তামিমের ফেরার ম্যাচে ঢাকাকে রাঙালেন মেহেদী হাসান

তামিম ইকবাল আর ওয়াহাব রিয়াজ ফেরায় ঢাকা প্লাটুনের শক্তি বেড়ে গিয়েছিল অনেকখানি। তবে তামিম-ওয়াহাবের সবটুকু আলো কেড়ে নিয়ে ঢাকাকে হাসালেন মেহেদী হাসান। টসে জিতে একপ্রান্তে নিজে বোলিংয়ের সূচনা করলেও অন্যপ্রান্তে মেহেদী হাসানকে নিয়ে আসেন অধিনায়ক মাশরাফি। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিতে বেশি সময় নেননি মেহেদী। তৃতীয় বলেই সৌম্য সরকারকে বোল্ড আউট করে দিনটিকে নিজের করে নেয়ার শুরু করেন মেহেদী। নিজের পরের ওভারেও আবার মেহেদী ঝলক। এবার রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফেরত পাঠান অনেকদিন ধরে নিজেকে হারিয়ে খোঁজা সাব্বির রহমানকে। প্রথম দুই ওভারে মাত্র ২ রান দেয়া মেহেদী পরের দু’ওভারে উইকেটের দেখা না পেলেও পাওয়ার প্লে-তে টানা চার ওভার বল করে রান দেন মাত্র ৯। শুরুর দিকের এই চাপের কারণে কুমিল্লার ইনিংসটি ফুলেফেঁপে বড় হতে পারেনি। থেমে যায় ১৬০ রানে। এরমধ্যে নাটকীয়ভাবে জীবন ফিরে পাওয়া রাজাপাক্ষে একাই করেন ৯৬ রান। কুমিল্লার ছোট পাহাড় ডিঙাতে ঢাকাকে শেষ ওভার পর্যন্ত খেলতে হলেও কখনো মনে হয়নি তারা হারবে। ৫ উইকেট অক্ষত রেখেই ঢাকা পেয়ে যায় তাদের কাঙ্ক্ষিত জয়।

কুমিল্লার ১৬০ রান পাড়ি দিতে নামা ঢাকাকে আটকাতে দুদিক থেকে অফস্পিনারদের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক। বিপিএল অভিষেকের প্রথম ওভারেই এনামুল হক বিজয়কে লং অনে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ বানিয়ে উইকেটের দেখা পান অফ স্পিনার রবিউল ইসলাম। নিজের তৃতীয় ওভারেই পেতে পারতেন দ্বিতীয় উইকেটের দেখা। বিজয়ের আউট হওয়ার পর ঢাকার কোচ সালাহউদ্দিন সবাইকে অবাক করে দিয়ে ওয়ানডাউনে নামিয়ে দেন মেহেদী হাসানকে। রবির প্রথম বলে মেহেদীর সপাটে চালানো বোলার ব্যাক ড্রাইভ প্রায় জমে গিয়েছিল রবির হাতে। কিন্তু হাত ফঁসকে বেরিয়ে যায় বলটি। ‘ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস’- ক্রিকেটের এই চিরন্তন বাণীকে সত্য পরিণত করতে রবির করার ওই ওভারের পরের পাঁচ বলকেই সীমানা ছাড়া করেন মেহেদী হাসান। এর মধ্যে প্রথমটি মাটি ঘেঁষে গেলেও বাকি চারটি পাঠান হাওয়ায় ভাসিয়ে। একচার আর চার ছয়ে রবির ওই ওভার থেকে তুলে দেন ২৮ রান। এর আগে ৩২টি টি-টোয়েন্টি খেলেও ফিফটির দেখা না পাওয়া মেহেদী হাসান কুমিল্লার বোলারদের উপর ছড়ি ঘুরাচ্ছিলেন।

দীর্ঘ এক বছর পর চট্টগ্রামের মাটিতে তামিমের ব্যাট হাতে নামা। সর্বশেষ গত বিপিএলে তামিমের ব্যাটিং দেখার সুযোগ হয়েছিল চট্টগ্রামের দর্শকদের। অসুস্থতা থেকে ফিরে চট্টগ্রাম পর্বে বড় ইনিংস খেলতে না পারলেও ব্যাটে ছিল আত্মবিশ্বাসের ছোঁয়া। ছবি: আজীম অনন
দীর্ঘ এক বছর পর চট্টগ্রামের মাটিতে তামিমের ব্যাট হাতে নামা। সর্বশেষ গত বিপিএলে তামিমের ব্যাটিং দেখার সুযোগ হয়েছিল চট্টগ্রামের দর্শকদের। অসুস্থতা থেকে ফিরে চট্টগ্রাম পর্বে বড় ইনিংস খেলতে না পারলেও ব্যাটে ছিল আত্মবিশ্বাসের ছোঁয়া। ছবি: আজীম অনন

