ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল হবে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কাজ

১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

দেশে এ যাবৎকালের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প হতে যাচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল প্রকল্প। এখন পর্যন্ত এই ‘খেতাব’ রয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের হাতে। কিন্তু ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলের কাছে অচিরেই সেই ‘খেতাব’ হারাতে যাচ্ছে রূপপুর।

সরকারি হিসাবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মোট ব্যয় ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। অন্যদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। রেলওয়ের প্রস্তাবিত এই প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদিত হলে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই হবে এ যাবৎকালের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প।

শুরুতে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭৬ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১৩টি নদীতে ১৩টি সেতু বিশেষ উচ্চতায় নির্মাণ করতে গেলে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যাবে আরও ৪০ শতাংশ। সবমিলিয়ে মূল প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকায়।

ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনটি নির্মিত হবে স্থানীয় ১৩টি ছোট-বড় নদী ও খাল পেরিয়ে সরাসরি ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত। এই নদী ও খালের মধ্যে রয়েছে— টঙ্গী খাল, বালু নদী, শীতলক্ষ্যা, আড়িয়াল খাঁ, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা, ছোট ফেনী, মুহুরী, ফেনী, কর্ণফুলী, মাতামুহরী শাখা নদী ও পুরাতন মাতামুহরী শাখা নদী। এই নদী ও খালগুলোতে নির্মাণ করতে হবে রেলসেতু। সেতুগুলোর উচ্চতা ভার্টিকেল ২ দশমিক ১২ মিটার থেকে হরাইজন্টাল সর্বোচ্চ ৭৬ দশমিক ২২ মিটার হতে হবে। এই উচ্চতা বাড়াতে গিয়েই ব্যয়ও বেড়ে গেছে বহুগুণ।

এদিকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ থাকলেও নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে সেটাকে রূপান্তর করা হবে ডুয়েল গেজে। এর পাশাপাশি ফৌজদারহাট থেকে একটি কার্ভ বা কর্ডলাইন নিয়ে ষোলশহর রেলস্টেশনে যুক্ত করা হবে। অন্যদিকে ঢাকা থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত নির্মিত হবে একটি কর্ডলাইনও। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম হয়ে সরাসরি রেলপথ চলে যাবে কক্সবাজার পর্যন্ত।

ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে আসা ট্রেনগুলোর শেষ গন্তব্য যেহেতু চট্টগ্রাম রেলস্টেশন, সেজন্য সাইডিং লাইনে ট্রেন কক্সবাজারে যেতে সময়ক্ষেপণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ থেকে রেহাই পেতে নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে ফৌজদারহাট থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার কর্ডলাইন নির্মাণ করে ষোলশহর স্টেশনের সঙ্গে যুক্ত করার কথা ভাবছে রেল কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজও চালাচ্ছে রেলওয়ে।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ৯৯ দশমিক ৩ কিলোমিটার এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ দশমিক ৯৬ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে। সবমিলিয়ে প্রকল্পের আওতায় মোট ১২৭ দশমিক ৬৬ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইনকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর করা হবে— যা পরে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!