দক্ষিণ পতেঙ্গায় ‘হেভিওয়েট’ ছালেহ আহমদের ঘাড়ে তিন বিদ্রোহীর উষ্ণ নিশ্বাস

চট্টগ্রাম সিটির ভোট

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন এখানকার সাবেক কাউন্সিলর ছালেহ আহমদ চৌধুরী। গত চার নির্বাচনের তিনটিতে বিজয়ী হওয়া ছালেহ আহমদ চৌধুরীকে এবারের নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন আওয়ামী লীগের তিন বিদ্রোহী প্রার্থী।

শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, নৌ ও বিমান বাহিনীর ঘাঁটিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নিয়ে গড়ে ওঠা এই ওয়ার্ডটিতে সরকারের আলোচিত একাধিক মেগা প্রকল্পের কাজও চলছে বর্তমান সময়ে।

গুরুত্বপূর্ণ এই ওয়ার্ডে এবারের নির্বাচনে প্রবীণ নেতা ছালেহ আহমদকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন আওয়ামী লীগের তিন বিদ্রোহী প্রার্থী। তারা হলেন আলমগীর হাসান, মঞ্জুর আলম ও নুরুল আবসার। স্থানীয় সূত্রের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর সাথে পাল্লা দিয়ে এই তিন বিদ্রোহীর মধ্যে আলমগীর হাসানও আলোচনায় থাকবেন।

তবে ষাটের দশকে ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা ছালেহ আহমদ চৌধুরী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতিও।
এই ওয়ার্ডে তাকে হেভিওয়েট প্রার্থীই বলা চলে। বিভিন্ন সময়ে চসিকের ভারপ্রাপ্ত মেয়র, শিক্ষা স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যানসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক দায়িত্ব সামলেছেন তিনি।

ছালেহ আহমদের দাবি, বিদ্রোহী তিনজনের প্রার্থিতা যতটা না নিজেদের জয়ের জন্য, তার চেয়ে বেশি দলীয় প্রার্থী ছালেহ আহমদকে পরাজিত করা। আর এর পেছনে মূলত কলকাঠি নাড়ছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম। তিনি নিজে প্রার্থী না হয়ে পরিকল্পিতভাবে এই তিনজনকে মাঠে নামিয়ে দলীয় প্রার্থীর পরাজয় নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন এমনটাই অভিযোগ ছালেহ আহমদের।

নির্বাচনের মাঠে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হওয়া তিন জনের মধ্যে মঞ্জুর আলম আত্মীয়তার সম্পর্কে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের খালাতো ভাই। তবে ছালেহ আহমদের— অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে মঞ্জুর আলম বলছেন, ‘নুরুল আলম ভাই আমাকে নির্বাচন করতে উৎসাহ দেননি। বরং তিনি চান না আমি নির্বাচনে থাকি। আমি নিজের সিদ্ধান্তেই নির্বাচন করছি।’

আওয়ামী লীগ সমর্থক হলেও তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী নন দাবি করে মঞ্জুর আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ সমর্থন করি। কিন্তু দলের কোথাও আমার কোন পদ নেই। এমনকি আমি দলীয় মনোনয়নও চাইনি। আমার পেশা হলো আমি একজন ঠিকাদার। পাশাপাশি সমাজকর্মী হিসেবে সমাজের মানুষের জন্য কাজ করি। সেই তাগিদ থেকেই নির্বাচন করছি। এখন অনেকে আমাকে জোর করে বিদ্রোহী সাজিয়ে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দিতে চাইছে।’

অন্যদিকে বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে খুব বেশি ভাবছেন না— এমন মন্তব্য করে ছালেহ আহমদ বলেন, ‘আমি ৩ বার কাউন্সিলর নির্বাচন করেছি। গত মেয়াদে এখানে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেছি আমি। পাশাপাশি সরকারের যেসব মেগা প্রকল্প এখানে বাস্তবায়িত হচ্ছে, সেসব কাজে যাতে এলাকার লোকজন চাকরি পায় কাজ পায় সেজন্য আমি চেষ্টা তদবির করেছি। কোন ব্যবসা করতে যাইনি। কাজেই এখানকার ভোটারদের ঘরে ঘরে একটা অবস্থান আছে। সুষ্ঠু ভোট হলে মানুষ এসব কিছুর মূল্যায়ন করবে— এটুকু বিশ্বাস আমার আছে।’

তবে নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদকের ভূমিকার সমালোচনা করে ছালেহ আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে যেখানে মনোনয়ন দিয়েছেন, সেখানে নেত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিদ্রোহী প্রার্থীদের ইন্ধন দিচ্ছেন। এটা খুবই দুঃখজনক।’

এই বিষয়ে কথা বলতে ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলমের সাথে দফায় দফায় যোগাযোগের চেষ্টা করেও সফল হওয়া যায়নি।

তবে ছালেহ আহমদের এমন অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে একে ‘অসম্মানজনক’ অভিহিত করে ‘বিদ্রোহী’ কাউন্সিলর প্রার্থী আলমগীর হাসান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘নুরুল আলম সাহেব যখন থেকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি তার ১০ বছর আগে থেকে আমি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। আমি তার কথায় কেন নির্বাচন করবো? আমি কি উনার কথায় চলি? আর আলমগীর কিংবা নুরুল আবছারকেও তিনি কেন প্রার্থী করাবেন? এছাড়া আমি কাউকে হারাতে প্রার্থী হইনি। বরং নিজে জিততে প্রার্থী হয়েছি। আওয়ামী লীগের ৭০ ভাগ নেতা কর্মী আমার সাথে আছে।’

নিজে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কারণ তুলে ধরে আলমগীর বলেন, ‘ছালেহ আহমদ সাহেবের চারটা নির্বাচন করছি আমি। একেবারে সামনের কাতারে থেকে। গতবার তিনি আমাকে বলেছেন সেটা উনার শেষ নির্বাচন। এবার আমাকে সুযোগ দেবেন। সেই কথা তিনি রাখেননি। এই ওয়ার্ড থেকে সবসময় কি তিনিই কাউন্সিলর হবেন? বাকিদের কোন দাবি নাই?’

অন্য বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক উপ কমিটির সাবেক সহ সম্পাদক নুরুল আবছারের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!