ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের বিকল্প ফটিকছড়ি-হেঁয়াকো সড়ক উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

হাটহাজারী থেকে ফটিকছড়ি, ফেলাগাজির দিঘী থেকে হেঁয়াকো সড়কের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে বঙ্গবভনে বসে ভার্চুয়ালী দেশের ১০০ মহাসড়ক উন্নয়ন শেষে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের এ দুটি সড়ক উদ্বোধন করেছেন।

এর মধ্যে হাটহাজারী-ফটিকছড়ি-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কের ৩২ দশমিক ৫ কিলোমিটার সড়ক। ২০১৯ সালে শুরু হওয়া মহাসড়কের উন্নয়ন কাজটি চলতি অর্থ বছরেই শেষ হয়।

সড়ক ও জনপদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, ইস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্টের (ইবিবিআইপি) আওতায় সড়কটির উন্নয়নকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ও র‌্যাব আরসি লিমিটেড এই উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ করেছে। প্রকল্পের অধীনে বিদ্যমান ১৮ ফুট প্রস্থের সড়কটি সম্প্রসারিত হয়ে ৩৪ ফুটে উন্নীত হচ্ছে।

হাটহাজারী বাস স্টেশন জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে নাজিরহাট-ফটিকছড়ি শেষ সীমান্তে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি সীমান্ত আর্মি ক্যাম্প পর্যন্ত ৩২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়কটি তিন লেনে উন্নীত করা হয়।

নির্মিত হয়েছে ৩০৮ মিটারের ৩৮টি আরসিসি কালভার্ট। মোট ৪টি প্যাকেজে এ কাজ সম্পন্ন হয়।

এদিকে উত্তর চট্টলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক ফটিকছড়ি-হেঁয়াকো মহাসড়ক ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রশস্থ করার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় ২০১৯ সালেই। যার নাম ছিল ফটিকছড়ি উপজেলার হাইদচকিয়া-হেঁয়াকো সড়ক প্রশস্থকরণ প্রকল্প। এই সড়ক আগে প্রশস্থ ছিল ১২ ফুট, এখন হবে ২৪ ফুট।

দৈর্ঘ্য হবে ২৬ দশমিক ৬৪ কিলোমিটার। ১০ দশমিক ২৫ মিটার প্রস্থ ১১টি ব্রীজ হয় এবং ৩২টি ছোট-বড় কালভার্ট নির্মিত হবে। তার মধ্যে ৪টি বড় ব্রীজ রয়েছে।

এগুলো হচ্ছে বালুখালী ব্রীজ ৭২ মিটার, নারায়ণহাট ব্রীজ ৪৪ মিটার, বারমাসিয়া ব্রীজ ৩৪ মিটার, নন্দীব্রীজ ২৫ মিটার। বাজার সমূহে দুই পাশের ড্রেন এবং সড়ক পাশের রক্ষাকবচ দেয়াল নির্মাণ করা হয়।

এছাড়া দেড় কিলোমিটার সড়কের বাঁক সোজা করা হবে। এক্ষেত্রে বৃন্দাবনহাট, কাজিরহাট, নারায়ণহাট বাইপাস। এ সড়কে ব্যয় হবে ২৫০ কোটি টাকা।

উত্তর চট্টলাবাসীকে আর চট্টগ্রাম শহর হয়ে ঢাকা বা অন্যান্য জেলায় যেতে হবে না। ফটিকছড়ির এ সড়ক দিয়ে হেঁয়াকো হয়ে করেরহাট থেকে বারইয়ারহাট কিংবা ছাগলনাইয়া-ফেনী হয়ে অতিদ্রুত যাওয়া যাবে।

এতে করে গড়ে ১৫০ কিলোমিটার দুরত্ব এবং তৎপরিমাণ গাড়ীভাড়া কমে যাবে। এছাড়া চিমুতাং গ্যাস ফিল্ড, এশিয়ার বৃহত্তম দাঁতমারা রাবার বাগান এবং ১৪টি চা বাগানে যাতায়াত অত্যন্ত সহজতর হবে। গড়ে উঠবে পর্যটন কেন্দ্রও। এ সড়কের কাজটি শেষ করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তাহের এন্ড ব্রাদার্স।

হাটহাজারি থেকে ফটিকছড়ি প্রকল্পের কাজ ৪টি প্যাকেজের কাজ শেষ করেন দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান র‍্যাব আরসি ও ম্যাক্স। এর মধ্যে প্যাকেজ-১ এর আওতায় হাটহাজারী থেকে সরকারহাট বাজার পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার সড়ক ও ৯টি কালভার্টের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৯১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।

প্যাকেজ-২ এর আওতায় সরকারহাট থেকে নাজিরহাট পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার সড়ক ও ১৩টি কালভার্টের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। প্যাকেজ-৩ এর আওতায় নাজিরহাট-বিবিরহাট পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার সড়ক ও ১১টি কালভার্টের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৭ দশমিক ৩৬ লাখ টাকা। প্যাকেজ-৪ এর আওতায় বিবিরহাট-আর্মি ক্যাম্প চেকপোস্ট নয়া বাজার পর্যন্ত ৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার সড়ক ও ৫টি কালভার্টের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা। সড়ক-বাঁধ প্রশস্ত করতে ব্যবহার হয় ৬ লাখ ৪৬ হাজার ৫০৫ দশমিক ৬ ঘনমিটার মাটি।

ফটিকছড়ি পৌরসভার মেয়র ইছমাইল হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘উত্তর চট্টগ্রামে হাটহাজারী-ফটিকছড়ি সড়কটি দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিল। বর্তমান সরকার সড়কটির উন্নয়ন করে। চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে যানজট হলে বিকল্প সড়ক হিসেবে হাটহাজারী-খাগড়াছড়ি হয়ে ঢাকা এবং একইভাবে কম সময়ের মধ্যে ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি-ফটিকছড়ি-হাটহাজারী হয়ে চট্টগ্রাম যাতায়াত করা সম্ভব ।’

নাজিরহাট পৌরসভার মেয়র সিরাজ-উদ-দৌল্লা বলেন, ‘এই সড়কের উন্নয়নের ফলে চট্টগ্রামের সঙ্গে ফটিকছড়ি-খাগড়াছড়ির যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, মানিকছড়ি এলাকায় কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। কৃষি পণ্য পরিবহনও বাজারজাতকরণ সহজ হবে।’

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান র‌্যাব আরসি লিমিটেডের প্রকল্প ম্যানেজার মনিরুজ্জামান বলেন, ‘চারটি প্যাকেজের মধ্যে তিনটি আমাদের প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন করছে। আমরা প্রকল্পের সিংহভাগ কাজ সম্পন্ন করেছি। কিন্তু করোনা ও লকডাউনের কারণে আমাদের তুলনামূলক বিল দিতে পারেনি সড়ক ও জনপদ বিভাগ। তাই আমরা এখন জরুরি অংশগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রকল্পের কাজ পরিচালনা করেছি।’

এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাহরিয়ার কামাল বলেন, ‘এ সড়কের উন্নয়ন হওয়ায় এটি ঢাকা-চট্টগ্রামের বিকল্প সড়ক হিসেবে ব্যবহার হবে।’

এএস/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!