বাংলাদেশের হয়ে একটি টি-টোয়েন্টি খেলা মেহেদী হাসান যখন আল-আমিনের বলে মিস টাইমিং হয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেন তখন তার নামের পাশে জ্বলজ্বল করছিল ৫৯ রানের এক মনোমুগ্ধকর ইনিংস। মাত্র ২২ বলে বিপিএলের চতুর্থ দ্রুততম ফিফটি করা মেহেদী তার ২৯ বলের ইনিংসটি সাজান ২টি চার আর ৭টি ছয়ে। মেহেদী আউট হওয়ার পরের ওভারে (ইনিংসের নবম ওভার) কুমিল্লার মুজিবুর রহমানের জোড়া শিকারে ভালো মতেই খেলায় ফিরেছিল তারা। মুজিবের করা ওই ওভারের প্রথম চার বল থেকে কোন রান নিতে না পারা আসিফ আলী পঞ্চম বলে ব্যাটের নিচের কানায় লেগে হয়ে যান প্লেড অন। ওভারের শেষ বলে মুজিব ফেরান আরেক আলীকে। ঢাকার হয়ে আগের ম্যাচে ক্যামিও ইনিংস খেলা জাকির আলী কিছু বুঝে উঠার আগেই হয়ে যান এলবিডাব্লিউ। এক ওভারে দুজনকে হারালেও ঢাকার মনোবলে চির ধরেনি। উইকেটে তখনো একপ্রান্তে দেখেশুনে ধীরলয়ে খেলে যাচ্ছিলেন তামিম ইকবাল। ড্রেসিংরুমে আছেন শহীদ আফ্রিদি, শাদাব খানরা।

তামিম আর মুমিনুল, জাতীয় দলের দুই নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান ৩৪ রানের পার্টনারশিপ করে দলকে জয়ের পথেই রাখেন। সৌম্য সরকারের খানিকটা শর্ট পিছ বলটি আকাশে ভাসিয়ে মাঠের বাইরে পাঠাতে গিয়ে মালানের তালুবন্দি হয়ে নিজের ইনিংসের ইতি টানেন তামিম। জয় থেকে তখনো ৩৮ রান দূরে ঢাকা, হাতে ছিল ৫টি উইকেট আর ২৭টি বল। বাকি কাজটুকু অনায়াসে সেরে দেন মুমিনুল হক ও শহীদ আফ্রিদি। শেষপর্যন্ত মুমিনুল ২৮ (২৬ বলে) ও আফ্রিদি ২৬ (মাত্র ১৬ বলে) অপরাজিত থেকে দলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন।

কুমিল্লার করা ১৬০ রানের মধ্যে একাই ৯৬ রান করলেন রাজাপাকসে। যদিও ২০ রানের মাথায় আউট হয়ে সাজঘরে ফিরে গেলেও নো বলের কল্যাণে কুমিল্লার হাল ধরার সুযোগ পান তিনি। ছবি: আজীম অনন
কুমিল্লার করা ১৬০ রানের মধ্যে একাই ৯৬ রান করলেন রাজাপাকসে। ২০ রানের মাথায় আউট হয়ে সাজঘরে ফিরে গেলেও নো বলের কল্যাণে কুমিল্লার হাল ধরার সুযোগ পান তিনি। ছবি: আজীম অনন

এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে কুমিল্লা নিজেদের ভান্ডারে রান সঞ্চয় করে ১৬০। তাতে একজনের অপরাজিত ৯৬। এই একজন ভানুকা রাজাপাকসে। ওপেন করতে এসে ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত ব্যাট করে গেলেন কুমিল্লা ওয়ারির্য়সের এই শ্রীলঙ্কান। প্রায় একা হাতেই দলকে অনেক দুর পর্যন্ত টেনে নিয়ে যান ভানুকা রাজাপাকসে। ব্যক্তিগত ২০ রানের সময় ওয়াহাব রিয়াজের বলে আউট হয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরে গিয়েছিলেন রাজাপাকসে। কিন্তু পরে টিভি আম্পায়ার জানান-ওয়াহাব রিয়াজের সেই বলটা ছিল নো বল। তাই ড্রেসিংরুম থেকে ফিরিয়ে আনা হয় রাজাপাকসেকে। দলের রান ছিল তখন ৪.৩ ওভারে ৩৯। সেই রাজাপাকসে শেষ পর্যন্ত ব্যাট করে যান। করলেন ৬৫ বলে অপরাজিত ৯৬ রান। কুমিল্লার সংগ্রহ দাড়াল ১৬০ রানে। ৪ বাউন্ডারি ও ৭ ছক্কায় এই সেঞ্চুরি ছুঁইছুঁই ইনিংস খেলেন রাজাপাকসে। সেঞ্চুরির সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ ওভারে খেলা দুই বল থেকে ব্যাটে কোন রান নিতে পারেননি।

৫৭ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের ইনিংস সাজানোর দায়িত্বে রাজাপাকসের সঙ্গে যোগ দেন ইয়াসির আলী। পরের ১০.৩ ওভারে এই দুইয়ের জুটিতে রান উঠে হার না মানা ১০৩। আর তাতেই ঢাকাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো স্কোর তুলে ফেলল কুমিল্লা। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এই ম্যাচের উইকেট কিছুটা স্লো এবং স্পিন সহায়ক হয়ে পড়ে। অফস্পিনার মেহেদি হাসান বল হাতে বেশ সমস্যায় ফেলেন কুমিল্লার টপ অর্ডারকে। মেহেদির ২৪ বলের মধ্যে ১৮টিই ডটবল!

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!