তারেকের সম্মতিতে চট্টগ্রামে বিএনপির সমাবেশ যে কারণে বাতিল হল

চট্টগ্রামের বিএনপির পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ বাতিল করার সিদ্ধান্তে দলের ভেতরেই ভাসছে নানা গুঞ্জন, পাশাপাশি ক্ষোভও। সমস্ত আয়োজন শেষ করার পর মুহূর্তে দলের এমন সিদ্ধান্ত অনেককেই করেছে ক্ষুব্ধ। শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) গত ছয়টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারচুপির প্রতিবাদ এবং নতুন করে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির ছয় মেয়র পদপ্রার্থীর অংশগ্রহণে এই সমাবেশটি হওয়ার কথা ছিল চট্টগ্রামের নাসিমন ভবনের সামনে। কিন্তু জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রোববার ঢাকায় অনুষ্ঠেয় সমাবেশ ঝুলে পড়তে পারে— এমন আশঙ্কাতেই শেষমেশ চট্টগ্রামের সমাবেশ বাতিল করেছে বিএনপি।

জানা গেছে, ঢাকা মহানগরীর কয়েকজন নেতার তৎপরতা এবং চট্টগ্রামের স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সমীকরণে বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাতে চট্টগ্রামের বিএনপির পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি বাতিলের ঘোষণা আসে। তবে হঠাৎ এমন ঘোষণায় মেয়র পদপ্রার্থীদের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতাও কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রামের নেতারাও বলছেন, সমাবেশের ব্যাপারে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পরও শেষ মুহূর্তে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত তাদের বাধ্য হয়েই মেনে নিতে হয়েছে। তবে নির্বাচনে কারচুপির প্রতিবাদের পাশাপাশি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের ইস্যুতেও দুই সমাবেশ আগের নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী হতে পারতো— এমন মতামত তাদের।

নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপির ছয় মেয়র পদপ্রার্থী পৃথক দিনে ছয় মহানগরীতে সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করে। এরই অংশ হিসেবে শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ঢাকা থেকে শতাধিক গাড়ি নিয়ে ওইদিন সকালেই তাদের চট্টগ্রাম অভিমুখে রওনা হওয়ার প্রায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছিল।

কিন্তু এরই মধ্যে গত ৯ ফেব্রুয়ারি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের ইস্যু সামনে চলে আসে। ওই ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ঢাকাসহ মহানগরীগুলোতে প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। যদিও ওই বৈঠকে এক দিনের পূর্বনির্ধারিত চট্টগ্রামের কর্মসূচি বাতিল করা হয়নি। ফলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চট্টগ্রামের সমাবেশের প্রস্তুতি চলে।

এ উপলক্ষে দেশের অন্য সিটি কর্পোরেশনগুলোর মেয়রদেরও কেউ কেউ ঢাকায় চলে আসেন। অন্যদিকে ব্যানার ফেস্টুন তৈরি, সমাবেশের জন্য প্রশাসনের অনুমতি এবং চট্টগ্রামে হোটেল বুকিংসহ সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন করা হয়। এরপর দিনভর এ নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে কথা হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। প্রথমে তারেক জানান, কর্মসূচি ঠিক থাকবে।

এরই মধ্যে সমস্যা তৈরি হয় ঢাকার মেয়র পদপ্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইসরাক হোসেনের বড় আয়োজনের কারণে। ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা নবী উল্লাহ নবীসহ ঢাকার বেশ কয়েকজন সাবেক কাউন্সিলর ইসরাকের সঙ্গে গাড়িবহরে চট্টগ্রামে রওনা হওয়ার কথা জানান। এতে চিন্তায় পড়ে যান ঢাকা সমাবেশের আয়োজনকারীরা। ফলে এ নিয়ে তারা পাল্টা তদবির করেন তারেকের কাছে। ঢাকা মহানগরীর প্রভাবশালী কয়েক নেতা কথা বলেন চট্টগ্রামের আয়োজকদের সঙ্গে। প্রশ্ন তুলে তারা বলেন, সব লোক চট্টগ্রামে নিয়ে গেলে ঢাকায় সমাবেশ কিভাবে হবে?

সূত্র জানায়, নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে ছয় মহানগরীতে মেয়র পদপ্রার্থীদের পৃথক কর্মসূচি মূল দলের কেন্দ্রীয় ও প্রভাবশালী অনেকেই ভালো চোখে দেখছেন না। তাদের কেউ কেউ মনে করেন, ওই সমাবেশগুলোতে ব্যাপক শোডাউন হলে স্থানীয়ভাবে তাঁদের প্রভাব ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ কারণে চট্টগ্রামের দু-একজন নেতাও ওই কর্মসূচি পিছিয়ে দেওয়ার নেপথ্যে ভূমিকা পালন করেন বলে জানা যায়।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!