দক্ষিণ পাহাড়তলীর ভোটে ‘বিদ্রোহী’ তৌফিক সদর্পে, শফিউলের কপালে চিন্তার ভাঁজ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যে কয়েকটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বিপরীতে দলেরই ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ তুলনামূলক ভালো অবস্থায় রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হল ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ড। এমন অবস্থায় দলের মনোনীত প্রার্থীরই কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। এলাকায় ভোট চাওয়ার চেয়ে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’র বিরুদ্ধে নালিশ নিয়ে নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন যারা, এই ওয়ার্ডের মনোনীত প্রার্থী তাদের অন্যতম।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডে গতবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর তৌফিক আহমদ চৌধুরীকে বাদ দিয়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজী শফিউল আজিমকে মনোনয়ন দিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। তবে মনোনয়ন না পেলেও তৌফিক চৌধুরী ‘বিদ্রোহী’র তকমা নিয়ে ভালোভাবেই আছেন নির্বাচনী লড়াইয়ে।

নগরের হাটহাজারী থানাধীন এলাকা নিয়ে গড়ে উঠা এই ওয়ার্ডটি জামাত, বিএনপি ও হেফাজতে ইসলামী অধ্যুষিত। এই ওয়ার্ডে এখন পর্যন্ত দুই বার কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হতে পেরেছেন। কাউন্সিলর তৌফিক ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি, পাশাপাশি নগর যুবলীগেরও সদস্য। চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর হাত ধরে রাজনীতিতে আসা এই নেতার স্থানীয় রাজনীতিতে রয়েছে নিজস্ব প্রভাব ও প্রতিপত্তি।

অন্যদিকে দলের মনোনয়ন পাওয়া শফিউল আজিমও মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। ২০০৫ ও ২০১০ সালে নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়ে জয় ঘরে তুলতে ব্যর্থ হয়ে ২০১৫ সালের নির্বাচনে আর অংশ নেননি তিনি। এবারে দলের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করছেন শফিউল আজিম।

বিএনপি জামায়াত অধ্যুষিত এই ওয়ার্ডে স্থানীয় প্রভাব প্রতিপত্তি ছাড়াও আরও নানান হিসাবনিকাশে স্পষ্টত এগিয়ে রয়েছেন তৌফিক আহমদ চৌধুরী। নিজে ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি হওয়ায় এখানকার যুবলীগের পুরো অংশটিকেই পাশে পাচ্ছেন তিনি। এছাড়া ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন তৌফিকের ছেলে তাজিন চৌধুরী তন্ময়। ফলে ছাত্রলীগের সমর্থনও ঘরে তুলতে পারছেন তিনি। অন্যদিকে দলের মনোনীত প্রার্থীকে সঙ্গ দিচ্ছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একটি অংশ।

এসব রাজনৈতিক হিসাবনিকাশ বাদ দিয়ে গত মেয়াদে নিজের উন্নয়ন কর্মকান্ডের ওপর বিশেষ ভরসা রয়েছে জানিয়ে তৌফিক আহমদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই ওয়ার্ডে বলতে গেলে উন্নয়নের কোনো ছোঁয়াই লাগেনি আগের সময়টাতে। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর এক মেয়াদেই ৫৬ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেছি। মানুষ এটা আগে ভাবতেও পারতো না। এই ব্যাপক উন্নয়নের মূল্যায়ন ভোটাররা করবে— এটুকু বিশ্বাস আছে আমার।’

তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন ছাড়াও ওয়ার্ড অফিসের সেবা সহজলভ্য করতে আমি কাজ করেছি। এখানে আগে জায়গা-জমির বিরোধ কেউ নিষ্পত্তি করতো না। এসব নিয়ে এলাকায় প্রায়ই ঝগড়াঝাটি হতো। আমি গত ৫ বছরে ৩৬৫টি ভূমি বিরোধের নিষ্পত্তি করেছি। মানুষের দীর্ঘদিনের জমে থাকা সমস্যা সমাধান করতে আমি রাতদিন কাজ করেছি।’

চসিকের ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডের পর চট্টগ্রামের ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে অমুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বেশি ভোট এই ওয়ার্ডে। গত সময়ে এসব ভোটারের বিপদে আপদে পাশে থেকে তাদের মধ্যে বিশেষ আস্থার জায়গাও গড়ে নিতে পেরেছেন তৌফিক। এই বিষয়টিও তাকে অনেকটা এগিয়ে রেখেছে।

এতসব এগিয়ে থাকার মধ্যে তৌফিকের পিছিয়ে থাকার জায়গা হচ্ছে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া কিংবা দলের ভাষায় ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হওয়া। এর মধ্যেই বিদ্রোহী প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায় থেকে। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগও কিছুদিন আগে সভা করে সকল নেতাকর্মীকে দলীয় প্রার্থীকে জেতানোর জন্য কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছে। নির্দেশ অমান্য করলে দল থেকে বহিষ্কার করার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে দলের নেতা কর্মীদের।

এই বিষয়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দল থেকে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আমাদের দায়িত্ব দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করতে কাজ করা। আমরা এর মধ্যে সভা করে সবাইকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছি।এর বাইরে গেলে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তও নিয়েছি আমরা। সবাই তো বলেছে দলের প্রার্থীর জন্য কাজ করবে। বাকিটা কার মনে কী আছে তা তো বলতে পারবো না।’

বিদ্রোহী প্রার্থীর বিষয়ে দলের এই নেতা বলেন, ‘উনি গতবার কাউন্সিলর ছিলেন। এবার মনোনয়ন পাননি। নিজের দায়িত্বে দাঁড়িয়েছেন। উনার বিষয় উনিই ভাল বলতে পারবেন।’

‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হওয়া প্রসঙ্গে তৌফিক বলেন, ‘আমাকে ষড়যন্ত্র করে মনোনয়ন বঞ্চিত করা হয়েছে। আমিও দলের কর্মী। এখানে আওয়ামী লীগ করতে গিয়ে অনেক লম্বা সময় ধরে আমরা চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছি। চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে কঠিন জুলুম নির্যাতনের মুখেও চট্টলবীর মহিউদ্দিন চৌধুরীর ডাকে সাড়া দিয়ে দলের সকল আন্দোলন সংগ্রামে জীবনবাজি রেখেছি আমি ও আমার ভাইয়েরা। আজ আমাদের দলের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি মানুষের চাপে নির্বাচন করছি। গতবারের উন্নয়ন দেখে মানুষই চাচ্ছে আমি নির্বাচন করি।’

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শফিউল আজিমের বক্তব্য জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ‘ব্যস্ত আছেন’ জানিয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান এবং বলেন— ‘আরও কয়েকদিন পর কথা বলবো।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!