ঢাকার সংকেতে চট্টগ্রামের নির্বাচনী হাওয়ায় হঠাৎ বাঁকবদল, মাঠে চাঙ্গা ১০ ‘বিদ্রোহী’

দলের পরিচয়ে কাউন্সিলরে ভোট করা যাবে না— ইসির হুঁশিয়ারি

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ও বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে অনেক জল ঘোলা হওয়ার পর এবার ভিন্ন সুরে কথা বলছে আওয়ামী লীগ। এর পর হঠাৎ করেই কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়ন ইস্যুতে কঠোর অবস্থানে গেছে নির্বাচন কমিশনও।

নির্বাচনের শেষ পর্যায়ে এসে নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়নের বিধান নেই জানিয়ে প্রচার-প্রচারণায় দলীয় মনোনয়নের কথা ব্যবহার না করতে প্রার্থীদের সতর্ক করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে যেসব প্রার্থী নিজেদের পোস্টার ব্যানারে দলীয় মনোনয়নের কথা উল্লেখ করেছেন সেসব ব্যানার পোস্টার নামিয়ে ফেলতে প্রার্থীদের কড়া নির্দেশও দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে। আর এই বিষয় তদারকির জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদেরও নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

এর ফলে গত কয়েকদিনের ঘটনাক্রমে খানিকটা চুপসে যাওয়া ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের অবস্থান ফের চাঙ্গা হয়ে উঠছে। আগের মতই সরব প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে নিজেদের লড়াকু মনোভাবের কথাই বলছেন এতদিন আওয়ামী লীগের ভাষায় ‘বিদ্রোহী’ হিসেবে আলোচিত হয়ে আসা এসব প্রার্থী।

এর মধ্যেই নির্বাচনের শেষ পর্যায়ে এসে হুঁশে ফিরলেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা। কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়নের সুযোগ নেই জানিয়ে দলীয় মনোনয়নের কথা উল্লেখ করে লাগানো পোস্টার ব্যানার সরিয়ে নিতে প্রার্থীদের নির্দেশ দেয় তারা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়নের কথা বলে কারও ব্যানার-পোস্টার লাগানোর সুযোগ নেই। কেউ এটা করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।’

তবে এর আগে কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়ন ও বিদ্রোহী প্রার্থী ইস্যু ঘিরে অনেক জল ঘোলা হয়ে গেছে। ঝরে গেছে দুটি প্রাণ। তবে নির্বাচন কমিশনের এমন অবস্থানের পর অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে গেছে নির্বাচনী প্রেক্ষাপট।

নির্বাচনের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ড থেকে ‘মিষ্টি কুমড়া’ প্রতীক নিয়ে কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়া হাসান মুরাদ বিপ্লব চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই বলছিলাম কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়নের সুযোগ নেই। দেরিতে হলেও নির্বাচন কমিশন একই কথা বলছে। আমি নির্বাচন করছি। আর মেয়র পদে দলের প্রার্থীর জন্যও আমরা কাজ করছি।’

প্রসঙ্গত এবারই প্রথম চসিক নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে ‘দলীয় মনোনয়ন’ দেয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩টি ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলররা দলীয় মনোনয়ন পাননি। সেখানে শুধু একজন বিদ্রোহী প্রার্থী ১৩নং পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন হিরণ তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বাকি ১২ জন বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচন করছেন। এর মধ্যে একজন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অন্য একজন ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এরশাদ উল্ল্যাহ নির্বাচন থেকে ‘সরে দাঁড়ান’।

বাকি ১০ জন নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থিতার বিষয়ে অনড় রয়েছেন। তারা হলেন ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলীওয়ার্ডের তৌফিক আহমেদ চৌধুরী, ২ নম্বর জালালাবাদে সাহেদ ইকবাল বাবু, ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলীতে জহুরুল আলম জসীম, ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলীতে মোরশেদ আক্তার চৌধুরী, ১২ নম্বর সরাইপাড়া ওয়ার্ডে সাবের আহমেদ, ১৪ নম্বর লালখান বাজারে এফ কবির মানিক, ২৭ নম্বর দক্ষিণ আগ্রাবাদে এইচএম সোহেল, ২৮ নম্বর পাঠানটুলীতে আব্দুল কাদের, ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের তারেক সোলায়মান সেলিম এবং ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গীবাজারে হাসান মুরাদ বিপ্লব।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!