ঢাকার ছাত্রদল চট্টগ্রামের কান্না শুনে ফিরে গেল, অপেক্ষা লন্ডনের

চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের প্রতিনিধি সভায় নগরের পদ প্রত্যাশী এক নেতা পদে থাকা নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘আমাদের দিয়ে আপনারা নেতা। কিন্তু চেয়ার পেয়ে আমাদের ভুলে গেছেন, হাওয়ায় উড়ছেন। আমরা এলাকায় থাকতে পারি না, ঘরে ঘুমোতে পারি না। সবাই কমপক্ষে দুই ডজন মামলার আসামি। কিন্তু আমাদের পদ কী? আপনারা আমাদের পদপদবির পরিচয় দিতে পারেননি। আমরা ক্ষমা করলেও কষ্টের সময়গুলোতে রূহের অভিশাপে আপনাদের জীবনও এলোমেলো হয়ে যাবে। কেউ শান্তি পাবেন না।’

প্রতিনিধি সভায় উপস্থিত থাকা এক নেতা জানান, এমন বক্তব্য শুনে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। নগর ছাত্রদলের কেউ নীরবে কেঁদেছেন, কেউ দাঁড়িয়ে ব্যর্থতা স্বীকার করে ক্ষমাও চেয়েছেন।

ছাত্রদল নেতারা জানান, কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে পেয়ে প্রতিটি শাখার পদে থাকা নেতাদের ব্যর্থতা নিয়ে মন উজাড় করে ক্ষোভ ঝেড়েছেন ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। যাদের পদ-পদবির কোনও পরিচয় দিতে পারেনি কমিটিগুলোতে থাকা নেতারা। কমিটি গঠনের এই প্রক্রিয়ায় ক্ষোভ ঝেড়ে অনেকটা নির্ভার ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।

উল্লেখ্য, চার সদস্যের প্রতিনিধি দল দফায় দফায় চট্টগ্রাম বিভিন্ন ইউনিটের দায়িত্বে থাকা নেতাদের সাথে বৈঠক করে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি)। ২৮ জানুয়ারি নগর ছাত্রদলের প্রতিনিধি সভা শেষে দক্ষিণ জেলা নেতাদের সাথে বসার পরপরই কেন্দ্রীয় কমিটির দুই নেতাসহ পুলিশ ৫ জনকে আটক করে। এর আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদলের প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় করে কেন্দ্রীয় টিম।

নগর ছাত্রদলের প্রতিনিধি সভার আগে কেন্দ্রীয় সংসদের সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণও যোগ দেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সাথে। কারণ নগর ছাত্রদলের অতীত খুব একটা সুখের নয়। এবারই ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটলো, কোন সংঘর্ষ ছাড়াই ১০৩ জন ছাত্রদল নেতা বক্তব্য রেখে প্রতিনিধি সভা শেষ করেছেন। এর আগের রাতে উত্তর জেলা ছাত্রদলের সাথে মতবিনিময় শেষে শাখা সভাপতি জাহেদুল আফসার জুয়েল আক্রান্ত হন।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, আমরা চট্টগ্রাম ছাত্রদলকে ঢেলে সাজাতে জননেতা তারেক রহমানের নির্দেশে সবার সাথে বসেছি। সবার কথা শুনেছি। এই আলোকে আমরা প্রতিবেদন জমা দেবো। লন্ডন থেকে তার নির্দেশনা পেলে কেন্দ্রীয় সংসদের নেতৃবৃন্দ বসে সিদ্ধান্ত নেবো।

ছাত্রদলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ সাব্বির জানান, পিনপতন নিরবতায় নগর ছাত্রদলের প্রতিনিধি সভা আমরা শেষ করেছি। ১০৩ জন নেতাকর্মী বক্তব্য রেখেছেন। আমরা তাদের বক্তব্য দলের সাংগঠনিক অভিভাবক জননেতা তারেক রহমানের কাছে জমা দেবো। তার নির্দেশনার আলোকে সিদ্ধান্ত হবে।

২০ ডিসেম্বর ৬০ সদস্যের ছাত্রদলের আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে বিবাহিত এবং ২০০০ সালের আগে এসএসসি পাস করা কোনও নেতা পদ পাননি। নগর কমিটির মতবিনিময় সভায় ২০০৫ সালের আগে এসএসসি উত্তীর্ণদের কমিটিতে না রাখার বিষয়ে দাবি উঠে। আবার ২০০০ সাল থেকে ২০০৪ সালে যারা এসএসসি পাস করেছেন তারা চাইছেন এক থেকে তিন মাসের জন্য আহবায়ক কমিটি গঠন করে দলের জন্য তাদের ত্যাগের বিনিময়ে একটা সম্মানজনক পদের পরিচয় নিয়ে ছাত্ররাজনীতি শেষ করতে।

এ বিষয়ে ছাত্রদল নেতা ফখরুল ইসলাম শাহিন বলেন, নগর ছাত্রদলের অবস্থা ‘চুনে গাল পোড়া মানুষ, দই দেখলেও ভয়’ পাওয়ার মতো। ১১ জনের কমিটিতেই যুগ পার। এই আবদার রাখতে গিয়ে তিন মাস না আবার যুগে গড়ায়। তাই যা হবে ফ্রেশ হবে, এই দাবি আমাদের।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে গাজী সিরাজউল্লাহ ও বেলায়েত হোসেন বুলুকে সাধারণ সম্পাদক করে ১১ সদস্যের চট্টগ্রাম নগর কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক জালাল উদ্দিন সোহেল সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। বাকি ১০ জনের একজন সহ-সভাপতি জসিম উদ্দিন ছাড়া কেউ নেই ছাত্রদলে। অন্যদের কেউ বিএনপি, কেউ যুবদল, কেউ স্বেচ্ছাসেবক দলের নগরের নেতৃত্বে আছেন। যে জসিম ছাত্রদলে আছেন তিনি এসএসসি পাস করেছেন ১৯৯৪ সালে! অন্য দশজনের মতো তিনিও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঘরসংসার করছেন।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ও দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জাহেদুল আফসার জুয়েল ও মনিরুল আলম জনি এবং শহীদুল আলম ও মোহাম্মদ মহসিনের এসএসসি ২০০০ সালের পর হলেও চারজনই বিবাহিত।

ছাত্রদল নেতারা বলছেন, ২০০০ সালের এসএসসি শর্তটি ঠিক রাখলেও চট্টগ্রামের নেতাদের ক্ষেত্রে বিয়ের বিষয়টি হয়েতো ছাড় দেওয়া হতে পারে। আবার যদি ২০০৫ সালের এসএসসি শর্তটি কড়াকড়িভাবে পালন করা হয় সেক্ষেত্রে অনেক হিসেবে নিকেষ নতুনভাবে করতে হবে। সর্বোপরি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে ছাত্রদল। চট্টগ্রাম ছাত্রদলের ইউনিটগুলোতে পূর্ণাঙ্গ কমিটিও হতে পারে। আবার পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি কিংবা সুপার ফাইভ টু সুপার ইলাভেন দিয়েও কমিটি হতে পারে।

এফএম/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!