ড. ইউনূসকে ৬৯ লাখ টাকা জরিমানা

ড. ইউনূসকে ৬৯ লাখ টাকা জরিমানা 1প্রতিদিন ডেস্ক :সময়মত কর পরিশোধ না করায় নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ৬৯ লাখ ২৬ হাজার ২৫৬ টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এছাড়াও বিদেশে পাঠানো তার অর্থের সন্ধানে নেমেছে এনবিআর। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে এনবিআরের শীর্ষ এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আয়কর রেকর্ড পরিষ্কার নয়। তার ঘোষিত আয়ের পরিমাণ, উৎস, পরিশোধিত কর, দান প্রদানসহ ইত্যাদি বিষয়ে অস্বচ্ছতা রয়েছে। বিগত এক দশকে তিনি যে পরিমাণ আয়ের ওপর কর দিয়েছেন এবং করমুক্ত আয়ের হিসাব দিয়েছেন, তার চেয়ে বেশি সম্পদ রয়েছে তার।

এনবিআরের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অনুমোদন ছাড়া বিদেশে তহবিল হস্তান্তরেরও অভিযোগ রয়েছে। এই বিষয়ে খতিয়ে দেখছে এনবিআরের কর্মকর্তারা। এছাড়া ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আরও কর ফাঁকির তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

জানা গেছে, দানকর আইন ১৯৯০ এর ১০ ধারা অনুযায়ী তার উপরোক্ত দানের বিপরীতে সর্বমোট ১৫ কোটি ৩৯ লাখ ১৬ হাজার ৮০০ টাকা কর ধার্য করে এনবিআর। দাবিকৃত এই দানকর তিনি যথা সময়ে পরিশোধ না করায় আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ৩৭ ধারা অনুযায়ী তার ওপর ৬৯ লাখ ২৬ হাজার ২৫৬ টাকা জরিমানা করেছে এনবিআর।

জানা গেছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০১১-১২ হতে ২০১৩-১৪ করবর্ষে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট, ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্ট ও ইউনূস সেন্টার মোট ৭৭ কোটি ৩৬ লাখ ৬৯ হাজার টাকা দান গ্রহণ করেছে।

মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি)’র তথ্য অনুযায়ি, গ্রামীণ আমেরিকা (যে সংস্থাটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন ড. ইউনূস) ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে এক লাখ থেকে আড়াই লাখ ডলার অনুদান দিয়েছে। গ্রামীণ রিসার্চ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান (এটিরও চেয়ারম্যান ড. ইউনূস) থেকেও ২৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার ডলার অনুদান দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে এনবিআরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট, ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্ট ও ইউনূস সেন্টারের ১৯টি প্রতিষ্ঠান থেকে বিদেশে তহবিল স্থানান্তরের বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।

এর আগে ড. মুহাম্মদ ইউনূস, গ্রামীণ ব্যাংক ও গ্রামীণ সেন্টারের দান গ্রহণের তিনটি প্রতিষ্ঠান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট, ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্ট ও ইউনূস সেন্টারের ব্যাংক হিসাব তলব করে চিঠি পাঠিয়েছিল এনবিআর।

জানা গেছে, গ্রামীণ আমেরিকা নামে প্রতিষ্ঠানটি ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। গ্রামীণ আমেরিকার শেয়ার বা বিনিয়োগ তার আয়কর নথিতে প্রর্দশন করেননি। এছাড়া কারিগরি সহায়তা ও উপার্জনক্ষম কর্মকাণ্ডের মধ্যে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য দূরীকরণ,ইউএসএআইডি, বিশ্বব্যাংক, নেদারল্যান্ড, গ্রামীণ হেলথ প্রোগ্রামে ৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকার তহবিল নিয়ে গ্রামীণ ট্রাস্ট ১৯৯৬-৯৭ করবর্ষে কার্যক্রম শুরু করে। গ্রামীণ ট্রাস্ট কার্যক্রম শুরুর পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটি ২০০৯-১০, ২০১০-১১ করবর্ষে যথাক্রমে ৫ কোটি ৬৮ লাখ ও ১৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা অনুদান নিয়েছে। দানকৃত অর্থ আয়কর বিবরণী ও অডিট রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৬-৯৭ হতে ২০১৫-১৬ করবর্ষ মেয়াদে এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকাসহ মোট ৩৮টি দেশে সর্বমোট ৪৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করেছে।

জানা গেছে, ২০১৫-১৬ করবর্ষে ওই ঋণের স্থিতি ছিল ৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। আলোচ্য ঋণের টাকা, বিদেশে ঋণ প্রেরণের পদ্ধতি এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের অনুমতি সংক্রান্ত কোনও প্রমাণ আয়কর নথিতে উল্লেখ নেই বলেও জানা গেছে। ইতোমধ্যে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ড. ইউনূসের বিষয়ে কথা বলেছেন। এছাড়া অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতও অভিযোগ করে বলেছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস অবৈধভাবে কর সুবিধা নিয়েছেন। তিনি গ্রামীণের মতো যত প্রতিষ্ঠান খুলেছেন, তার অনুকূলে অবৈধভাবে কর সুবিধা নিয়েছেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!