তিন কোটির গাড়িতে ১ কোটিই লাভ!

৪ বছর ধরে চলছে এক গাড়ির নিলাম

গাড়ির দাম তিন কোটি টাকা। কিন্তু নিলামে ডেকে তা খালাস না নেওয়ায় কাস্টমসের খাতায় জমা হলো ১ কোটি টাকা ১৪ লাখ টাকা। গাড়িটিও রয়ে গেছে সেখানে। গাড়ির অতিরিক্ত দামে নিলাম ডেকে কাস্টমার পায়নি কাস্টমস। ফলে নিলামগ্রহীতাও আর খালাস নেননি গাড়িটি। খালাস না নিলেও নিলামগ্রহীতাকে প্রতি নিলামে ১০ শতাংশ টাকা কাস্টমসে জমা দিতে হয়। এভাবে পরপর তিনবার গাড়িটি নিলাম ডেকে খালাস না নেওয়ায় বিনা আয়াসে কাস্টমস পেয়ে গেল ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা!

নিলাম সূত্র জানায়, সর্বশেষ চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলামে চার বছরের পুরনো লেক্সাস ব্র্যান্ডের একটি গাড়ির দাম উঠেছে ৩ কোটি ১২ লাখ টাকা। এর আগেও দুইবার নিলাম হয়েছিল একই গাড়ি। ওই দুইবারে কাস্টমস পেয়েছে ৮২ লাখ টাকা। সর্বশেষ নিলামের ৩ কোটির ১২ লাখ টাকার ১০ শতাংশ হারে ৩২ লাখ টাকা পাবে কাস্টমস। লেক্সাস ব্র্যান্ডের এ গাড়ি থেকে ১০ শতাংশের এ হারে তিনবারের নিলাম থেকে কাস্টমস পাচ্ছে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা।

জানা গেছে, ‘লেক্সাস এলএক্স৫৭০’ মডেলের গাড়িটি ২০১৬ সালে জাপানের টয়োটা কোম্পানি বাজারে আনে। এর সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ৫ হাজার ৬৬২। সাদা রঙের ৪ সিলিন্ডারের এই গাড়িটি মাত্র ৫৪ কিলোমিটার চলেছে। গাড়িটি পড়ে আছে বন্দরের এফ শেডে। নিলাম থেকে দুই দফায় বিক্রির অনুমোদন দিয়েছিল কাস্টমসের নিলাম কমিটি। কিন্তু দরদাতা পিছু হটায় আর বিক্রি করা যায়নি। এতে উল্টো লাভই হয়েছে কাস্টমসের। কারণ দরদাতা পিছু হটলেও দরপত্রে অংশ নেওয়ার জন্য ১০ শতাংশ জামানত সরকারের কোষাগারে জমা হয়ে যায়। তাতে গাড়িটি বিক্রি না হলেও দুই দফায় ৮২ লাখ টাকা রাজস্ব পেল কাস্টমস।

গত বছরের ২৫ নভেম্বর গাড়িটি আবার নিলামে তোলা হয়। নিয়মানুসারে সর্বোচ্চ দরদাতার তালিকাও প্রকাশ করা হয়। তাতে দেখা যায়, পটিয়ার ছনহরা এলাকার মো. জসিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি এই গাড়িতে ৩ কোটি ১২ লাখ টাকা দর দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হন। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যে তিনিও পিছু হটেন। এতে বাতিল হয় তার নিলাম ক্রয়ও। ফলে কাস্টমসের কোষাগারে জমা পড়ে ৩২ লাখ টাকা।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের গাড়ির নিলাম ক্রয়কারী (বিডার) ইকবাল হোসেন গাড়িটি বিক্রি না হওয়ার কারণ হিসেবে মনে করেন, ‘এতো দামে বিক্রির জন্য ক্রেতা না পেয়ে প্রতিবারই নিলাম গ্রহণকারী পিছু হটে। গাড়ির দাম বেশি হওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। যদি দাম আরও কম দিয়ে ডাকা হতো তাহলে কাস্টমারের কাছে বিক্রি করা যেতো। গাড়িটি বিক্রি না হয়েও গাড়ির দাম পেয়ে যাচ্ছে কাস্টমস হাউস। এটা সরকারের লাভ। গাড়িটিও আছে, টাকাও পাচ্ছে।’

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের নিলাম শাখার উপ-কমিশনার (ডিসি) ফরিদ আল মামুন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘নিলাম হওয়ার পর গাড়িটি খালাস না করায় সর্বশেষ নিলাম থেকেও সরকারের কোষাগারে জমা হয়েছে ৩২ লাখ টাকা। তিনবার নিলাম থেকে মোট ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা পেল সরকার।’

গাড়িটির আমদানিকারক কারা এবং কেন যথাযথ নিয়মে খালাস নেওয়া হয়নি তা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানাতে পারেননি ওই কর্মকর্তা। তবে তিনি ধারণা করেন, আমদানিকারকও বন্দর থেকে বিক্রি করতে না পারায় গাড়িটি খালাস করেননি। কারণ খালাস করতে হলে বিপুল অর্থ শুল্ক হিসেবে জমা দিতে হতো কাস্টমসকে। বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও খালাস না করায় নিলামে এসেছে গাড়িটি।

এসএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!