তুমুল বর্ষণে বিপর্যস্ত চট্টগ্রাম, জলমগ্ন নগরীতে মানুষের দুর্ভোগ

টানা বৃষ্টি হচ্ছিল রাত থেকে, সকালে তুমুল বর্ষণ শুরুর পর চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে তলিয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকা। অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ভেঙে পড়েছে গাছপালাও। এতে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে চট্টগ্রাম নগরীতে। সোমবার (৮ জুলাই) দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ১৩৬ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে চট্টগ্রামে।

রাত থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে যেসব এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে, তার মধ্যে রয়েছে বহদ্দারহাট, ২ নাম্বার গেট, মুরাদপুর, চকবাজার, অক্সিজেন, সল্টগোলা, কমার্স কলেজ এলাকা, প্রবর্তক মোড়, খুলশি বিজিএমইএ রোড, পাঁচলাইশ রোড, রিয়াজুদ্দিন বাজার, তিন পুলের মাথা, শোলকবহর, বাদুরতলা, ডিসি রোড, মেহেদীবাগ, আগ্রাবাদ, রাহাত্তারপুল, খাতুনগঞ্জ, রহমতগঞ্জ, হালিশহর ও নয়াবাজার।

ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নগরীর যেসব সড়কে রাস্তায় যানচলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে, তার একটি তালিকা প্রকাশ করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। এর মধ্যে রয়েছে কাপ্তাই রাস্তার মাথা, বহদ্দার হাট মোড়, মুরাদপুর মোড়, শোলক বহর এলাকা, দুই নাম্বার গেইট এলাকা, অক্সিজেন মোড়, বাদশা মিয়া পেট্রোল পাম্প, জিইসি মোড় থেকে খুলশী,শিল্পকলা এলাকায় মোহাম্মদ আলী রোড, ওয়ারলেস গেইট মুরগি ফার্ম, প্রবর্তক মোড়, চকবাজার গুলজার মোড়, বাদুরতলা জঙ্গি শাহ মাজার মোড়, ডিসি রোড, ওয়াসা মোড়, নিউ মার্কেট থেকে আমতল, নিউ মার্কেট থেকে বিআরটিসি মোড়, জামাল খান মোড়, চৌমুহনী থেকে কদমতলী মোড়, আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড় থেকে এক্সেস রোড, সদরঘাট মোড়,সল্টগোলা ক্রসিং, ইপিজেড থেকে বন্দরটিলা, মনসুরাবাদ পুলিশ লাইন এলাকা।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার (ট্রাফিক উত্তর) হারুন-উর-রশিদ হাযারী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘যানজটের তেমন কোন সমস্যা নেই। বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। গর্ত ও ম্যানহোলের কারণে মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। সিটি করপোরেশনসহ জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব যাদের, তাদেরকে এখন কাজ করতে হবে। এখানে আমাদের তেমন কোন কাজ নেই।’

পানি জমে তলিয়ে গেছে প্রবর্তক মোড় এলাকা।
পানি জমে তলিয়ে গেছে প্রবর্তক মোড় এলাকা।

নগরীর প্রায় সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। নগরবাসীর ভরসা এখন রিকশা, অটোরিকশা, ভ্যান ও টেম্পো। বিভিন্ন সড়কে পানি জমে অফিসগামী যাত্রীদের নাকাল হতে হয়েছে দিনের শুরুতেই। মুরাদপুর থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভারেও হাঁটু পানি জমে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও বাসাবাড়ি, বাজার সব জায়গায় এখন হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি। এই বিরূপ আবহাওয়ার মধ্যে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী আর জীবিকার তাগিদে পথে নামা মানুষকে যানবাহন না পেয়ে কষ্টে ভুগতে হচ্ছে। কোনো গাড়িতে উঠতে পারলেও যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে দীর্ঘ সময়।

খুলশী সংলগ্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতার।
খুলশী সংলগ্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতার।

চট্টগ্রাম পতেঙ্গা প্রধান আবহাওয়া অফিসের ডিউটি অ্যাসিসট্যান্ট মাহমুদল আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সোমবার চট্টগ্রামে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় চট্টগ্রামে ১৩৬ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আজ, কাল মঙ্গলবার ও পরশু বুধবার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।’ একই সঙ্গে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ঢাকা, চট্টগ্রাম, মোংলা ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত বহাল রাখা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর আগেই সতর্ক করে দিয়েছিল, মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় দেশের অন্যান্য জায়গার মতো চট্টগ্রামে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হবে।

ভূমিধসের আশঙ্কায় সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে লোকজন
চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড়গুলোর পৃষ্ঠ ও পাদদেশে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারীদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সক্রিয় রয়েছে। বৃষ্টির কারণে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পাহাড় থেকে ৩৬১টি পরিবারকে সরিয়ে জেলা প্রশাসনের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। অন্যদের সরানোর কাজ চলছে।

এদিকে অতিবৃষ্টির কারণে পাহাড় ও ভূমিধস জনিত সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় মেডিকেল টিম গঠন ও কন্ট্রোল রুম চালু করেছে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়। যে কোন প্রয়োজনে ৬৩৪৮৪৩ নম্বরে যোগাযোগের জন্য বলা হয়েছে।

জলমগ্ন চট্টগ্রামের রেয়াজউদ্দিন বাজার এলাকা।
জলমগ্ন চট্টগ্রামের রেয়াজউদ্দিন বাজার এলাকা।

ইতিমধ্যে পাহাড়ের পৃষ্ঠ ও পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদে আশ্রয় নেওয়ার জন্য মহানগরী এলাকায় মোট আটটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এবং সহকারী কমিশনারদের (ভূমি) সমন্বয়ে এ আশ্রয়কেন্দ্র কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত শুকনা খাবার ও পানির মজুদ রয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

পানিতে থৈ থৈ চট্টগ্রামের মুরাদপুর এলাকা।
পানিতে থৈ থৈ চট্টগ্রামের মুরাদপুর এলাকা।

চট্টগ্রামের আকবর শাহ এলাকা ও পাহাড়তলী এলাকাধীন পাহাড়গুলোর জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে পাহাড়তলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। কৈবল্যধাম, লেকসিটি, ফয়েজ লেক এলাকার ১ নং ঝিল, ২ নং ঝিল এলাকার জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ফিরোজা শাহ ই-ব্লক স্কুলে। মধুশাহ পাহাড়, পলিটেকনিক কলেজ সংলগ্ন পাহাড়ের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে চট্টগ্রাম মডেল হাই স্কুলে। জালালাবাদ হাউজিং সংলগ্ন পাহাড়ের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে জালালাবাদ বাজার সংলগ্ন শেডে। ট্যাংকির পাহাড় এলাকার জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে আল হেরা ইসলামিয়া মাদ্রাসায়। মিয়ার পাহাড়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে রৌফাবাদ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে। মতিঝর্ণা পাহাড়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে লালখান বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পোড়া কলোনী এলাকার পাহাড়ের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ছৈয়দাবাদ স্কুলে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!