হয়েছে সেই সনদ। এর মাধ্যমে প্রত্যেকে পেয়েছেন বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র— এনআইডি ও স্মার্ট কার্ড। পরে ওই সাতজনের জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে ভোটার হয়েছেন আরও ২০০ রোহিঙ্গা। একই সঙ্গে পাসপোর্টও বানিয়ে নিয়েছেন অনেকে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এমন সব চাঞ্চল্যকর তথ্য।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেছে, এনআইডি জালিয়াতির ঘটনায় হয়েছে মোটা অংকের আর্থিক লেনদেন। এ ঘটনায় মুজিবুর রহমান, কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অঢেল সম্পদের খোঁজে তদন্ত শুরু করেছে দুদক।

দুদকের তদন্তে এর আগে উদঘাটিত হয়, মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার সহায়তায় জাতীয় পরিচয়পত্র ও স্মার্ট কার্ড বানিয়েছে অন্তত ১৩ রোহিঙ্গা। জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করার পর প্রমাণ না রাখতে ইউনিয়ন পরিষদের বালাম বইও গায়েব করে ফেলে অভিযুক্তরা। রোহিঙ্গাদের পরিচয় গোপন করে কক্সবাজার জেলার বিশেষ শাখা থেকে রোহিঙ্গার পক্ষে মিথ্যা প্রতিবেদন দেওয়ায় এই রোহিঙ্গারা পেয়েছে বাংলাদেশের পাসপোর্টও। অনুসন্ধান শেষে কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, জেলা বিশেষ শাখার তিন পুলিশ পরিদর্শক এবং ১৩ জন রোহিঙ্গা নাগরিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। আসামিরা সবাই পলাতক রয়েছেন।

দুদক সূত্রে জানায়, ২০১৮ সালের ৭ এপ্রিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্যাডে মিয়ানমারের সাতজন নাগরিককে ‘আওয়ামী লীগের কর্মী’ দেখিয়ে একটি প্রত্যয়নপত্র দেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান। এই সাত রোহিঙ্গাকে ‘আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত’ বলে ওই প্রত্যয়নপত্রে উল্লেখ করা হয়।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, মেয়র মুজিবুর রহমানের প্রত্যয়ন পাওয়া ওই সাত রোহিঙ্গাসহ মোট ১৩ জন রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তাদের মাধ্যমে আরও ২০০ রোহিঙ্গা নাগরিক এদেশের ভোটার হয়েছেন।

প্রত্যয়নপত্র পাওয়া সাত রোহিঙ্গা নাগরিক হলেন— কক্সবাজার সদর থানার আউলিয়াবাদ এলাকায় অবস্থানরত মৃত আহম্মদ হোসেনের পুত্র জালাল আহমদ, জালাল আহমদের পুত্র মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, জালাল আহমদের পুত্র মোহাম্মদ ওয়ারেস, জালাল আহমদের পুত্র মোহাম্মদ তৈয়ব, জালাল আহমদের মোহাম্মদ রহিম, জালাল আহমদের পুত্র মোহাম্মদ নাঈম এবং একই এলাকার মৃত মোহাম্মদ সোয়াইবের পুত্র নুরুল আলম।

দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, অভিযুক্তরা পরস্পর যোগসাজশে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে প্রথমে সাতজন থেকে পর্যায়ক্রমে এনআইডি হাতে পেয়েছে আরও ২০০ রোহিঙ্গা নাগরিক। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে মেয়রসহ নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তা ও জেলা বিশেষ শাখার তিন পুলিশ পরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সম্পদের তদন্ত চলমান রয়েছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!