ত্বকের অ্যালার্জির লক্ষণ থাকবে শৈশবেই!

ত্বকে প্রদাহজনিত রোগ মানুষকে বেশ ভোগায়। শরীরে যখন ত্বকের এলার্জি বাসা বেধেই ফেলে, তখন এর রেশ টেনে যেতে হয় দীর্ঘদিন। এটি খুব ভোগান্তির। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা বলছেন, শৈশবের প্রাথমিক ইমিউন সিস্টেম (রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা) দেখেই বলে দেওয়া যাবে শিশুর অ্যালার্জি জাতীয় অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা ভবিষ্যতে রয়েছে কি না?

এ বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা চালিয়েছে সুইজারল্যন্ডের জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। গবেষণা শেষে তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেন যে, শৈশবেই মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গঠিত হয়। ‘স্বাস্থ্যবিধি হাইপোথিসিস’ নামের ওই গবেষণাপত্রে তারা বলেন, উন্নত স্বাস্থ্যবিধি, কৃষি ও নগরায়নের পরিবর্তন হয়েছে। এর ফলে আবহাওয়ায়ও বড়ো ধরনের একটি পরিবর্তন এসেছে। এ সবই আমাদের শরীরের প্রতিরোধী সিস্টেমের ওপর প্রভাব ফেলছে। ধারণা করা হয় যে পরিবর্তিত এই সময়ে রোগের বিকাশ ঘটছে প্রতিনিয়ত। ক্রনিক (নিয়মিত) প্রদাহজনক রোগ, অ্যালার্জি এবং মানসিক ব্যাধি বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকটাই। বিষণ্ণতার রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে।

গবেষণায় জুরিখ এবং লাউসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের একটি দল বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের রোগের তথ্য বিশ্লেষণ করে। এ সময় তারা অ্যালার্জি, ভাইরাল এবং ব্যাকটেরিয়া রোগ এবং শৈশবকালীন মনোচাপের ঘটনা ব্যাখ্যা করেন।

প্রতি পাঁচজনের একজনের রোগ প্রতিরোধী সিস্টেম আছে
আশার কথা হলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহাল তবিয়তে আছে আমাদের অনেকের শরীরে। বিজ্ঞানীরা বললেন, নিরীক্ষণের প্রথম দলে দেখা গেল প্রত্যেক সাধারণ মানুষের ‘নিরপেক্ষ’ ইমিউন (প্রতিরোধী) শক্তি আছে। শৈশবে তাদের রোগের বোঝা তুলনামূলকভাবে কম ছিল।

দ্বিতীয় দলে শৈশবকালীন রোগের বোঝা তুলনামূলক আরও কম ছিল। এই দলটির শরীরে বিশেষত প্রতিরোধী, স্থিতিশীল বা ভাল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেখা গেছে। এমনকি বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে মাম্প বা রুবেলার মতো সাধারণ শৈশবকালীন রোগের লক্ষণগুলোও এই দলে কম দেখা গেছে।

এখানে মোট সাত শতাংশ মানুষের মধ্যে এলার্জি রোগের প্রতিফলন দেখা গেছে। নয় শতাংশের ছিল বিভিন্ন ওষুধের কারণে ড্রাগ অ্যালার্জি। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, ব্যাকটেরিয়া এবং ফুসকুড়ি-ক্ষতিকারক শৈশবকালীন রোগ যেমন লালচে জ্বর, পের্টুসিস বা রুবেলা।

একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ
জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গবেষক ভ্লাদেটা আজাদাসিক গ্রস বলেছেন, ‘আমাদের গবেষণা এইভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুমানকে সমর্থন করে, তবে এটি অনেক সময় ধারণাকেও অতিক্রম করে যায়।’

এতে বলা হয়েছে, তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা জ্যেষ্ঠ, তারা ছিলেন তুলনামূলকভাবে ‘নিরপেক্ষ’ এবং ‘স্থিতিশীল’। পরের দলে ঘটেছে ঠিক বিপরীতটি। তুলনামূলক কনিষ্ঠদের মধ্যে অ্যালার্জির পরিমাণ বেশি লক্ষ্য করা যায়।

দুই দলের মধ্যে পার্থক্য বিশাল। স্থিতিশীল দলের লোকেরা পুরোনো প্রদাহজনক রোগের বিরুদ্ধে নয় বরং মানসিক ব্যাধির বিরুদ্ধে আরও সুরক্ষিত ছিল। অপরদিকে দ্বিতীয় দল বা মিশ্র গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে পরবর্তীতে বয়স্ক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন গবেষকরা। ‘আক্রান্ত’ গ্রুপটি একইভাবে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরে মানসিক অসুস্থতার পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত রোগে ভুগতে পারে।

ভ্লাদেটা আজাদাসিক গ্রস বললেন, গবেষণার ফলাফলগুলো ইঙ্গিত করে যে মানুষের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থাটি (ইমিউনিটি) মানসিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে একটি সুইচবোর্ডের মতো কাজ করে। তারা আমাদেরকে বুঝতে সাহায্য করে কেন মনস্তাত্ত্বিক আঘাতের ইতিহাস নেই এমন অনেক লোক মানসিক অসুস্থতার কারণে কষ্ট পায়। বিপরীতভাবে, কেন কিছু আক্রান্ত ব্যক্তির দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত রোগ আসার পূর্ব লক্ষণ প্রকাশ পায়।

সাইন্স ডেইলি অবলম্বনে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!