দক্ষিণ হালিশহরে উন্নয়নই পুঁজি আওয়ামী লীগের সুমনের, কোন্দলে দিশেহারা বিএনপির সরফরাজ

বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী সরফরাজ কাদের রাসেলের পক্ষে এখনও পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামতে পারেনি স্থানীয় যুবদল, ছাত্রদলের নেতাকর্মী। নির্বাচন যখন ‘দরজার কড়া’ নাড়তে শুরু করলো ঠিক তখনই কোন্দল ঠেকাতেই ব্যস্ত বিএনপির প্রার্থী।

কিন্তু আওয়ামী লীগ প্রার্থী জিয়াউল হক সুমনকে জেতাতে একাট্টা স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ। কাউন্সিলরের চেয়ারে বসেই বিগত পাঁচ বছর জিয়াউল হক সুমনের ঝোঁক ছিল সড়ক উন্নয়ন ও সংস্কারের দিকেই। নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে এটাই পুঁজি এখন সুমনের।

বলছিলাম চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর রাজনৈতিক হালচালের কথা।

২০১৫ সালে বিএনপি প্রার্থীকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হন ব্যারিস্টার সুলতান আহমেদ চৌধুরী ডিগ্রি কলেজের ছাত্র সংসদের ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) জিয়াউল হক সুমন। এবার এ ওয়ার্ডে আওয়ামীলীগের একক সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী তিনি। বিশাল ঘনবসতির এ অঞ্চলে গত ৫ বছরের সড়ক উন্নয়ন ও সংস্কার চোখে পড়ার মতই। পাশপাশি বিনামূল্যে দেওয়া জাতীয়তা সনদ, জন্ম ও মৃত্যু সনদসহ যাবতীয় সেবা।

ওয়ার্ডের প্রতিটি ঘরে ঘরে ময়লার ঝুড়ি সরবরাহ করে ডো টু ডোর আবর্জনার সংগ্রহের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে প্রশংসিত হয়েছেন সাবেক কাউন্সিলর সুমন। করোনাকালে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে অস্বচ্ছল মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন কয়েক লাখ মানুষের খাদ্যসামগ্রী। এ সময়ে সচেতনতা বাড়াতে নিজ উদ্যোগে পাড়া পাড়ায় বসিয়েছিলেন তিনি হ্যান্ডস্যানিটাইজার পয়েন্ট।

এদিকে বিএনপির সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী হালিশহর থানা বিএনপির সভাপতি সরফরাজ কাদের রাসেল কোন্দলের আগুনে পুড়ছেন। তার নির্বাচনী মাঠে যেন ‘কাদা’ জমিয়ে দিয়েছে সম্প্রতি গঠন হওয়া নগর ছাত্রদল ও যুবদলের কমিটি। কমিটিতে পদবঞ্চিতদের একটি বিরাট অংশ ও থানা-ওয়ার্ড বিএনপির শীর্ষ নেতারা দীর্ঘদিন ধরে তার কাছ থেকে দূরে রয়েছেন। তার মধ্যে গত ৫ বছরের বিভিন্ন মামলা মোকাদ্দমা পড়ে এলাকায়ও নেই অনেকেই। বিভক্ত হওয়া এসব নেতাদের একটি অংশ আবার আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী জিয়াউল হক সুমনের সঙ্গে নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় রয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিএনপি সমর্থিত একক কাউন্সিলর প্রার্থী সরফরাজ কাদের রাসেল। সেখানে হালিশহর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রুকন উদ্দিন খলিল মাহমুদ ও ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আলী আশরাফ সাধারণ মুজিবুর রহমানের মধ্যে রয়েছে কোন্দল। সম্প্রতি মহানগর যুবদল ও ছাত্রদলের কমিটিতে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের কারণে রাজনৈতিক মতবিরোধটি কাউন্সিলর নির্বাচনী মাঠে রাখছে নেতিবাচক প্রভাব।

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জিয়াউল হক সুমনের বাবা সিরাজুল হক একজন মুক্তিযোদ্ধা। পরিবার থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। ১৯৯৬ সালে ব্যারিস্টার সুলতান আহমেদ চৌধুরী ডিগ্রি কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন তিনি। চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের কার্যকরী কমিটির সাবেক সদস্য সুমন বর্তমামে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ছিলেন।

বর্তমানে মহানগর যুবলীগের সদস্য ও থানা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৫ সালের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীকে পরাজিত করে কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। কাউন্সিলর থাকা অবস্থায় গত ৫ বছরে এই ওয়ার্ডে প্রায় ১০০ কোটি টাকার সড়ক, ড্রেন সংস্কারসহ বিভিন্ন উন্নয়ন করা হয়। তার মধ্যে সিমেন্টক্রসিং থেকে আনন্দবাজার রেললাইন প্রায় কিলোমিটারের রাস্তা সংস্কার ও সিমন্টেক্রসিং এলাকায় সবুজ সড়ক উয়ন্ননে প্রশংসিত হয়েছেন সাবেক এই কাউন্সিলর।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের শহরের ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ড ঘিরে রয়েছে বাংলাদেশ রপ্তানী প্রক্রিয়া অঞ্চল বেপজা। সিইপিজেড ও কর্ণফুলী ইপিজেডের শ্রমিকদের বেশির ভাগই এ এলাকার বাসিন্দা। প্রায় ৫ লাখ বাসিন্দার অর্ধেকের বেশিই বহিরাগত। এই ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৪২ হাজার ৩০০। ভোট কেন্দ্র রয়েছে ৪১টি।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী সরফরাজ কাদের রাশেল বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে প্রায় ২০টি অধিক রাজনৈতিক মামলা। রোববার একটি মামলার চার্জ গঠনের তারিখ থাকায় কোর্টে আসলাম। গত ৫ বছরের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার আমি ও আমার ওয়ার্ডের অধিকাংশ নেতাকর্মী। দলীয় সিদ্ধান্তে আমি নির্বাচন করছি। এ ওয়ার্ড বিএনপির ঘাঁটি। এখানে প্রচুর নিরব ভোটার রয়েছে যারা বিএনপিকে ভালবাসেন। সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণ হলে বিজয়ের আশাবাদি।’

দলীয় অন্তঃকোন্দলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নেতাকর্মীদের মধ্যে মান-অভিমান থাকবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু সেটাতো আর কোন্দল নয়। বিএনপির অঙ্গ সংগঠন ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা নির্বাচনী প্রচারণায় কাজ করবেন।’

আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী জিয়াউল হক সুমন বলেন, ‘অবহেলিত ওয়ার্ডটির সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সংস্কারের ব্যাপক কাজ করেছি আমি। গত ৫ বছরের প্রায় ১০০ কোটি টাকার উন্নয়ন করেছি। সিটি কর্পোরেশনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে নিজ উদ্যোগে প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে ডোর টু ডোর ময়লা আবর্জনা সংগ্রহ করার কাজ অব্যাহত রেখেছি। দীর্ঘদিনের সিমেন্ট ক্রসিং এলাকার জলাবদ্ধতা নির্মুল করে সেটিকে সবুজ সড়কে রুপান্তর করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘নাগরিক, জন্ম-মৃত্যু ও চারিত্রিক সনদসহ ওয়ার্ডের যে কোনো সনদ আমার দায়িত্ব থাকা অবস্থায় দেওয়া হতো সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। ৫ বছরের উন্নয়ন ও এলাকার জনগণের ভালবাসাই আমার পুঁজি।’

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!