ঢাকায় নালিশের পর চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সম্মেলনে তালা, হঠাৎ উৎসবমুখর দলীয় কার্যালয়

ড্রয়িংরুমের রাজনীতি ফিরলো দলীয় কার্যালয়ে

নানামুখী বাধার মধ্যেও বড় ধরনের কোনো ঝামেলা ছাড়াই উৎসবমুখরভাবে শেষ হয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ ইউনিটের সম্মেলন। তবে ইউনিট আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষ করলেও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন শুরুর আগে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দুই ভাগে ভাগ হওয়া নগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের একসাথে বসানোর উদ্যোগ নিচ্ছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।

সম্মেলনের বিরোধিতা করা নেতাদের নালিশের মুখে ওয়ার্ড সম্মেলনের আগে সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে বসে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এর প্রেক্ষিতে একটি ওয়ার্ডের সম্মেলনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত ঘোষণা করা হলেও শেষ পর্যন্ত সেটিও বাতিল করেছে নগর আওয়ামী লীগ।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত নেতাদের সাথে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।

দলীয় কার্যালয়ে এসে ইউনিটের কর্মীরা তাদের বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধার কথা নেতাদের জানাচ্ছেন। সেগুলো শুনে দলীয় কার্যালয় থেকে  বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছেন নেতারা।
দলীয় কার্যালয়ে এসে ইউনিটের কর্মীরা তাদের বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধার কথা নেতাদের জানাচ্ছেন। সেগুলো শুনে দলীয় কার্যালয় থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছেন নেতারা।

এর মধ্যে নগরের বেশিরভাগ ইউনিটের সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে নগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের মোট ১২৯টি ইউনিট। এর মধ্যে ১০০ ইউনিটের সম্মেলন খুব উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। বাকিগুলোও খুব শীঘ্রই সম্পন্ন হবে। এরপরেই আমরা ওয়ার্ড সম্মেলন আর থানা সম্মেলনের কাজে হাত দেবো।’

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, ‘সম্মেলনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী সহ বেশ কয়েকজন নেতা ঢাকায় অভিযোগ করেছেন। এর ভিত্তিতে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সিনিয়র নেতাদের এই বিভাজন দূর করতে দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা একসাথে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর পরই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

তাদের এই অভিযোগের কারণে এর মধ্যে একটি ওয়ার্ডের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করলেও শেষ পর্যন্ত সেটি থেকে সরে আসতে হয়েছে জানিয়ে ওই নেতা বলেন, ‘১৫ নম্বর বাগমনিরাম ওয়ার্ডে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল ২৫ ডিসেম্বর। তবে শেষে কেন্দ্রের নির্দেশে সেটি বাতিল করা হয়। সবার সাথে বসে ওয়ার্ড সম্মেলনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

ওয়ার্ড সম্মেলনের বিষয়ে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ নেতা নঈম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘ইউনিটের সম্মেলন শেষে চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিমসহ সবাইকে নিয়ে বসে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ওয়ার্ডের ব্যাপারে। এখানে কোনো বিভাজনের কথা নয়। কিভাবে সম্মেলনকে আরও সফল করা যায় সেজন্য সবাই একসাথে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

তবে এবারের সম্মেলন প্রক্রিয়াকে ঘিরে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নতুন করে প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে নগর আওয়ামী লীগের প্রবীণ এই নেতা বলেন, ‘প্রায় ১০-১২ বছর ধরে তো সংগঠন স্থবির। তাছাড়া ইউনিট আওয়ামী লীগের সম্মেলন আগে ড্রয়িংরুমে হয়ে যেতো। সেটাকে এভাবে গঠনতন্ত্রের নির্দেশনা মোতাবেক একেবারেই সদস্য সংগ্রহ করে সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচন করে নেতৃত্ব নির্বাচন ভিন্ন একটা আবহ তৈরি করেছে। এর ফলে তরুণদের মধ্যে একটা নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা হয়েছে। এর মাধ্যমে রাজনীতি চাঙ্গা হবে, সংগঠনও শক্তিশালী হবে।’

একই মন্তব্য নগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমানের। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উৎসবমুখরভাবে সম্মেলনগুলো সম্পন্ন করেছি। কোথাও কোথাও সংকট ঝামেলা ছিল। তবে আমরা আলাপ আলোচনা করে বুঝিয়ে সুঝিয়ে সম্মেলন এগিয়ে নিতে পেরেছি। এর ফলে আমাদের মূল কাজটা কিন্তু শেষ পর্যায়ে। একেবারে তৃণমূলে সংগঠন গুছিয়ে নেওয়া গেছে।’

ড্রয়িংরুমের রাজনীতি ফিরলো দলীয় কার্যালয়ে
এদিকে ইউনিট সম্মেলনকে কেন্দ্র করে গত দুই মাস ধরে অনেকটাই ভিন্নরূপ দেখা যাচ্ছে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় শত শত নেতাকর্মী ভিড় জমাচ্ছেন দলীয় কার্যালয়ে। দলের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতারা সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে আসছেন। ইউনিট সম্মেলনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাও তাদের সাথে যোগ দিচ্ছেন। রাত ১০টা পর্যন্ত সেখানে ইউনিট সম্মেলনের কার্যক্রম তদারকি করছেন নেতারা। দলীয় কার্যালয়ে এসে ইউনিটের কর্মীরা তাদের বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধার কথা নেতাদের জানাচ্ছেন। সেগুলো শুনে দলীয় কার্যালয় থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছেন নেতারা।

এই চিত্রকে ‘নজিরবিহীন’ দাবি করে একসময় নগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা নঈম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘একসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতি ছিল দলীয় কার্যালয়কেন্দ্রিক। নেতারা দলীয় কার্যালয়ে নিয়মিত বসতেন। সেখান থেকে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নির্দেশনা দিতেন। মান্নান ভাই-মহিউদ্দিন ভাইয়ের কমিটি পর্যন্ত এই চর্চাটা বেশ ভালভাবেই ছিল। পরে বিভিন্ন কারণে সেই চিত্র পরিবর্তন হয়। এবারে যেভাবে সবকিছু দলীয় কার্যালয় থেকে হচ্ছে সেটা অনেক বেশি ইতিবাচক। মাঝখানে সবকিছুই নেতাদের ড্রয়িংরুমে চলে গেছিল। সেখান থেকে আবার রাজনীতি দলীয় কার্যালয়ে ফিরেছে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!