ডেটলাইন ১০ ডিসেম্বর/ মেয়র নির্বাচনের আগে নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন নয়!

আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সকল মেয়াদোত্তীর্ণ ওয়ার্ড, থানা ও মহানগর কমিটির সম্মেলন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় থেকে। কিন্তু আগে থেকে স্থগিত থাকা চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সকল ইউনিট সম্মেলনের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত আসেনি এখনও। আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্মেলন হবে নাকি স্থগিতই থাকবে এই সিদ্ধান্ত জানার জন্য এখন অপেক্ষা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার।

আগামী বছরের মার্চে অনুষ্ঠেয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ওয়ার্ড, থানা ও নগর কমিটির সম্মেলনকে নিয়ে কৌশলে এগোতে চায় দলের শীর্ষ কমান্ড। তাই ধারণা করা হচ্ছে, সারা দেশে অন্যান্য ইউনিটের সম্মেলন ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে হলেও চট্টগ্রাম মহানগরের সব পর্যায়ের সম্মেলন হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। যেটি হতে পারে আগামী বছরের মার্চে অনুষ্ঠেয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরই। এমন চাওয়া কিন্তু শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল অনুসারীদেরও।

তবে নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব বলছেন, তারা এখনও অফিসিয়াল কিছু না জানলেও বিষয়টি নিয়ে দলীয় সভানেত্রীর সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন। সভানেত্রীর সিদ্ধান্ত যেভাবে আসবে তা বাস্তবায়নে প্রস্তুত রয়েছে নগর আওয়ামী লীগ।

এর আগে ২ সেপ্টেম্বর থেকে ধারাবাহিকভাবে ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড ও প্রতিটি ইউনিটের মেয়াদোত্তীর্ণ ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও কোনও এক অদৃশ্য অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ওয়ার্ড ও ইউনিট আওয়ামী লীগের সম্মেলন স্থগিত রাখা হয়। অথচ নগর আওয়ামী লীগের অনেক ওয়ার্ড ও ইউনিট কমিটির মেয়াদ অন্তত ২০ থেকে ২৫ বছর পেরিয়ে গেছে।

তবে দলীয় সূত্র জানায়, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন করা নিয়ে কেন্দ্রে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ যায় কেন্দ্রে। চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ বিভক্ত দুই ধারার মধ্যে একটির নেতৃত্ব আছেন সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। অন্যটির নেতৃত্বে আছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তবে তাদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্র সম্মেলন স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়। এনিয়ে দলীয়ভাবে আনুষ্ঠানিক কোনও বক্তব্য না আসলেও শুধু দলীয় সভানত্রেীর নির্দেশেই সম্মেলন স্থগিত করার কথা বলা হয়েছিল।

গত শনিবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় মেয়াদোত্তীর্ণ সব কমিটির সম্মেলন আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে দুই দিন পরও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও নির্দেশনা পাননি বলে জানিয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘নগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তৃণমূল পর্যায়ে সম্মেলন করার যে উদ্যোগ নিয়েছিল, তা কেন্দ্রের নির্দেশে আপাতত স্থগিত রয়েছে। এখন ১০ ডিসেম্বরের আগে যে সম্মেলন করার দেশব্যাপী নির্দেশনা রয়েছে, সেটি আমাদের কাছে এখনও আসেনি। কেন্দ্র থেকে যেভাবে সিদ্ধান্ত আসবে আমরা তা পালন করতে প্রস্তুত রয়েছি।’

তাহলে কি ডিসেম্বরের আগেই নগর আওয়ামী লীগের ইউনিট, ওয়ার্ড, থানা সম্মেলন হচ্ছে না—এমন প্রশ্নের উত্তরে আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘সেটা আমার পক্ষে বলা সো টাফ। আমরা সব সময় প্রস্তুত। বিশেষ করে আমি ব্যক্তিগতভাবে সম্মেলন করতে প্রস্তুত আছি। তৃণমূলের চাওয়া অনুযায়ী অমিও চাই সম্মেলন হোক। কিন্তু ডিসেম্বরের মধ্যে সম্মেলন হবে কি না তা নেত্রীর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। তাই নেত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেভাবেই হবে।’

নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি খোরশেদুল আলম সুজন বলেন, ‘সারা দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ প্রত্যেক ইউনিটের সম্মেলন ১০ ডিসেম্বরে হলেও সম্ভবত ঢাকা সিটির উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম মহানগরের সম্মেলন সিটি নির্বাচনের আগে হবে না। আমি এ পর্যন্ত চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই নেতার সঙ্গে কথা বলেছি তারা দুজনই জানিয়েছেন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগেই চট্টগ্রাম মহানগরের বিভিন্ন ইউনিটের সম্মেলন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এরপরও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে নেত্রীর কাছ থেকে। তাই সেই সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি আমরা।’

তবে সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘সুজন ভাই তথ্য কোত্থেকে জেনেছেন আমি জানি না। তবে যদি এরকমও সিদ্ধান্ত হয় সেটিতো সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমি জানব। কিন্তু সম্মেলনের বিষয়ে যেমন কোনও সিদ্ধান্ত জানিনা তেমনি এই ধরনের কোনও সিদ্ধান্তের খবরও জানি না।’

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যাবতীয় সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার চূড়ান্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ ও সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীমকে। তারাই দলীয় সভানেত্রীর সঙ্গে আলাপ করে নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কমিটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।

আ জ ম নাছির উদ্দীননের সঙ্গে প্রয়াত মহিউদ্দীন চৌধুরী যে বিরোধ ছিল, তা বর্তমানে এসে মহিউদ্দীন পুত্র নওফেলের সময়েও চলমান রয়েছে। সেই বিরোধের ধারাবাহিকতায় বিশেষ করে ওয়ার্ড সম্মেলনকে কেন্দ্র করে তা স্পষ্ট হয় আরও। সম্মেলন স্থগিত রাখার পেছনে মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীদের ভূমিকা ছিল বলে ধারণা রয়েছে নাছির অনুসারী অনেক নেতাকর্মীর। আবার নওফেল অনুসারীদের ধারণা, পকেট কমিটির মাধ্যমেই ওয়ার্ড কমিটি গঠনের পর নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করতে চান নাছির। তাই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে মহিবুল হাসান নওফেলের অনুসারীরা সম্মেলন করার পক্ষপাতী নন বলে জানা গেছে।

জান যায়, প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও কাজী ইনামুল হক দানুর নেতৃত্বাধীন কমিটির মেয়াদকালীন যে ১৮টি ওয়ার্ডের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি, সেই সব ওয়ার্ডের সম্মেলন আগে সম্পন্ন করারও চিন্তাভাবনা ছিল মাহতাব ও নাছিরের নেতৃত্বাধীন কমিটির। তারপর পর্যায়ক্রমে মেয়াদোত্তীর্ণ সব কমিটির সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। এদিকে সম্মেলনের দিনক্ষণ ঘোষণার পর ৪৩টি ওয়ার্ডের পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের মাঝে বেশ উচ্ছ্বাসও দেখা দিয়েছিল। বিভিন্ন সভা সমাবেশ নেতাদের উপস্থিতি বেশ লক্ষ্যণীয় হয়ে ওঠে।

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!