দখল আর দূষণে রায়খালী খাল

এফএমসি, আম্বিয়া, মোস্তফা গ্রুপসহ অসংখ্য কলকারখানার বর্জ্য খালে গিয়ে পড়ছে

দখল আর দূষণে বোয়ালখালীর রায়খালী খালটি এখন একেবারে বিপর্যস্ত। একদিকে অবৈধ দখলের মহোৎসব অপরদিকে কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য গিলে খাচ্ছে খালটি। ফলে হারিয়ে গেছে এখানকার মৎস্যসম্পদ, বিপর্যয়ের মুখে চাষাবাদ ও ক্ষেত-খামার, বাড়ছে জলাবদ্ধতা ও মানুষের দুর্ভোগ।এত কিছুর পরও পরিবেশ অধিদফতরসহ সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের রহস্যজনক নীরবতায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কর্ণফুলী নদীর মোহনা থেকে পশ্চিম গোমদণ্ডী-শাকপুরা হয়ে গোলকমুন্সির হাটের পাশ দিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ঘেঁষে কালুরঘাট পর্যন্ত প্রবাহিত হয়েছে উপজেলার অন্যতম এই খাল। একসময় খালটিকে ঘিরেই এলাকার মানুষের প্রাত্যহিক জীবন পরিচালিত হতো। রান্না-বান্না, ধোয়া-মোছা, গোসল থেকে শুরু করে জলপথে যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে এটিকেই প্রাধান্য দিতো এলাকাবাসী। তাছাড়া সে সময়ে খালটিতে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত এবং মাছ শিকার করে জীবন নির্বাহ করতো অনেকেই।

সময়ের পরিবর্তনে রায়খালীর আজ বেহাল দশা। পশ্চিম গোমদণ্ডীর এফএমসি ডক ইয়ার্ড, মিলিটারি পুলের আম্বিয়া গ্রুপ, রায়খালী এলাকার এরিনা, এনএফজেড টেরি টেক্সটাইল, মোস্তফা গ্রুপসহ ছোট-বড় অসংখ্য কল-কারখানা গড়ে উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, এ সমস্ত কারখানার দূষিত বর্জ্য সরাসরি খালে গিয়ে পড়ে। ফলে প্রতিনিয়তই দূষিত হচ্ছে চাষাবাদের জন্য খুবই উপযোগী স্বচ্ছ স্রোতধারা। এছাড়া একেবারেই হারিয়ে গেছে খালটির মৎস্য সম্পদ, মাটি হারিয়েছে তার উৎপাদন ক্ষমতা, ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ, প্রতিনিয়ত মরছে হাঁস-মুরগিসহ অন্যান্য পশুপাখি। নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এলাকার জনসাধারণ।

এ ব্যাপারে মৎস্যজীবী নেতা পুলিন বলেন, উল্লেখিত কারখানাগুলোর বিষাক্ত রঙিন বর্জ্য খালের পানিতে ফেলায় মাছের সংখ্যা দিন দিন কমে গেছে। ফলে স্থানীয় জেলেদের মাঝে হতাশা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অপরদিকে কিছু প্রভাবশালী মহলের প্রতিনিয়ত চেষ্টা চলছে যেটুকু অবশিষ্ট আছে সেটুকু দখলে নেওয়ার। এভাবেই দখল-বেদখলে খালটি এখন এতটাই ছোট হয়ে গেছে যে পূর্ণ জোয়ারেও নৌকা, সাম্পান, বোট চলাচল করতে পারে না। একসময় এ খালটি ছিল এলাকাবাসীর যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনের অন্যতম মাধ্যম।

স্থানীয় ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বলেন, খালটি দিয়ে প্রচুর নৌকা-সাম্পান ও বোটের চলাচল ছিল। নগরীর চাক্তাই-খাতুনগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে স্বল্প খরচে মালামাল আনা-নেওয়া ও সহজে যাতায়াত করতো এলাকাবাসী। কিন্তু কালের বিবর্তন ও দখল-দূষণের কারণে তা অনেক আগেই হারিয়ে গেছে।

নুর হোসেন নামের এক চাষী অভিযোগ করে বলেন, বর্ষাকালে এলাকার বাড়িঘর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে ভারি বৃষ্টি এবং জোয়ারের পানি বাড়লে দুর্ভোগ পোহাতে হয় এলাকাবাসীকে।

বোয়ালখালীর পৌর মেয়র আবুল কালাম আবু চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ এ খালটির বেশিরভাগ অংশ পড়েছে পৌর এলাকায়। জনস্বার্থে অনেক দখলকারীকে নোটিশ দিয়ে নির্মাণকাজ বন্ধ করাতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু দখলবাজরা প্রভাবশালী হওয়ায় তারা এসব নোটিশে কান দেয়নি। এরপরও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা প্রশাসন ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার জানালেও দখলবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) একরামুল ছিদ্দিক বলেন, অবৈধ খাল দখলদার এবং মিল কারখানার দূষিত বর্জ্য খালে ফেলার দায়ে ইতিপূর্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে। উচ্ছেদ করা হবে অবৈধ স্থাপনাও।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!