তামিমের টানা সেঞ্চুরির দিনে লিটনের ব্যাটে রেকর্ডের ফুলঝুড়ি

উদ্বোধনী জুটিতে তামিম-লিটনের ২৯২ রান

ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোরের তালিকা করলে প্রথম দশজনের মধ্যে তামিম ইকবালের নাম আসে ছয়বার, যার মধ্যে সেরা দুটি স্কোর তামিমের নামে। যার মধ্যে এতদিন ধরে দেড়শ রানের ক্লাবে একাই ছিলেন তামিম ইকবাল। তাও তার একার ছিলো দুইটি দেড়শ রানের ইনিংস। যার সবশেষটি ছিলো আবার চলতি সিরিজেরই দ্বিতীয় ম্যাচে। নিজের ২০০৯ সালে করা ১৫৪ রানের রেকর্ড ভেঙে তামিম সিলেটে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে খেলেছিলেন ১৫৮ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। সে রেকর্ডটিকে দুই দিন মাত্র টিকতে দিলেন তামিমের সতীর্থ ওপেনার লিটন দাস। তামিম রেকর্ড গড়েছিলেন মঙ্গলবার। আর তিনদিনের মাথায় শুক্রবার সে রেকর্ড ভেঙে নতুন ইতিহাস গড়লেন লিটন দাস। সেটিও তামিম ইকবালকে অপরপ্রান্তে রেখেই।

বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে মাত্র ৪০.৫ ওভার ব্যাট করেই লিটন খেলেছেন ১৪৩ বলে ১৭৬ রানের ঝকঝকে এক ইনিংস। এই ব্যাটিংয়ে তিনি ভেঙেছেন যেমন তামিমের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড, তেমনি নতুন করে গড়েছেন এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছয়ের রেকর্ডটিও।লিটনের এই ইনিংসে ছিলো ১৬ চার ও ৮ ছয়ের মার। এর আগে বাংলাদেশের পক্ষে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছয়ের রেকর্ড ছিলো তামিমের। বছর দশেক আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৯৫ রানের ইনিংস খেলার পথে ৭টি ছক্কা মেরেছিলেন তামিম। সেই রেকর্ড ভেঙে শুক্রবার ৮টি ছক্কা মারলেন লিটন।

এছাড়া উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলা লিটন দাস অল্পের জন্য গড়তে পারেননি একটি বিশ্বরেকর্ড। আর মাত্র ৮ রান করলেই ওয়ানডে ক্রিকেটে উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি হতো লিটনের। ২০০৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৮৩ রান করেছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এটিই এখনও সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।

প্রিয় অধিনায়কের জন্য জয়ের মঞ্চ তৈরি করে দিলেন লিটন দাস ও তামিম ইকবাল। দুই ওপেনারের শতরানে জিম্বাবুয়েকে কঠিন চ্যালেঞ্জ দিয়েছে বাংলাদেশ। মাশরাফি বিন মর্তুজার অধিনায়কত্বের শেষ ম্যাচে রান পাহাড় গড়েছে স্বাগতিকরা। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। স্বাগতিক দল বৃষ্টির কারণে নির্ধারিত ৪৩ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে তুলে ৩২২ রান। তবে এই ম্যাচে জিততে বৃষ্টি আইনে সফরকারীদের চাই ৩৪২ রান। হারলেই হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় পড়বে জিম্বাবুয়ে।

মাশরাফির নেতৃত্বের বিদায়ের ম্যাচে প্রকৃতিও যেন বিষণ্ন। এক পশলা বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকার আগের ও পরের সময়টুকু ছিল শুধু লিটন দাস-তামিম ইকবালের। তাদের ব্যাটে দাপটের সঙ্গে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। রান উৎসবে ইতিহাসের অংশ হলেন দু’জনই। লিটনের পর সেঞ্চুরি পেয়েছেন তামিমও। দেশের ক্রিকেটে আন্তর্জাতিক ম্যাচে এবারই এক ম্যাচে সেঞ্চুরি পেলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার। একই ছন্দ ধরে রেখে খেললেন তামিম। আগের ম্যাচে পেয়েছিলেন শতরান। এবারও সেঞ্চুরির দেখা পেলেন এই ওপেনার। টানা দ্বিতীয় ও ওয়ানডেতে এটি বাঁহাতি ওপেনারের তের নম্বর সেঞ্চুরি। ৯৮ বলে তিন অঙ্কে পৌঁছান তামিম। তখন তার ব্যাটে ছিল চারটি ছক্কা ও পাঁচটি চার। দেশসেরা ওপেনার তামিম শেষ করেন ১০৯ বলে ১২৮ রানে।

