ত্রাণের হাহাকার চট্টগ্রামজুড়ে, বরাদ্দ পেয়েও ধরে রেখেছে চসিক

করোনাভাইরাসে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি থাকায় চট্টগ্রামজুড়ে নিম্ন আয়ের মানুষ কার্যত কর্মহীন। তাদের সহযোগিতায় সরকারের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ২৯০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে।

জানা গেছে, সর্বপ্রথম ৪০ মেট্রিক টন চাল কাউন্সিলরদের মাধ্যমে বিতরণ শুরু হলে স্থানীয় সাংসদরা তাদের কাছে তালিকা চান কারা পাচ্ছে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের চাল। সাংসদদের অভিযোগ তারা আজও সেই তালিকা পাননি। তবে সমন্বয়হীনতা নিয়ে চট্টগ্রাম প্রতিদিনে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান নির্দেশ দিয়েছিলেন সাংসদদের সাথে যেন সমন্বয় করা হয়। এরপর ৫ এপ্রিল জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিংয়ের পর ত্রাণ বিতরণে যেন কাউন্সিলরা স্থানীয় সাংসদদের সাথে সমন্বয় করেন এবং ত্রাণ কোন ব্যক্তির নামে নয়, প্রধানমন্ত্রীর নামে বিতরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। ওই মিটিংয়ের পর পরই আগের ৪০ মেট্রিক টনের সঙ্গে আরও ২৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) জন্য।

জানা গেছে, সোমবার (১৩ এপ্রিল) পর্যন্ত চসিক সরকারি ত্রাণের মাত্র ৯০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করেছে। এতে যেমন নগরজুড়ে ত্রাণের জন্য হাহাকার বাড়ছে, তেমনি ক্ষুণ্ন হচ্ছে সরকারের ভাবমূর্তিও।

চসিকের ত্রাণ বিতরণের ধীরগতি দেখে জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াছ হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার নির্দেশ হলো কোন মানুষ যেন অভুক্ত না থাকে। সেই নির্দেশনার আলোকে প্রথম বরাদ্দ তো জরুরিভিত্তিতেই দেওয়া হলো। এরপর সর্বমোট ২৯০ মেট্রিক টন চাল বুঝিয়ে দিলাম। তারা ডিস্ট্রিবিশনে এত স্লো কেন?’

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামসুদ্দোহা বলেন, ‘আমরা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে ২৯০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি। ইতোমধ্যে ৯০ মেট্রিক টন বিতরণ হয়েছে। বাকিগুলোও বিতরণের প্রক্রিয়া চলছে।

জানা গেছে, ২৯০ মেট্রিক টন চালের মধ্যে ৪১টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর ও ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর প্রত্যেকে ৩৩০ থেকে ৩৩৫ পরিবার হিসেবে সর্বসাকুল্যে ১৮ হাজার পরিবারের মধ্যে ৫ কেজি হিসেবে চাল বিতরণ করেছেন। চসিকের হিসেবেই ৯০ মেট্রিক টন বিতরণ হয়েছে। বাকী ২০০ মেট্রিক টন তারা এখনও বিতরণ করেনি।

আবার প্রতি ওয়ার্ডের কোন্ ৩৩০ পরিবার সরকারি ত্রাণের চাল পেয়েছে, সেই তালিকা কাউন্সিলরদের থেকে পাননি স্থানীয় সাংসদরা। তবে নগরীর রৌফাবাদ, বাস্তুহারা কলোনী, শান্তিনগর কলোনী, চান্দগাঁও বিল্লা কলোনী, পাহাড়তলী, আমবাগান, ফিরোজশাহ, উত্তর পতেঙ্গা, হালিশহর, আকবরশাহ, নবীনগরসহ বেশ কিছু এলাকার বস্তিতে খবর নিয়ে জানা গেছে তারা বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন ছাড়া সরকারের কোন ত্রাণ পাননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে চসিকের এক কাউন্সিলর বলেন, ‘আমার এলাকায় আমি প্রায় সাড়ে চার হাজার পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছি। ত্রাণের চাল যা ছিল সেই ৩৩০ পরিবারের প্যাকেটের সাথে আরো কিছু পণ্য যোগ করে আমারগুলোর সাথে বিতরণ করেছি।’

আরও দুই জন কাউন্সিলরও প্রায় একই জবাব দিয়েছেন। এদিকে দলের একাধিক নেতা দাবি তুলেছেন, ‘ত্রাণ বিতরণ যেন কোন নেতার নামে না হয়। সরকারি ত্রাণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নামেই বিতরণ হোক এবং স্বচ্ছতার সাথে তা দ্রুত বিতরণ হোক।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!