দরজার ছিটকিনি খোলেনি স্ত্রী-সন্তানরা, শ্বাসকষ্টে গড়াগড়ি দিতে দিতেই মারা গেলেন লোকটি

কাজ করতেন চট্টগ্রামের পেট্রোলপাম্পে

চট্টগ্রাম নগরীর একটি পেট্রোলপাম্পে চাকরি করতেন সাহাব উদ্দিন। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গত বুধবার (২৭ মে) রাতে তার ফেনীর বাড়িতে চলে যান। এরপর শনিবার রাত থেকে শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও কাশি বেড়ে যায় তার। রোববার সকালে ফেনীর সোনাগাজীতে হাসপাতালে গিয়ে করোনাভাইরাসের নমুনা দিয়ে আসেন। এরপর বাড়িতে এলে পরিবারের লোকজন তার সঙ্গে হঠাৎ দুর্ব্যবহার শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা সাহাব উদ্দিনকে একটি রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে থেকে দরজায় ছিটকিনি লাগিয়ে দেয়।

সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ভাদাদিয়া এলাকার বাসিন্দা ৫৫ বছর বয়সী সাহাব উদ্দিনের স্ত্রী, তিন ছেলে, তিন মেয়ে ও তিন জামাতা রয়েছেন। দুই ছেলে চাকরিসূত্রে গ্রামের বাইরে থাকেন। মৃত্যুর সময় বাকিরা সবাই বাড়িতে ছিলেন।

মৃত সাহাব উদ্দিনের ছোট ছেলের সঙ্গে কথা বলে মতিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. রবিউজ্জামান জানান, হাসপাতাল থেকে আসার পর থেকে পরিবারের কেউ সাহাব উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলেননি। দুপুরে তাকে খাবারও দেননি। বিকেলে তার শ্বাসকষ্ট ও কাশি বেড়ে যায়। এ সময় তিনি চিৎকার করে খাবার চাইলেও কেউ দেননি। তাকে শয়নকক্ষে রেখে বাইরে থেকে দরজায় ছিটকিনি লাগিয়ে রাখেন পরিবারের সদস্যরা। ছোট ছেলে এগিয়ে যেতে চাইলে তাকে বোনেরা বাধা দেন। এভাবে চিৎকার করতে করতে রাত ১০টার দিকে সাহাব উদ্দিনের মৃত্যু হয়। রাতে সাড়াশব্দ না পেয়ে পরিবারের লোকজন জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখেন তিনি মারা গেছেন। এরপর সবাই যার যার ঘরের দরজা বন্ধ করে ভেতরে ঢুকে যান। পরে ছোট ছেলে ‘বাবা মারা গেছে’ বলে চিৎকার শুরু করেন।

মতিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ফেরদৌস রাসেল বলেন, ‘খবর পেয়ে রাত একটার দিকে চেয়ারম্যানসহ আমরা কয়েকজন ওই বাসায় গিয়ে উপস্থিত হই। অনেক ডাকাডাকির পর ওই বাড়ির লোকজন মূল দরজা খুলে দিয়ে যার যার কক্ষে চলে যান। বাড়ির একটি কক্ষে সাহাব উদ্দিনকে রেখে বাইরে থেকে ছিটকিনি লাগানো ছিল। ছিটকিনি খুলে আমরা ভেতরে বিভৎস দৃশ্য দেখতে পাই। সম্ভবত সাহাব উদ্দিনের শ্বাসকষ্ট উঠেছিল এবং তিনি তা সহ্য করতে না পেরে মাটিতে গড়াগড়ি করেছিলেন। তার পরনের কাপড় খোলা অবস্থায় পাশে পড়েছিল।’

চেয়ারম্যান মো. রবিউজ্জামান জানান, তিনি লাশ দাফন করার জন্য স্থানীয় মসজিদ থেকে খাটিয়া আনতে লোক পাঠালে মসজিদ কমিটির লোকজন খাটিয়া দিতে অস্বীকৃতি জানান ও কবর দিতে বাধা দেন। পরে তিনি স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় গভীর রাতে পরিবারের লোকজনের অনুপস্থিতিতে জানাজা শেষে লাশ দাফন সম্পন্ন করেন।

ইউপি সদস্য ফেরদৌস রাসেল বলেন, ‘পরিবারের কাউকে ছাড়াই আমরা দাফনের ব্যবস্থা করি। দাফন করে চলে আসার সময় ছোট ছেলেটি তার বাবার জন্য সবার কাছে দোয়া চান।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!