তিন জোড়া ট্রেনই অচল, দুর্ভোগে উত্তর চট্টগ্রামের যাত্রী

চট্টগ্রাম-নাজিরহাট লাইনে ৪ বছর আগে চালু হওয়া তিন জোড়া ডিজেল ইলেকট্রনিক মাল্টিপল ইউনিট (ডেমু) ট্রেন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে শহরে যাতায়াতকারী উত্তর চট্টগ্রামের যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ১৯২৫ সালে বৃটিশ সরকার চট্টগ্রাম পুরাতন রেলস্টেশন টু নাজিরহাট ট্রেন সার্ভিস চালু করে। এ লাইনে ৯০ দশকে দৈনিক আটটি ট্রেন চলাচল করলেও ২০০৬ সালে দু’টিতে নেমে আসে। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ২০৩ কোটি ৪ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে রেললাইন সংস্কার করা হয়। যাত্রীদের দাবি, মানববন্ধন, স্মারকলিপি দেওয়ার পর ২০১৫ সালে ৪ জুলাই রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক এ লাইনে এক জোড়া ডিজেল ইলেকট্রনিক মাল্টিপল ইউনিট ( ডেমু) ট্রেন চালু করেন। পরবর্তীতে বাড়িয়ে তা তিন জোড়া করা হলে লোকাল এক জোড়াসহ ট্রেনের সংখ্যা দাঁড়ায় চার জোড়ায়। ডেমু ট্রেনগুগুলো ঝাউলা, ষোলশহর, ক্যান্টনমেন্ট, ফতেয়াবাদ, জোবরা, হাটহাজারী, চারিয়া মাদ্রাসা, সরকারহাট,কাটিরহাট ষ্টেশনে যাত্রী উঠানাম করে থাকে। কম সময়ে গন্তব্যে আসা যাওয়া করার কারণে দিন দিন বাড়তে থাকে ডেমু ট্রেনে যাত্রীর সংখ্যা। চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রেল লাইনে কর্মজীবী, হকার, শিক্ষার্থীসহ দৈনিক দশ হাজার যাত্রী শহরে যাতায়াত করে। ৭ ডিসেম্বর যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে একসঙ্গে তিন জোড়া ডেমু ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে মাত্র এক জোড়া ট্রেনে যাত্রীদের শহরে যাতায়াতে দুর্ভোগ বেড়েছে । ফলে শহরে চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীসহ নানা পেশাজীবী লোকজন শহরে বাসা বাড়িতে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানান ভূক্তভোগী অনেকে।

এ লাইনে চলাচল করা একমাত্র লোকাল ট্রেনটিতে চড়ে দেখা যায়, প্রচণ্ড যাত্রীর চাপ। ট্রেন স্টেশনে এলে যাত্রীদের হুড়োহুড়ি শুরু হয়। অনেকে ট্রেনে যাতায়াত করতে না পেরে বিকল্প পথে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন।

১১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম-নাজিরহাট লোকাল-ডেমু ট্রেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির সদস্যরা পুনরায় ডেমু ট্রেন চালুর দাবি করলে কর্তৃপক্ষ শিগগিরই চালুর আশ্বাস দিয়েছেন । তবে এ লাইনে ডেমু ট্রেন পুনরায় কবে চালু হবে তা পূর্বাঞ্চল মহাব্যবস্থাপক নাসির উদ্দিন আহমেদ ও প্রধান পরিবহন কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম স্পষ্ট কিছুই বলতে পারেননি প্রতিবেদকে।

যাত্রীদের অভিযোগ করেন, এ লাইনে যাত্রীর প্রচুর চাপ। যেখানে ট্রেন বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে, সেখানে তিন জোড়া ডেমু ট্রেনই অনেক দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে মাত্র এক জোড়া ট্রেন চলাচলের কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম-নাজিরহাট লোকাল ও ডেমু ট্রেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মুহাম্মদ শওকত হোসেন চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম-নাজিরহাট লাইনে যাত্রীর চাহিদা থাকার পরও যান্ত্রিক ত্রুুটির কারণে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ডেমু ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। আমরা রেল কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করেছি। তারা পুনরায় চালুর আশ্বাস দিয়েছেন। তবে কবে চালু হবে জানিনা।

সহসভাপতি মো জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা চট্টগ্রাম-নাজিরহাট লাইনে আরও দুই জোড়া ট্রেন বাড়িয়ে ছয় জোড়া চালুর দাবি করে আসছি৷ উল্টো তিন জোড়া ডেমু ট্রেনই বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা ডেমু ট্রেন চাইনা, লোকাল ট্রেন হলেও দ্রুত চালু করে জনদুর্ভোগ কমানোর দাবি জানাই।

জানা গেছে, রেলপথে যাত্রীসেবা বাড়ানোর জন্য সরকার ২০১৩ সালে ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে চীন থেকে ২০ জোড়া (৬০টি কোচ) ডেমু ট্রেন আমদানি করে। এসব ট্রেনের মধ্যে ১৮ জোড়া পূর্বাঞ্চলে চালু করা হলেও ৬ বছরের মাথায় বেশিরভাগ ট্রেন অচল হয়ে পড়ে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রেলেওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তার (ডিটিও) সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।

প্রধান পরিবহন কর্মকর্তা (সিওপিএস) নাজমুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম-নাজিরহাট ডেমু ট্রেন পুনরায় চালুর ব্যাপারে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্তের পর কবে চালু হবে তা জানা যাবে।

প্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. মিজানুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম-নাজিরহাট লাইনে ডেমু ট্রেন চাকার সমস্যার কারণে হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেছে। সাময়িক বন্ধ হওয়া ট্রেনের চাকার কাজ শেষ হলে ২০ ডিসেম্বর পুনরায় চালু হতে পারে বলে জানান তিনি৷

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!