‘ঢলে ঘর ডুবি গেইয়্যগই যারারে ভোট দিইয়্যি তারা কেঅ চাইত ন-আইয়্যে’

‘ঢলে ঘর ডুবি গেইয়্যগই যারারে ভোট দিইয়্যি তারা কেঅ চাইত ন-আইয়্যে’ 1মুকুল কান্তি দাশ,চকরিয়া: দিলরুবা খাতুন কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ‘ঢলে ঘর ডুবি গেইয়্যগই। পাঁচদিন ধরি রাস্তার উঅর। দুইদিন উয়াস থাক্কি । ঢলে ঘর পরিগেইয়্যই, যারারে ভোট দিইয়্যি তারা কেঅ চাইত ন-আইয়্যে (অর্থাৎ- ঢলের পানিতে ঘর ভেঙ্গে গেছে, পাঁচদিন ধরে সড়কের উপর পলিথিনের তাঁবু ঘেরে আছি, দুইদিন ধরে অনাহারে, যাদেরকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছি তাদের কোন খবর নেই) তার মতো একই অভিমত সড়কে ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টানে আশ্রয় নেয়া অপরাপর পরিবারগুলোরও। উপজেলার কয়েক’শ বসতঘর মাটির সাথে মিশে গেছে। ভেসে গেছে আরো কয়েক’শ ।
বার্ধক্য বয়সের মরিয়ম বেগম। স্বামী-সন্তান নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন চকরিয়া এবিসি সড়কের পার্শ্বে টাঙ্গানো পলিথিনে। পাঁচদিন ধরে অবস্থান করছেন এখানে। দুই দিন উপোষ থাকার পর আত্মীয়দের দেয়া চাল-ডাল একবাটিতে রান্না করে খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
চকরিয়ার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সরজমিন ঘুরে দেখা মেলে এ দৃশ্যের । মোতাহেরার মতো কয়েকশত পরিবারের আশ্রয় এখন সড়কের উপর পলিথিনে । শুধুমাত্র মানুষ নয় ,সাথে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগীও রয়েছে ।
চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জাফর আলম ইউনিয়ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের উদ্বৃতি দিয়ে জানান, পাঁচদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে চকরিয়া-পেকুয়ার ঘর-বাড়িসহ রাস্তাঘাট। বানবাসি মানুষ খুব কষ্টে আছেন।সরকারীভাবে ও বেসরকারী উদ্যোগে যে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে তা খুবই অপ্রতুল।
টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ঠ বন্যায় চকরিয়া ও পেকুয়ার ২৫টি ইউনিয়ন ছাড়াও ১টি পৌরসভার সব ক’টি ওয়ার্ড প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানি কমছে অতি ধীরে। তাই দুর্ভোগও অত্যাধিক।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চকরিয়ার সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, লক্ষ্যারচর, বরইতলী, হারবাং, ডুলাহাজারা, ফাঁসিয়াখালী, চিরিংগা, খুটাখালী ও পৌরসভা থেকে পানি অনেকাংশে নেমে গেছে ।
এ উপজেলার সাহারবিল, পূর্ব-বড়ভেওলা , বিএমচর, কোণাখালী, পশ্চিম-বড়ভেওলা, ঢেমুশিয়া, পেকুয়ার শিলখালী, বারবাকিয়া ও টৈটং-এ এখনও সিংহভাগ ঘরে পানি রয়েছে । যেখানেই পানি কমছে সেখানেই ফুটে উঠছে ঢলের তোড়ে তছনছ হওয়ার দৃশ্য। ঘর-বাড়ির পাশাপাশি রাস্তাঘাট ভেঙ্গে জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
এদিকে বন্যা দূর্গত এলাকায় সরকারের পাশাপাশি চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো.ইলিয়াছ, জাফর আলমের নেতৃত্বে উপজেলা আওয়ামীলীগ, পৌরসভার মেয়র মো.আলমগীর চৌধুরীর নেতৃত্বে পৌর প্রশাসন, জাহেদুল ইসলাম লিটুর নেতৃত্বে পৌর আওয়ামীলীগ ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী এবং বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি শুকনো খাবার, চাল-ঢাল, খিচুড়ি বিতরণ করছেন । কিন্তু বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থরা দাবী করেছেন ত্রাণ পর্যাপ্ত নয়। কেউ কেউ পেলেও অনেকেই পায়নি। তারা পূণর্বাসন, ক্ষতিগ্রস্থ বেঁড়িবাঁধ নির্মাণসহ বিধ্বস্ত ঘর মেরামতে সাহায্য দাবী করেছেন ।
চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলা প্রশাসন জানান, দুই উপজেলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার পর মাঠ পর্যায়ে হিসাব করেই জানা যাবে ক্ষতির পরিমাণ। ঘর হারানো পরিবার ও ভেঙ্গে যাওয়া সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে যোগাযোগ সচল করা অগ্রধিকার দেয়া হবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!