বাংলাদেশের পক্ষে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস
১. লিটন দাস – ১৭৬ বনাম জিম্বাবুয়ে (২০২০)
২. তামিম ইকবাল – ১৫৮ বনাম জিম্বাবুয়ে (২০২০)
৩.. তামিম ইকবাল – ১৫৪ বনাম জিম্বাবুয়ে (২০০৯)
৪. মুশফিকুর রহীম – ১৪৪ বনাম শ্রীলঙ্কা (২০১৮)
৫. ইমরুল কায়েস – ১৪৪ বনাম জিম্বাবুয়ে (২০১৮)

ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের ওপেনিং জুটি
১. জন ক্যাম্পবেল-শাই হোপ (ও. ইন্ডিজ) : ৩৬৫ বনাম আয়ারল্যান্ড
২. ফখর জামাল-ইমাম-উল-হক (পাকিস্তান) : ৩০৪ বনাম জিম্বাবুয়ে
৩. তামিম ইকবাল-লিটন দাস (বাংলাদেশ) : ২৯২ বনাম জিম্বাবুয়ে
৪. সনাথ জয়াসুরিয়া-উপুল থারাঙ্গা (শ্রীলঙ্কা) : ২৮৬ বনাম ইংল্যান্ড
৫. ট্রাভিস হেড-ডেভিড ওয়ার্নার (অস্ট্রেলিয়া) : ২৮৪ বনাম পাকিস্তান

ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি
১. লিটন দাস-তামিম ইকবাল : ২৯২ রান বনাম জিম্বাবুয়ে (২০২০)
২. মাহমুদউল্লাহ-সাকিব আল হাসান : ২২৪ রান বনাম নিউজিল্যান্ড (২০১৭)
৩. ইমরুল কায়েস-সৌম্য সরকার : ২২০ রান বনাম জিম্বাবুয়ে (২০১৮)
৪. সাকিব আল হাসান-তামিম ইকবাল : ২০৭ রান বনাম ও. ইন্ডিজ (২০১৮)
৫. লিটন দাস-সাকিব আল হাসান : ১৮৯* বনাম ও. ইন্ডিজ (২০১৯)

বেরসিক বৃষ্টি আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় খেলা বন্ধ থাকায় ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমেছে ৭ ওভার। ম্যাচের দৈর্ঘ্য ৪৩ ওভার। গোটা ম্যাচেই পাত্তা পেলেন না জিম্বাবুয়ের বোলাররা। এর আগে তামিম ইকবাল-লিটন দাস গড়েন নতুন ইতিহাস। দু’জন মিলে ভাঙলেন প্রায় ২১ বছর আগের এক রেকর্ড। ওয়ানডেতে নিজেদের সর্বোচ্চ রানের উদ্বোধনী জুটির দেখা পেল বাংলাদেশ। আগের রেকর্ডও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। সেই ১৯৯৯ সালের ২৫ মার্চ ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে মেহরাব হোসেন ও শাহরিয়ার হোসেন উদ্বোধনী জুটিতে তুলেন ১৭০ রান।

এই জুটির রেকর্ড গড়ার ওভারেই লিটন তুলে নেন শতক সেঞ্চুরি। এই সিরিজে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ওপেনার তুলে নিয়েছেন তার দ্বিতীয় শতক। ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরির দেখা পেলেন লিটন। ১১৪ বলে তিন অঙ্কের ম্যাজিক্যাল স্কোরে পা রাখেন লিটন। এই ওপেনার সেঞ্চুরিতে পৌঁছতে হাঁকান ১৩ চার। এরপর তামিমের ব্যাট থেকেও এসেছে শতরান। ওয়ানডেতে এটি এই ওপেনারের ১৩ নম্বর ওয়ানডে সেঞ্চুরি। দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি শতক তারই। ৩০ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে পেলেন দ্বিতীয় শতরান। ৯৮ বলে পা রাখেন তিন অঙ্কের স্কোরে।

এই জুটিতে গড়া হলো ইতিহাস। ওয়ানডেতে দেশের সেরা জুটির রেকর্ড গড়লেন তামিম ও লিটন দাস। টপকে গেলেন সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহর ২২৪ রানের জুটিকে। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পঞ্চম উইকেটে রেকর্ড জুটি গড়েন সাকিব-মাহমুদউল্লাহ। তাদের পেছনে ফেলে শুক্রবার সিলেটে লিটন-তামিম করলেন ২৯২ রান। বিস্ময়কর এক জুটি!

সব মিলিয়ে নেতা মাশরাফিকে জয়ে বিদায় দিতে প্রস্তুত বাংলাদেশ দল। অধিনায়ক হিসেবে ৫০তম ওয়ানডে জয়ের সুবাস পেতে শুরু করলেন কিংবদন্তি মাশরাফি বিন মর্তুজা।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!