দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক কেন্দ্র হবে চট্টগ্রাম বন্দর

একগুচ্ছ উন্নয়ন পরিকল্পনায় অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে চট্টগ্রাম বন্দরের কাজ। নতুন নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয়ের মাধ্যমে বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের চিত্র পাল্টে গেছে। কমে গেছে জাহাজের গড় অবস্থানকাল। কন্টোইনার পরিবহনে গতিশীলতা বেড়েছে ৩০ ভাগ। আরো বেশ কিছু উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে উঠবে দক্ষিন এশিয়ার রিজিওনাল হাব।

বন্দর দিবস উপলক্ষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল জুলফিকার আজিজ। বুধবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের শহীদ আবদুর রহমান মুন্সী অডিটোরিয়ামে ১৩২তম বন্দর দিবস উপলক্ষে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

মতবিনিময় সভায় বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ২০১৭ সালে যেখানে জাহাজের সর্বোচ্চ গড় অবস্থানকাল সাড়ে সাত থেকে আটদিন পর্যন্ত ছিল, সেখানে নতুন গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি আসার করনে জাহাজের গড় অবস্থানকাল কমে গেছে। আমদানিকারকদের এখন সপ্তাহজুড়ে পণ্য হাতে পাওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে না।

বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, কন্টেইনার উঠানামায় নতুন রেকর্ড গড়েছে বন্দর। এই খাতে প্রবৃদ্ধির হার ৯ শতাংশ। আর সাধারণ কার্গো উঠানামায় প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ১৩ শতাংশ। কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের এই পরিসংখ্যান চট্টগ্রাম বন্দরের ৩০ বছর মেয়াদী প্রক্ষাপনকে ছাড়িয়ে গেছে।

রিয়ার এডমিরাল জুলফিকার আজিজ বলেন, বর্তমানে বন্দরের ইয়ার্ডে ৫০ হাজারের বেশি কন্টেইনার রাখা সম্ভব। মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বে-টার্মিনাল, পতেঙ্গায় কনটেইনার টার্মিনাল, লালদিয়া টার্মিনাল ও কর্ণফুলী কন্টেইনার টার্মিনাল নামে চারটি টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে বে- টার্মিনাল, পতেঙ্গায় কন্টেইনার টার্মিনাল প্রকল্প নির্মাণের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে।

বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নতুনভাবে সাজিয়ে তোলার জন্য যুক্ত হয়েছে অনেক পরিবর্তন ও পরিবর্ধন। এছাড়া নতুন উদ্যমে শুরু হয়েছে কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং। এই ড্রেজিং নিশ্চিত করবে অধিক ড্রাফটের জাহাজ ভেড়া। বাংলাদেশ নৌবাহিনী ৪২ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিংয়ের টার্গেট নিয়ে এই প্রকল্পের কাজ করছে। এতে খরচ হচ্ছে ২৪২ কোটি টাকা।

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, গ্রিন পোর্ট কনসেপ্ট এখন যুগের চাহিদা। নতুন করে চারটি জেটি হবে। এর মধ্যে তিনটি কন্টেইনার বাকি একটি তেলের জন্য।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, বে-টার্মিনালে কন্টেইনার ইয়ার্ড এবং ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। ট্রাক টার্মিনালে ৬ হাজার ট্রাক রাখা যাবে। বন্দর থেকে টার্মিনালে যাওয়ার জন্য ফ্লাইওভার নির্মাণ পরিকল্পনায় রয়েছে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, বন্দরের জলসীমা ৭ নটিক্যাল মাইল থেকে বেড়ে এখন ৫৪ নটিক্যাল মাইল। সমুদ্রসীমা বাড়ার কারণে বন্দর ডিউজ পাবে। এর মধ্যে এই খাতে বন্দরের আয় বাড়তে শুরু করেছে।

তিনি বলেন, বে টার্মিনাল প্রকল্পের ভূমি জটিলতা কেটে গেছে। মূল টার্মিনাল নির্মাণের জন্য এখনো আন্তর্জাতিক ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়নি। তবে ৩ মাসের মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ চুড়ান্ত হয়ে যাবে।

বন্দরে কম্পিউটার অপােরেটর নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে আছে কেন – এমন প্রশ্নের জবাবে জুলফিকার আজিজ বলেন, নিয়োগ একটি চলমান প্রক্রিয়া, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিয়োগ প্রক্রিয়ার কাজ সম্পন্ন করা হবে।

মতবিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম, সদস্য (প্রকৌশল) কমোডর খন্দকার আকতার হোসেন, পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম, পরিচালক (নিরাপত্তা) লে. কর্নেল তানভীর আহমদ জায়গীরদার, সচিব মো. ওমর ফারুক।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!