থিয়েটারে বৈঠক, উপনির্বাচনে নৌকাকে জেতাতে একাট্টা নগর আওয়ামী লীগ

চট্টগ্রাম ৮ আসনের উপ-নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদকে বিজয়ী করতে একাট্টা নগর আওয়ামী লীগ। সব মতভেদ ও অভিমান ভুলে নৌকার প্রার্থীকে জয়ী করতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বুধবার (১ জানুয়ারি) সকালে নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম মিলনায়তনে মহানগর আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভায় মোছলেম উদ্দীন বলেন, ‘একজন নিবেদিত প্রাণ রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। এ প্রতীকটি বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার। তাই নৌকা প্রতীকের বিজয় সুনিশ্চিত হলে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। আমি আগেও বহুবার বলেছি এই উপ-নির্বাচনে জয় বা পরাজয়ে সরকার পরিবর্তন হবে না। কিন্তু সরকার ও দলের ভাবমূর্তি যাতে প্রশ্নের মুখোমুখি না হয় সেজন্য আমি নৌকার পক্ষে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সহযোগিতা চাই।’

তিনি আরো বলেন, ‘১৯৭৩ সালের পর থেকে চট্টগ্রাম-৮ আসনটি আওয়ামী লীগের কোন রাজনৈতিক কর্মীর জন্য নির্ধারিত ছিল না। এখানে অতীতে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ। এর আগে বাদল ভাই দুবার নির্বাচিত এমপি হলেও তিনি আওয়ামী ধারার রাজনীতিক ছিলেন না। তবে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এবং মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে তাকে আমি সমর্থন করে বিজয়ী করেছিলাম।’

মোছলেন উদ্দীন আরও বলেন, ‘বাদলের স্বপ্ন ছিল নতুন করে কালুরঘাট সেতু নির্মাণ করা। তার এ স্বপ্নকে পূরণ করাই আমার প্রধান নির্বাচনী অঙ্গীকার। তিনি সবাইকে মতভেদ ও ভিন্নতা ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে ৮ আসনের উপ-নির্বাচনে নৌকার অনুকূলে গণজোয়ার সৃষ্টির করতে হবে।’

বর্ধিত সভায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধি যাতে লঙ্ঘিত না হয় সে ব্যাপারে সচেতন থেকেই আমাদেরকে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যেতে হবে। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন ৬টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের মোছলেম ভাইয়ের বিজয় শুধু নয়, সরকার ও দলের প্রতি গণ আস্থা আদায়ের একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছি। আমরা এটাও জানি দেশ ও জাতিকে ধ্বংস করার জন্য ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত থেমে নেই। এই ষড়যন্ত্রকারীরা নির্বাচনী মাঠে নেমেছে। তারা ভুল তথ্য ও নানারকম বিভ্রান্তি দিয়ে ভোটারদের রায় আদায়ে অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত না হলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে মহল বিশেষ অপপ্রচার চালাবে আওয়ামী লীগের গণভিত্তি নেই এবং এটাও বলবে আওয়ামী লীগের পতন অনিবার্য। আমি বলতে চাই এই মিথ্যার বিরুদ্ধে আমাদেরকে রুখে দাঁড়াতেই এই উপ-নির্বাচনকে জাতির স্বাধীন সার্বভৌম জাতিসত্তাকে রক্ষার জন্য সমস্ত মত পার্থক্য, ব্যক্তিগত পছন্দ, অপছন্দ ভুলে আরামকে হারাম করে প্রতিটি ভোটারকে ভোটকেন্দ্র অভিমুখী করতে হবে।’

সভাপতির ভাষণে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘মোছলেম উদ্দিন আহমদের রাজনীতি শুরু চট্টগ্রাম নগর থেকেই। স্বাধীনতা পূর্বকালে তিনি চট্টগ্রাম শহর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং তিনি মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আখতারুজ্জামান বাবুর অনুসারী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভিক লগ্নে মোছলেম উদ্দিন মহিউদ্দিন ভাইয়ের সাথে আরো কয়েকজনসহ নেভাল এভিনিউর সামনে গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘ আড়াই মাস কারাবরণ করেন এবং কঠোর নির্যাতনের শিকার হয়ে ছলেবলে কৌশলে জেল থেকে বেরিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এ কারণে মোছলেম উদ্দিন ভাই চট্টগ্রাম-৮ আসনের নৌকার উপযুক্ত রাজনৈতিক একজন পরীক্ষিত কর্মী।’

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় বিশেষ বর্ধিত সভায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সুনীল কুমার সরকার, ডা. মো. আফছারুল আমীন এম.পি এড. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন, এম জহিরুল আলম দোভাষ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ রশিদ, কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম, উপদেষ্টা শফর আলী, শেখ মাহমুদ ইছহাক, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য নোমান আল মাহমুদ, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, হাসান মাহমুদ শমসের, অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চন্দন ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী, হাজী জহুর আহমেদ, মো. হোসেন, জোবাইরা নার্গিস খান, ইঞ্জিনিয়ার মানস রক্ষিত, জালাল উদ্দিন ইকবাল, দিদারুল আলম চৌধুরী, আবদুল আহাদ, মো. আবু তাহের, মো. শহীদুল আলমসহ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ এবং ১৫টি থানা, ও ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, আহ্বায়ক, যুগ্ম আহ্বায়কবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এ প্রসঙ্গে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদুল আলম সুজন বলেন, ‘উপ-নির্বাচনে নৌকার বিজয়ের কোনও বিকল্প দেখছি না। নৌকার বিজয়ে নগর আওয়ামী লীগ সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করবে। যে যার অবস্থান থেকে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ছোটখাট মতবিরোধ যা আছে তাও মিটিয়ে ফেলা হচ্ছে।’

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন ৬টি ওয়ার্ডের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ঘোষণা করা হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দরা স্ব-স্ব ওয়ার্ডের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, আহ্বায়ক, যুগ্ম আহ্বায়ক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে নির্বাচনী প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এছাড়া আগামি ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালন উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি গৃহীত হয়। ২০২০ সালে মুজিবর্ষকে তাৎপর্যপূর্ণ করার লক্ষ্যে নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনদর্শন এবং তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনকল্যাণমূলক রাজনীতির বিভিন্ন পদক্ষেপ উপস্থাপন করে প্রকাশনা, সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

এডি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!