নৌকার বিদ্রোহী/ তৈয়বসহ ফটিকছড়ির ১১ নেতার কাছে দলের ‘পরোয়ানা’

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের ১১ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ। গেল উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া এবং দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রমের অভিযোগ এনে তাদেরকে এই নোটিশ দেওয়া হয়।

জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. মাঈনুদ্দিন স্বাক্ষরিত নোটিশ প্রাপ্তির এক সপ্তাহের মধ্যে জবাব জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

চিঠিতে ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান হোসাইন মো. আবু তৈয়বের বিরুদ্ধে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। বাকি ১০ নেতাকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর নৌকা প্রতীকের পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়।

যারা নোটিশ পেলেন
নোটিশপ্রাপ্তরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক ফখরুল আনোয়ার, সদস্য মো. শাহজাহান ও এস এম বাকের এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল আলম বাবু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুল হক, উপজেলা চেয়ারম্যান হোসাইন মুহাম্মদ আবু তৈয়ব, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবদুল কাইয়ুম, যুগ্ম সম্পাদক মুজিবুর রহমান স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ আবদুল মান্নান ও মো. শাহ নেওয়াজ এবং যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মো. জানে আলম চেয়ারম্যান।

এদিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গেল উপজেলা নির্বাচনের পর এক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সুনির্দিষ্ট কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে কেন্দ্রে অভিযোগ করার পর এহেন কারণ দর্শাও নোটিশ দেয়ার জন্য উত্তর জেলা কমিটির কাছে চিঠি প্রেরণ করা হয়।

এ ব্যাপারে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যাপক মাঈনুদ্দিন বলেন, ‘কেন্দ্রের নির্দেশে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার্থে কারণ দর্শাও নোটিশ দেয়া হয়েছে। এর পর কী হবে কেন্দ্রই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।’

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক সাংগঠনিক ব্যবস্থা চূড়ান্ত করা হয়। দুই দফা তারিখ নির্ধারণ করেও আগস্ট মাস, ডেঙ্গু ও গুজব প্রতিরোধে ব্যস্ত সময় পার করার কারণে তা পিছিয়ে গেলেও এবার চূড়ান্তভাবেই শাস্তির পথেই এগোল কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।

দলের সিদ্ধান্ত অনুসারে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, বোয়ালখালী, লোহাগাড়া ও বাঁশখালী উপজেলার পাঁচ আওয়ামী লীগ নেতা শাস্তির মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে ফটিকছড়ি ও লোহাগাড়ায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী দুজন চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিতও হয়েছেন। এছাড়া তাদের মদদদাতাদেরও শাস্তির মুখে পড়তে হচ্ছে।

এরআগে গত ১২ জুলাই সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এসব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। সেই সিদ্ধান্তের আলোকেই মূলত এই শাস্তি কার্যকর করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি।

চট্টগ্রামে দলীয় পদে থাকার পরও সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন করায় শাস্তির মুখোমুখি হতে যাওয়া নেতারা হলেন চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান হুসেইন মোহাম্মদ আবু তৈয়ব, লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল। বাঁশখালী উপজেলায় দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও শ্রমবিষয়ক সম্পাদক মো. খোরশেদ আলম। বোয়ালখালীতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল কাদের সুজন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের এডহক কমিটির সহ সভাপতি শ্রমিক নেতা এসএম নুরুল ইসলাম।

এছাড়া আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় কোনও পদে না থাকলেও দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করেছেন পটিয়ায় সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা ও বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি মুহাম্মদ সাজ্জাত হোসেন। চন্দনাইশে এলডিপি থেকে এসে আওয়ামী লীগে ফুল দিয়ে যোগ দিলেও আনুষ্ঠানিক কোনো পদে না থাকা নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার। স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচিত হলেও কোনও পদে নেই উপজেলা নির্বাচনের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নুর হোসেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!